ঘরের সাপে দংশিত আওয়ামী লীগ : বামপন্থীদের সতর্কতা জরুরি

ঘরের সাপে দংশিত আওয়ামী লীগ : বামপন্থীদের সতর্কতা জরুরি

জি. কে. সাদিক: আমাদের ভুলে যাওয়ার কথা নয়। ঘটনা খুব বেশি দিনের পুরনো নয়। সুপ্রিম কোর্টের সামনে স্থাপিত লেডি জাস্টিসের ভাস্কর্য অপসরণ করা হয়েছিল মৌলবাদী শক্তির সন্তুষ্টি লাভের আশায়। এয়ারপোর্টের সামনে থেকে মরমি সাধক লালন শাহের ভাস্কর্য অপসরণও করেছিল মৌলবাদী শক্তি।

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে স্থাপিত ইতিহাসের সাক্ষী প্রিয় মধু দা’র (দাদা) ভাস্কর্যের কান ভেঙে দিয়েছে এবং সেটাকে নষ্ট করেছে। এবার কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে দিয়েছে। কে বা কারা ভেঙে সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে যে বা যারাই ভাঙেছে তাদের উদ্দেশ্যে যে চরম অসৎ সেটা স্পষ্ট।

সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে লেডি জাস্টিসের ভাস্কর্য অপসরণ, এয়ারপোর্টে সামনে থেকে লালনের ভাস্কর্য অপসরণ, মধুর ক্যান্টিনের সামনে মধু দা’র ভাঙচুর এসব নিয়ে দেশের প্রগতিশীল সংগঠনগুলো প্রতিবাদ জানিয়েছে, আন্দোলন করেছে। লেডি জাস্টিসের ভাস্কর্য অপসরণ আন্দোলনে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী ও ছাত্র ইউনিয়নে অনেক নেতাকর্মী পুলিশের হামলার শিকার হয়েছিলেন। হামলা, মামলা, গ্রেফতারসহ নানা নিপীড়ন তাদের উপর হয়েছে।

বেশি দিন আগের কথা নয়। এই তো ২০১৭ সালের কথা। লিটন নন্দী ও অন্যান্যদের উপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল থেকে ‘ছিঃ ছিঃ হাসিনা লজ্জায় বাঁচি না’ স্লোগান দেয়ার কারণে ছাত্র লীগ রেগে মেগে ক্ষোভে গণজাগরণ মঞ্চের নেতাদের উপর হামলাও করেছিল। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়ে ছিলেন তিনিও সুপ্রিম কোর্টের সামনে স্থাপিত লেডি জাস্টিসের ভাস্কর্য অপসরণ চান। জাতীয় ইদগাহের সামনে এমন ভাস্কর্য তিনি পছন্দ করেন না।

এই ভাস্কর্য অপসরণ করিয়ে তিনি মৌলবাদী গোষ্ঠীর অভিনন্দন বার্তাও পেয়েছিলেন। মাত্র বছর তিনেক আগের ঘটনা। এখনও তরতাজা মনে আছে। পুলিশের পিটুনিতে লিটন নন্দীর হাত ভেঙে গেছিল তিনি সে ভাঙা হাত নিয়ে ঘুরছেন এমন দৃশ্য এখনও চোখে ভাসছে।

২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলাম নাস্তিক মুরতাদের ফাঁসির দাবিসহ ১৩ দফা দাবিতে ঢাকায় শাপলা চত্বরে সমাবেশ করেছিল। সরকারের পক্ষ থেকে হেফাজতকে জঙ্গি, জামাতের আরেক নাম, মৌলবাদী, সন্ত্রাসীসহ নানা অভিধা দিয়ে তাদের সাথে কোনো ধরনের আলোচনা বা আপোষ নয় এমন বক্তব্য মিডিয়া ছেয়ে গেছিল। চোখের সামনে এসব এখনও ভাসছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যগুলো এখনও কানে বাজছে।

জনবিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ভোটার বিহীন নির্বাচনের পর তার ফ্যাসিস্ট, অগণতান্ত্রিক ও অবৈধ ক্ষমতা দখল টিকিয়ে রাখতে ৯০ ডিগ্রি এঙ্গেলে ঘুরে গিয়ে হেফাজতে ইসলামকে কোলে তুলে নিলো। বর্তমানে ৭৫ শতাংশ ইসলামপন্থী দলগুলো আওয়ামী লীগের কোলে। মাত্র ৭ বছর আগের কথা। যে আওয়ামী লীগ হেফাজতে ইসলামকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়েছিল সেই হেফাজতে ইসলামের সাথেই সখ্যতা গড়েছে।

‘১৪ সালেও হেফাজতে ইসলামের সিনিয়র নেতাদের নামে মামলা ছিল। এখন তাদের মামলাগুলো আর চলছে কি না এই সংবাদ আর দেখি না। ২০১৩ সালের ৫ মে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির অফিস হেফাজতে ইসলামের দেয়া আগুনে পুড়েছিল। সে নিয়ে কোনো টু শব্দ এদেশের তথাকথিত মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তির কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। এর বিচারও হয়নি।

২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ হেফাজতে ইসলামকে কোলে তুলে নিয়েছে এটা বিস্ময়কর কিছু নয়। ইতিহাসে অনেক ঘটনা আছে। অগণতান্ত্রিক, ফ্যাসিস্ট ও অবৈধভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলকারী দলগুলো তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য মৌলবাদী শক্তির সাথে হাত মিলায়। তারা নিজেদেরকে ধর্মরক্ষাকারী দাবি করে, তারাই সব চেয়ে ধার্মিক এবং তাদের আমলেই ধর্ম নিরাপদ, তারাই ধর্মের আইন অনুযায়ী চলতে একেবারে প্রস্তুত, তাদেরকে সমর্থন করলেই ধর্মরাজ্য প্রতিষ্ঠার পথ পাক্কা হবে এমন প্রতিশ্রুতি ও কতিপয় কাজের মাধ্যমে মৌলবাদী শক্তিকে কোলে তুলে নেয়। আওয়ামী লীগও সেটাই করেছে।

মজার বিষয় হচ্ছে এভাবেই অগণতান্ত্রিক, ফ্যাসিস্ট ও অবৈধভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলকারীরা নিজেদের কবর নিজেরাই খুঁড়ে। এটাও ইতিহাসের সাক্ষ্য। বর্তমান আওয়ামী লীগ মৌলবাদী শক্তিকে কোলে তুলে নিয়ে তাদের অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের কাজটিকে ধর্মের আবরণে জায়েজ করতে চেয়েছিল। ধর্মরক্ষীরা জায়েজের সনদ দিয়েছে। আওয়ামী লীগ এতোটাই ধর্মরক্ষী হয়েগেছিল যে মদিনার সনদ অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা, শরিয়া বিরোধী কোনো আইন হবে না মর্মেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

এরই ধারাবাহিকতায় হেফাজতের ১৩ দফা দাবির অনেকগুলো মেনে নিয়েছে। ইন্টারনেট জগতে তথাকথিত ধর্মাবমাননা বন্ধ করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করেছে। সে আইনের বলির শিকার শিক্ষক, সাংবাদিক, লেখক, সাহিত্যিক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সাধারণ শিক্ষার্থীরা। কে বাদ যায়নি এই কালো আইনের থাবা থেকে!

২০১৭ সালে মৌলবাদী শক্তির দাবির মুখেই তাদেরকে খুশি করতে সরকার সেকুলার শিক্ষানীতি থেকে সরে এসেছে, পাঠ্য বই থেকে হিন্দু লেখকদের লেখা বাদ দিয়েছে। একই বছর ১১ এপ্রিল সরকার কোনো ধরনের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই কওমী সনদের স্বীকৃতি দিয়েছে। কওমী সনদের স্বীকৃতি অবশ্যই দেয়া দরকার। সেটার জন্য শিক্ষাবিদ ও কওমী মাদ্রাসার নেতৃবৃন্দের সমন্বয় করে একটা পদ্ধতিগত দিক মেনে দেয়া উচিত ছিল।

কিন্তু সরকার হেফাজত ও অন্যান্য ইসলামপন্থী দলগুলোকে খুশি করতে হেফাজতের ইচ্ছে মতো যেনতেনভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। কারণ ২০১৮ সালেই ছিল জাতীয় নির্বাচন। তার আগে ইসলামী দলগুলোর সমর্থন আদায় করে নেয়া খুব দরকার ছিল। হেফাজতে ইসলাম তখন খুশি হয়ে আওয়ামী সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘কওমী জননী’ উপাধিতে ভূষিত করেছিল। শফি হুজুরও ২০১৩ সালের ৫ মে’র ঘটনা ভুলে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তার নেক নজর দিয়েছিলেন। সরকার সেই নেক নজরের মরতবা বুঝে নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার অনেক সিদ্ধান্তই হেফাজতের রাজি-খুশির প্রতি দৃষ্টি রেখেই নিয়েছে। এখনও নিচ্ছে।

সম্প্রতি সারাদেশে হেফাজতে ইসলাম ও অন্যান্য ইসলামপন্থী দলগুলো ভাস্কর্য বিরোধী আন্দোলনে নেমেছে। দেশে কোনো ভাস্কর্য থাকবে না। রাজধানীর ধোলাইখাল তীরে বঙ্গবন্ধুর একটা ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করে এই আন্দোলন শুরু হয়। সারাদেশে কোনো ধরনের ভাস্কর্য স্থাপন করতে দিবে না। এরই লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যও স্থাপন করা যাবে না। সম্প্রতি সারাদেশে এই নিয়ে আন্দোলন শুরু করেছে।

একদিন লেডি জাস্টিসের ভাস্কর্য অপসরণ বিরোধী আন্দোলন করে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের হামলা মামলার স্বীকার হয়েছিল এদেশের প্রগতিশীল সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। সেদিন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্র লীগসহ আর যা লীগ আছে সবাই প্রগতিশীল সংগঠনগুলোর উপর দারুণ ক্ষেপে ছিল। ‘মুসলমানদের দেশে এসব ভাস্কর্য না থাকাই ভালো’ এই ছিল তাদের অবস্থান। স্বয়ং আওয়ামী সভানেত্রী শেখ হাসিনাও মৌলবাদী শক্তির সাথে সুর মিলিয়ে ছিল।

এই লেখায় উপরে বলেছিলাম যে অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিস্ট দলগুলো ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে মৌলবাদী শক্তির সাথে হাত মেলায়। সেই মৌলবাদী শক্তির সাথে স্বার্থ সংঘাতও অনিবার্য। আওয়ামী লীগও ক্ষমতার রাজনীতির জন্যই মৌলবাদীদের সাথে হাত, পা, গলা, পেট সব মিলিয়ে কোলে তুলেছিল দেখতে শুনতে সুন্দর নাদুসনুদুস কাল সাপ।

ক্ষমতার স্বার্থে আওয়ামী লীগ যে সাপ কোলে তুলে নিয়েছিল ইতিহাসের নিয়মেই এখন তারা দংশনের শিকার হচ্ছে। সামনে এই দুই প্রগতি বিরোধী, জনস্বার্থ বিরোধী, অগণতান্ত্রিক শক্তির সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠেছে। কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা সেই সংঘাতের একটি আলামত মাত্র। আওয়ামী লীগ শফি হুজুর ও অন্যান্য মৌলবাদীদের যে পানি পড়া খেয়েছিল সেটা বিষ হয়ে কাজ করতে শুরু করছে। জনবিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগ কারবালার প্রান্তের পানি পানি করে মরতে বাধ্য হবে।

বিশেষ কিছু কথা বলা দরকার। বাংলাদেশে ভাস্কর্য নির্মাণ নতুন কিছু নয়। এটা বহু পুরনো সংস্কৃতি। এর বিরুদ্ধে মৌলবাদীদের প্রতিবাদও বহু পুরনো। কিন্তু তাদের প্রতিবাদটা ছিল খুবই ক্ষীণ স্বরে, মৃত নালার ন্যায়। এখন যেভাবে ভয়ংকর আওয়াজ দিচ্ছে তেমন ছিল না। এই ভয়ংকর আওয়াজ দিতে পারছে কারণ তারা ক্ষমতার কোলে।

হঠাৎ করে এমন সময় এই ভাস্কর্য অপসরণ আন্দোলন শুরু করেছে যখন সারাদেশে ধর্ষণ ও বিচার হীনতার বিরুদ্ধে জোর আন্দোলন চলছে। সরকারের নানা অপকর্মের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে। ভোটার বিহীন নির্বাচনের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে। বাজারে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন দাম বৃদ্ধির বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত ২৫টি পাটকল বন্ধের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে। সম্প্রতি ১০টি রাষ্ট্রায়ত্ত চিনি কল বন্ধের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়েছে। মাদ্রাসা ও মসজিদে শিশু বলাৎকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে। হাজার কোটি টাকা পাচার হওয়া নিয়ে আন্দোলন চলছে। চিম্বুক পাহাড়ের ম্রোদের ভূমি দখলের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে।

এমন সময় হঠাৎ করে ভাস্কর্য বিরোধী এই আন্দোলন শুরু করার হেতুটা কী সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। কুষ্টিয়ায় কে বা কারা কী উদ্দেশ্য নিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা কালে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে হাত দেয়ার সাহস করলো সেটাও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। সরকারের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর তৎপরতার কথা সকলের জানা।

কোথাও সরকার বিরোধী আন্দোলন কিম্বা নাশতামূলক পরিকল্পনা হচ্ছে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তাদের গ্রেফতার করে সব ঠেকিয়ে দেয়ার দুর্দান্ত সামর্থ্য তাদের রয়েছে। এটা আমরা দেখেছি। সেখানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে দিচ্ছে আর তারা সেটা নিয়ে কিছুই জানছে না, তাদের তৎপরতা তো প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার মতো।

গত কিছুদিন থেকে যুবলীগ, ছাত্র লীগ ও অন্যান্য আওয়ামী অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য অপসরণ আন্দোলনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। তারা সেখানে যে ধরনের বক্তব্য দিচ্ছে ও যে সুরে কথা বলছে সেগুলোও খেয়াল করার মতো। সেখানেও তারা মৌলবাদীদের কোলে রেখেই কথা বলছে। তাদের বক্তব্য হচ্ছে এরা ধর্মের নামে এই দেশে অশান্তি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে, এরা উগ্রবাদী তাই এই দেশের শান্তি প্রিয় ধর্মভীরুদের সাথে নিয়ে এসব উগ্রবাদীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ভাস্কর্য করা নিয়ে ইসলামের মধ্যে হালাল ফতোয়া খুঁজছে।

মোট কথা তারা ধর্মরক্ষাকারীর ভূমিকা ছাড়েনি। মৌলবাদের আতুড়ঘরে বসে মৌলবাদ বিরোধী আন্দোলন হাস্যকর! আওয়ামী লীগ এই হাস্যকর আন্দোলন শেষ করবে মৌলবাদী গোষ্ঠীর সাথে সমঝোতা ভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে। সেটা হবে মৌলবাদী গোষ্ঠীর অন্য একটা দাবি মেনে নিয়ে আপাতত বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন করার কাজ সমাধা করবে। বাকি কারো ভাস্কর্য বানাতে দিবে না। সে জন্য আইনের ফাঁকফোকর সৃষ্টি করবে। এটা একটা ভবিষ্যৎ বাণী। সত্য মিথ্যা বুঝতে আরও সময় লাগবে।

আওয়ামী লীগ যেভাবে মৌলবাদী গোষ্ঠীর সাথে সমঝোতা করেছে সে দৃষ্টান্তগুলো এই ভবিষ্যৎ বাণীই করছে। আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা যে আন্দোলন শুরু করেছে তারা এটা কখনই করতো না যদি না বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য অপসরণ করার কথা না উঠতো। তারা এখন মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির যে ধুনো তুলেছে এটা তাদের একটা গুটি মাত্র। এখন পর্যন্ত তারা অন্যান্য ভাস্কর্য অপসরণ নিয়ে অফিসিয়ালি কোনো কিছু বলেনি। তাদের এই আন্দোলন কেবলই দলীয় স্বার্থে। তারা এই দলীয় স্বার্থের জয় করতে গিয়ে সেকুলার রাজনীতির আরও বড় ধ্বংস সাধন করতে হলেও করবে।

প্রগতিশীল সংগঠনগুলো যদি মৌলবাদী গোষ্ঠীর উস্কানী ও আওয়ামী লীগের গুটির চালে পরে আখেরে আবারও ক্ষতির স্বীকার হবে। জিতবে আওয়ামী লীগ হারবে সমাজ প্রগতির সংগ্রামকারী প্রগতিশীল সংগঠনগুলো। তাই তাদের আন্দোলনের ফল যেন আওয়ামী লীগের ঘরে না যায় সেটা মাথা রাখা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটা দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়েছে যে আওয়ামী লীগ গিরগিটির চরিত্র নিয়ে রাজনীতি করে।

বিএনপি ডাইরেক্ট মৌলবাদীদের নিয়ে রাজনীতি করে এটা তারা খোলাখুলি স্বীকার করে। কিন্তু আওয়ামী লীগ মৌলবাদী শক্তিকে কোলে নিয়ে পানি পড়া খেয়ে রাজনীতি করলেও কখনও স্বীকার করে না। তারা গলায় মৌলবাদের তাবিজ ঝুলিয়ে সেকুলার রাজনীতির ওয়াজ করে। এটা ভয়ংকর চরিত্র।

প্রগতিশীল সংগঠনগুলোর জন্য এই ভয়ংকর চরিত্রের দল থেকে সাবধান থাকা জরুরি। কারণ বাংলাদেশের অনেক প্রগতিশীল বামপন্থী রাজনৈতিক দল ও অনেক শীর্ষস্থানীয় বামপন্থী নেতার মধ্যে আওয়ামী লীগের কাঁধে সওয়ার হয়ে সমাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠার চিন্তার মতো ভয়ংকর স্বপ্নদোষ আছে। কী বিচ্ছির ধরণের মতিভ্রমের শিকার!

লেখক- কলামিস্ট ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *