খাদ্য সংকটের কবলে বিশ্ব, সতর্কবার্তা জাতিসংঘের

খাদ্য সংকটের কবলে বিশ্ব, সতর্কবার্তা জাতিসংঘের

আন্তর্জাতিক টুডে


করোনাভাইরাস মহামারী বিশ্বকে দাঁড় করিয়েছে নতুন এক দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে। ইয়েমেন, দক্ষিণ সুদান, নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে দীর্ঘদিন ধরে চলমান খাদ্য সংকট এই মহামারীতে আরও প্রকট হয়েছে। নাজুক হয়ে পড়েছে ওইসব অঞ্চলের খাদ্য নিরাপত্তা। শিগগিরই সেখানে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা জাতিসংঘের।

জাতিসংঘের মানবকল্যাণবিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা মার্ক লোকক এক চিঠিতে এই সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছেন বলে জানিয়েছে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস।

নিরাপত্তা পরিষদে লেখা লোককের ওই চিঠি জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়নি। সেই চিঠিরই একটি অনুলিপি পেয়েছে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে লেখা ওই চিঠিতে লোকক বলেছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিধ্বস্ত অর্থনীতি এবং জনস্বাস্থ্যের চরম সংকটের কারণে ওইসব অঞ্চল দুর্ভিক্ষ শুরু হওয়ার তীব্র ঝুঁকিতে পড়েছে। কভিড-১৯ মহামারী ওইসব সংকটের তীব্রতা বাড়িয়ে দিয়েছে। সেখানকার লাখ লাখ নারী, পুরুষ ও শিশুর জীবন বিপন্ন করে তুলেছে।

গত এপ্রিলে ‘ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম’-এর নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বিইসলিও একই কথা বলেছিলেন। সে সময় তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেছিলেন, বিশ্ব যখন করোনাভাইরাস মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে তখন আমরা আরও একটি মহামারীর দ্বারপ্রান্তে আছি, সেটা হলো ক্ষুধা মহামারী।
মার্ক লোকক তার চিঠিতে বলেছেন, করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে জরুরি ত্রাণ তহবিলে অর্থ সংকট দেখা দিয়েছে।

এছাড়া আরও নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে বিশ্বের ওই অংশ যেখানে সবচেয়ে দরিদ্র মানুষের বাস সেখানে দুর্ভিক্ষ শুরু হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গেছে।

উল্লিখিত দেশগুলোর খাদ্য সংকটের বিষয়ে লোকক আলাদা আলাদা ব্যাখা দিয়েছেন। তিনি খাদ্য সংকট কী পর্যায়ে রয়েছে তা পর্যবেক্ষণের জন্য আইপিসি (ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ক্লাসিফিকেশন) স্কেলের বরাত দিয়েছেন।
আইপিসি স্কেলের ‘ফেজ ৩’-এর অর্থ সংকট, ‘ফেজ ৪’-এর অর্থ জরুরি অবস্থা এবং সবচেয়ে খারাপ ‘ফেজ ৫’-এর অর্থ দুর্ভিক্ষ। বাসিন্দাদের মধ্যে অনাহার, মৃত্যু, চরম দারিদ্র্য এবং মারাত্মক অপুষ্টির বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে এই পর্যায় নির্ধারণ করা হয়।

ইয়েমেনের ক্ষেত্রে তিনি বলেছেন, দুই বছর আগে ইয়েমেনে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল, যেটাকে প্রতিহত করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে ধীরে ধীরে দুর্ভিক্ষ ফিরে আসার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। তার ভাষ্য, আরব বিশ্বের সবচেয়ে গরিব দেশ ইয়েমেন। পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে সেখানে গৃহযুদ্ধ চলছে। ইয়েমেন এখন ‘ফেজ ৪’-এ আছে বলে জানান লোকক। দুর্ভিক্ষ থেকে যা মাত্র এক পা দূরে।

যুদ্ধবিধ্বস্ত আরেক দেশ ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলের প্রায় ২ কোটি ১০ লাখ মানুষ ‘খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সংকটময় বা চরম সংকটময় অবস্থায়’ আছে বলে জানান লোকক। এ ছাড়া নাইজেরিয়ার ১ কোটি বাসিন্দার প্রতি পাঁচজনের চারজনেরই মানবিক সহায়তা এবং সুরক্ষা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেছেন লোকক।

দক্ষিণ সুদানে প্রায় সাত বছর ধরে গৃহযুদ্ধ চলছে। এই দেশটির বিষয়ে লোকক বলেন, ‘দুই বছর আগে দক্ষিণ সুদানে দুর্ভিক্ষের হুমকি কিছুটা প্রতিহত করা গেলেও দেশটির কিছু কিছু এলাকায় আবারও পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হচ্ছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *