চলমান আইনের যথাযত প্রয়োগ করেই ধর্ষণ প্রতিরোধ সম্ভব

চলমান আইনের যথাযত প্রয়োগ করেই ধর্ষণ প্রতিরোধ সম্ভব

মোঃ আশরাফুল আমিন


ধর্ষণ একটি সামাজিক ব্যাধি, ধর্ষণ একটি অভিশাপ। সম্প্রতি বাংলাদেশে ধর্ষণ ও ধর্ষণ পরবর্তী হত্যা বিষয়ক খবরাখবর পড়তে পড়তে মানুষের মন আজ বিষিয়ে উঠেছে। ধর্ষণের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না শিশু, প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে,গৃহবধূ, স্কুল-কলেজ-মাদরাসা-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী।

সম্প্রতি সিলেট এমসি কলেজে ঘটে যাওয়া ধর্ষণের ঘটনা ও নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের ধর্ষণের ঘটনা মানবতাকে কলুষিত করেছে, মানুষের বিবেকে নাড়া দিয়েছে। এভাবে প্রতিনিয়ত বাংলাদেশে ধর্ষণ যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে। বলতে গেলে দেশে ধর্ষণের সংস্কৃতি চলে এসেছে।

দিনের পর দিন ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধু পুলিশের পরিসংখ্যা অনুযায়ী বাংলাদেশে ২০১৯ সালে ৫৪০০টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে এ তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ধর্ষণের হার ৩.৮০। ২০২০ সালে এসে এ মাত্রা দাড়িয়েছে ৯.৮২ এবং ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে ১১৬৪২ টি । চলমান আইনের যথাযত প্রয়োগ ও শাস্তি নিশ্চিত না হলে এ মাত্রা দিন দিন আরও বাড়তে পারে।

বাংলাদেশে ধর্ষণের ও যৌন নিপীড়নের কঠোর আইনে রয়েছে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০, এর ৯ ধারা মতে সাজাসমূহঃ

৯ (১) যদি কোন পুরুষ কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তাহলে তিনি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।
(২) যদি কোন ব্যক্তি কর্তৃক ধর্ষণ বা উক্ত ধর্ষণ পরবর্তী তার অন্যবিধ কার্যকলাপের ফলে ধর্ষিতা নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে, তা হলে উক্ত ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অন্যুন এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।

(৩) যদি একাধিক ব্যক্তি দলবদ্ধভাবে কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন এবং ধর্ষণের ফলে উক্ত নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে বা তিনি আহত হন, তা হলে ঐ দলের প্রত্যেক ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অন্যুন এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।

(৪) যদি কোন ব্যক্তি কোন নারী বা শিশুকে-
(ক) ধর্ষণ করে মৃত্যু ঘটানোর বা আহত করার চেষ্টা করেন, তাহলে উক্ত ব্যক্তি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন;
(খ) ধর্ষণের চেষ্টা করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি অনধিক দশ বত্সর কিন্তু অন্যুন পাঁচ বৎসর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।

বাংলাদেশে ধর্ষণের কঠোর আইন থাকা সত্বেও ইতিপূর্বে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রয়েছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে প্রভাবশালী মহলের সুপারিশে মুক্তিও পেয়ে যাচ্ছে। কঠোর শাস্তির বিধান নিশ্চিত না হওয়ায় অপরাধীরা আইনকে তোয়াক্কা না করে ধর্ষণের মত দন্ডনীয় অপরাধ করে যাচ্ছে।

৩০ লক্ষ শহীদ ও ২ লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে লাল সবুজ পতাকার নিশান উড়ানো বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার মাঠিতে আর যেন কোন মা বোন ধর্ষিত না হয় সেই লক্ষে দ্রুত বিচার আইনে ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করে আইনের প্রতিফলন ঘটাতে হবে।

মোঃ আশরাফুল আমিন
শিক্ষার্থীঃ- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *