গ্রাজুয়েশন শেষে ঢাবি ছাত্র ইলিশের কারবার করে লাখটাকা আয়

গ্রাজুয়েশন শেষে ঢাবি ছাত্র ইলিশের কারবার করে লাখটাকা আয়

সানজিদা আরা বিথী, ঢাবি


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটের ইংরেজি ভাষা বিষয়ে সদ্য স্নাতক সম্পন্ন করা টগবগে তরুণ ; স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বাঁধনের একনিষ্ঠ কর্মী, বিএনসিসির ক্যাডেট সার্জেন্টসহ অসংখ্য কার্যক্রমের সাথে জড়িত ক্যাম্পাসের পরিচিত মুখ সিয়াম।

ইলিশের দেশ চাঁদপুর সিয়ামের বাড়ি হওয়ায় তাজা আসল ইলিশের ব্যবসায় শুরু করার সিদ্ধান্ত নিল।মানুষের টিটকারিমূলক সকল কথা উপেক্ষা করে পিছপা না হয়ে জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে’ইলিশের বাড়ি’ নামক ফেইসবুক পেইজ খুলে ইলিশের কারবার শুরু করে সাহসী সিয়াম।

এই সাহসী উদ্যোক্তার বিশেষ সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ক্যাম্পাস টুডের ঢাবি প্রতিনিধি সানজিদ আরা সরকার বিথী।

করোনার এই সময়ে আপনি কি ভেবে ব্যবসায়টা শুরু করলেন?

‘আমি খুবই কনফিডেন্ট একটি ছেলে।বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠন করে পরিচিতি পেয়েছি। ‘বাঁধন’করে আমার নাম হয়ে গেছে রক্তচোষা।বিএনসিসি করে সার্জেন্ট, মেজর বলে ডাকে সবাই।কিন্তু অনার্স ফোর্থ ইয়ারের দিকে আমার একটিভিটি কমে গেলে একটি খারাপ অবস্থার সৃষ্টি হয়।হলের অস্থিতিশীল পরিবেশ কাটিয়ে,কিছু নেগেটিভ পিপুল থেকে মুক্তি পেয়ে করোনায় বাসায় আসার পর খোলা বাতাস পেয়ে মনে হয়েছে জীবনের উদ্যম ফিরে পেয়েছি।

গ্রাজুয়েশন শেষ হয়ে গেছে সেহেতু চাকরির জন্য রাতে ঘুম হতনা।ভাবতাম কি করা যায়!ভাবতে ভাবতে ১১-১২ টা প্ল্যান রেডি করে প্রতিদিন আগাইতাম। তারপর ‘WE (Women and e-commerce forum)’ নামক গ্রুপে ফ্রেন্ডের মাধ্যমে এড হয়ে গ্রুপটা পর্যবেক্ষণ করে মানুষের বিজনেসের বিভিন্ন লেসন শুনে ইতিবাচক প্রেষনা সঞ্চয় করলাম। হলে ইলিশের মত দেখতে কি খাইতাম কোনো স্বাদ পেতাম না।সবমিলিয়ে ভাবলাম ইলিশ নিয়ে কাজ করা যায় কিনা এবং এখানে ‘WE’ এর একটা বড় অবদান আছে।’

ইলিশের কারবার শুরু করতে গিয়ে কি কি বাঁধার সম্মুখীন হয়েছেন?

‘শুরু করতে গিয়ে আব্বু, বোনেরা বলেছে,’এগুলো নিয়ে কাজ করবি;এর থেকে ভালো কাপড় বিক্রয় কর!’, ‘পড়ালেখা করাইছি এজন্য?’ শুরুতে সবদিক থেকেই ডিমোটিভেশন পাচ্ছিলাম।আমি সবদিক দিয়ে ভালো সোর্স খুঁচ্ছিলাম।

আব্বুর দেখানো নানা যুক্তি শুনে পিছপা না হয়ে দিন ফিক্সড করে বিভিন্ন ইলিশের হাটে গিয়ে বাজার পর্যবেক্ষণ করে খোঁজখবর নিয়ে অভিজ্ঞতা অর্জনে করে ভাবলাম ইলিশ নিয়ে কাজ করা যেতে পারে; মানুষকে ভালো জিনিসটা দেয়া যাবে।’

ইলিশের সোর্স খোঁজার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

‘যার কাছ থেকে প্রথমদিন মাছ নিয়েছি সে সবকটা মাছ ভালো দিলেও সেইম সাইজের মাছ না থাকায় বলল’ একটা ছোট সাইজ মাছ চলবে!’আমি বললাম আমার কোয়ালিটি আর ওয়েটে কোনো হেরফের হওয়া চাইনা।তারপর সে অন্য জায়গা থেকে মাছ এনে দিয়ে বলল,’ আজ তো প্রথম দিন সমস্যা নাই।’ কথাটি আমার ভালো লাগেনি; হয়তো সে আমার সাথে চিট করবে এই ভেবে পরে ওনার কাছে আর গেলামনা।

এরপর ভালো সোর্স খুঁজতে খুঁজতে এলাকার পরিচিত একজনের সোর্স খুঁজে পেলাম।আসল ইলিশ দেয়ার শর্তে সেখান থেকে এখন নিচ্ছি এবং সে ও আমার ভরসা বজায় রাখছে এবং অন্যান্য সোর্স ও ম্যানেজ আছে।’

প্রথমদিকে কাস্টমার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল, কাস্টমার হতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন কি?

‘প্রথম ডেলিভারি দেই আমার বন্ধুর কাছে। দ্বিতীয় অর্ডার ছিল দুই কেজির দুইটি ইলিশ(খুবই রেয়ার,পাওয়া যায়না)এবং এক কেজির একটি ইলিশ;এক সিলেটের আপুর কাছে। ওনার সমস্যা থাকায় এডভান্স ছাড়াই মাছ কিনে আনলাম।কিন্তু পরেরদিন সকালে ওনার মামা মারা যাওয়ায় আপুটা গ্রামের বাড়ি চলে গেছে ওনি জানাল, সিলেটে আত্মীয় কেউ মারা গেলে মাছ খায়না।ওনার দিক থেকে ওনি ঠিক থাকলেও ব্যবসায়ের শুরুতেই আমি মেন্টালি বড় একটা ধাক্কা খেলাম যেহেতু চাঁদপুরের আসল ইলিশের দাম অনেক বেশি।

তারপর আব্বু ইলিশগুলা কিনে নিল।আব্বু প্রথম দিকেও আপত্তি জানালেও পরে আমাকে সাপোর্ট করেছে। এরপর আমি নিজেকে আরো গুছালো করলাম।এরপর থেকে প্রতি অর্ডারে ৫০% এডভান্স নেয়া শুরু করলাম।আলহামদুলিল্লাহ এরপর আর এ ধরনের কিছু হয়নি এবং প্রতিনিয়ত আমি উন্নত করার চেষ্টা করছি।প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছি কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্সটা কিভাবে আরো ভালো করা যায়। ‘

সাড়া পাচ্ছেন কেমন, কত টাকার মাছ বিক্রয় হলো?

‘ঢাকায় প্রথম প্রি-অর্ডারে নয়টা জায়গায় অনেকগুলো ইলিশ বিক্রয় হয়।দ্বিতীয় প্রি-অর্ডারে চট্টগ্রামে দুইটা জায়গায় ডেলিভারি দেই।সর্বোপরি আস্তে আস্তে মানুষের বিশ্বাসটা অর্জন করতে পারছি।নিজেই ছুটে যাই মানুষের বাসায় হোম ডেলিভারি দেয়ার জন্য।অনেকেই হোলসেলে নিতে চাচ্ছে।এখন আমি প্রি-অর্ডার নিচ্ছি এবং মানুষের খুব ভালো রেসপন্স পাচ্ছি।

১১৭ কেজির আরো বেশি মাছ বিক্রয় হয়েছে।লাখ টাকার মত সেল হয়ে গেলেও প্রফিট অত বেশি না।কারন আমি কোয়ালিটিটা এনসিউর করি যেটা বাজারে করেনা ফলে কস্টটা ও বেশি।’

শেষ প্রশ্ন, ‘ইলিশের বাড়ি’নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?

‘আমার’ইলিশের বাড়ি’ চাঁদপুরের তাজা ইলিশের দেশীয় ব্র‍্যান্ড হিসেবে দেখতে চাই।মানুষের মুখে যতদিন ইলিশের নাম থাকবে ততদিন ‘ইলিশের বাড়ি’র নাম ও থাকবে।

দেশের প্রতিটা জেলার মানুষ চাঁদপুরের তাজা ইলিশটা পাবে।চাঁদপুরের ইলিশের ঘ্রাণ নিয়ে কোনো প্রতারনা হবেনা এমনকি বিদেশেও পৌঁছে যাবে।ব্র‍্যান্ড হওয়ার পর ও ইলিশের কোয়ালিটি এবং মানুষের বিশ্বাস ধরে রাখব।সবাই আমার মত করে স্বপ্ন দেখেনা। আমি যেভাবে স্বপ্ন দেখি আল্লাহর রহমতে ভবিষ্যতে কোয়ালিটিটা ধরে রাখতে পারব; ভালো কিছু করতে পারব, ইনশাআল্লাহ। ‘

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *