চবিতে বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই উপাচার্যের বাড়ির কর্মচারীর ছেলে-দোকানদার নিয়োগ

চবিতে বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই উপাচার্যের বাড়ির কর্মচারীর ছেলে-দোকানদার নিয়োগ

চবি প্রতিনিধি

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন(ইউজিসির) এর নির্দেশনা না মেনেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়(চবি) ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজে ছয় শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।একই সাথে প্রকৌশলী দপ্তরেও ইউজিসির নিয়ম না মেনে সাত কর্মচারীকে ‘অবৈধভাবে’ নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে চবি উপাচার্য প্রফেসর ড.শিরীণ আখতারের বিরুদ্ধে।এ নিয়োগগুলোর ক্ষেত্রে কোন ধরনের বিজ্ঞপ্তি বা পরীক্ষা নেওয়া হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়,নিয়োগ প্রাপ্তদের মধ্যে ক্যাম্পাসের দোকানদার ,উপাচার্যের বাড়ির কর্মচারীর ছেলে,উপাচার্যের গ্রামের বাসিন্দা,স্থানীয় বাসিন্দা ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীও রয়েছে।

গত ২৩ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অফিসে নিয়োগ দেওয়া হয় সাত কর্মচারীকে। একদিন পর ২৪ মে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল এন্ড কলেজে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ছয় শিক্ষককে।জানা যায়,আরও বেশ কিছু চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।

নিয়োগের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কোন নির্দেশনা মানেনি চবি কর্তৃপক্ষ। নিয়োগ দেওয়ার আগে নিয়ম অনুযায়ী কোন বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়নি।এধরনের নিয়োগের বৈধতা নিয়ে তাই প্রশ্ন উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় মহলে।

২০২০ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে তাদের অনুমতি ব্যতীত অ্যাডহক, দৈনিকভিত্তিক জনবল ও মাস্টাররোলে নিয়োগ না দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছিল।এমনকি আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমেও নিয়োগ দিতে হলে ইউজিসির অনুমোদন লাগবে।

জানা যায়,গত ২৩ মে সাত জনকে মাসিক সর্বসাকুল্যে ৯ হাজার টাকা বেতনে ছয় মাসের জন্য পাম্প সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।এ সংক্রান্ত একটি নথি ক্যাম্পাস টুডের কাছে এসেছে।সেখানে দেখা যায় এ নিয়োগে দৈনিক ভিত্তিক, অ্যাডহক, চুক্তিভিত্তিক নাকি মাস্টার রোল তার কোনোটিই উল্লেখ করা হয়নি।

নিয়োগপ্রাপ্ত সাতজন হলেন,শাহরিয়ার ইসলাম, ছানা উল্লাহ, বেলাল হোসেন, আব্দুল মুকিত, ইসমাইল হোসেন, মোহাম্মদ নোমান, মো. মোরশেদ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুই পাম্প সহকারী পদে নিয়োগপ্রাপ্ত শাহরিয়ার ইসলাম ও ছানা উল্লাহ তামিমের বাড়ি উপাচার্যের বাড়ির এলাকায়।নিয়োগপ্রাপ্ত বেলাল হোসেন ভিসি বাংলোর কর্মচারী মো. হারুনের ছেলে।নিয়োগপ্রাপ্ত আব্দুল মুকিত বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ ক্যাম্পাস এলাকার কাপড়ের দোকানদার।আরেক নিয়োগপ্রাপ্ত দুই নম্বর গেইটের আরেক দোকনদার ইসমাইল হোসেন।।স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ নোমানও নিয়োগ পেয়েছেন এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায়। এ ছাড়াও নিয়োগ পেয়েছেন হাটহাজারীর বাসিন্দা মো. মোরশেদ।

এছাড়াও ২৪ মে চবি ল্যাবরেটরি কলেজে অস্থায়ী ভিত্তিতে ছয় শিক্ষককে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়।জানা যায় এই সংখ্যা আরো বাড়বে।এক্ষেত্রে কোন লিখিত বা মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়নি।৬০টি ক্লাস ভিত্তিক হিসেবে তাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।।

এই নিয়োগে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন ছাত্রলীগ নেতার কথাও উঠে এসেছে।তিন জনের মধ্যে রয়েছে শাখা ছাত্রলীগের সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক শরিফুল ইসলাম,সাবেক মোহাম্মদ সদস্য পারভেজ এবং অনুপম রুদ্র।

এবিষয়ে চবি ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ শামসাদ বেগম চৌধুরীকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি ভিসি ম্যাম,রেজিস্ট্রার জানেন।আমরা কিছু বলতে পারবো না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন জ্যৈষ্ঠ শিক্ষক ক্যাম্পাস টুডেকে বলেন, এ ধরনের নিয়োগে কোন সচ্ছতা নেই।যোগ্যতা যাচাই ছাড়া সিলেক্টিভ ভাবে শিক্ষক নিয়োগ প্রত্যাশিত না।কাউকে কিছু না জানিয়ে হঠাত করে এমন নিয়োগ নিয়োগের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে।

ইউজিসির সদস্য প্রফেসর ড.মোহাম্মদ আবু তাহের ক্যাম্পাস টুডেকে বলেন, আমাদের বলা আছে ইউজিসির অনুমতি ছাড়া কোন বিশ্ববিদ্যালয় এডহক,মস্টাররোল,দৈনিক ভিত্তিক,চুক্তিভিত্তিক কোম নিয়োগ দেওয়া যাবে না।
পদ খালি থাকলে বাংলা ও ইংরেজি দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে।সংবিধানের ২৯(১) অনুচ্ছেদে এবলা আছে,প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ-লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকবে।কিন্তু এর বাইরে যদি কেউ করে তাহলে এটি ‘অবৈধ’।

অভিযোগের ভিত্তিতে চবি রেজিস্ট্রার(ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড.এস এম মনিরুল হাসান ক্যাম্পাস টুডেকে বলেন, আমাদের জরুরি ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হয়েছে।ইমারজেন্সি বেসিসে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাই পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়নি।ইউজিসির নির্দেশনা আছে অবসর জনিত,মৃত্যুজনিত শূন্যপদে সাময়িক সময়ের জন্য নিয়োগ দেওয়া যাবে।

চবি ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজে নিয়োগের বিষয়ে রেজিস্ট্রার(ভারপ্রাপ্ত) বলেন, প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ৬০টা ক্লাস করাবে ঐরকম ভাবে আমরা সিলেকশন করছি।নিয়োগ এখনো দেওয়া হয়নি।এটি আগে থেকেই হয়ে আসছে।আগের বছরগুলোতেও এভাবে নেওয়া হতো।৬০টা ক্লাসের পর তাদের আর নিয়োগ থাকবে না।

অভিযোগের ভিত্তিতে চবি উপাচার্য প্রফেসর ড.শিরীণ আখতারের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *