চা নাকি কফি, কোনটি বেশি ভালো!

চা নাকি কফি, কোনটি বেশি ভালো!

নাঈমুল হাসান দূর্জয়


বন্ধু মহল কিংবা বিকেলের নাস্তা, চা ছাড়া যেন জমেই না। অন্যান্য ঋতুর তুলনায় শীতকালে এর চাহিদা বহুগুণ বেড়ে যায়। রিক্সাওয়ালা, শ্রমিক কিংবা দিনমজুর, দিনের সকল ক্লান্তি যেন ভর করে থাকে এক কাপ চায়ে। দিন শেষে চায়ের কাপে চুমুক না বসালেই নয়। চায়ের দোকান’কে অঘোষিত পার্লামেন্ট বললেও বোধহয় ভুল হবেনা।

এই শীতের রাতে শহরে গলির মাথায়, পার্কে, রাস্তার লেনে, টংঘরে, ল্যাম্পপোস্টের নিচে, চায়ের আড্ডার জন্য অনাবদ্য। কপত-কপতি কিংবা বয়োবৃদ্ধ সকলের কাছেই চা খাওয়াটা বেশ আরামদায়ক নেশা। ‘কফি খায় বড়লোকে’গ্রম্য মানুষের মুখে এমন বুলি থাকলেও এখন কিন্তু নিম্ন-মধ্যবৃত্ত, মধ্যবৃত্ত কিংবা অত্যান্ত ধনাঢ্য পরিবার, মোটামুটি সকলের কাছেই কফির জনপ্রিয়তা বেড়েছে। আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক ‘চিকিৎসা বিদ্যা’ চা/কফি নিয়ে কী বলে…


চায়ের রাসায়নিক উপাদান

১. ক্যাফেইন (১-৪%)
২. এডিনিন
৩. থিওব্রোমিন
৪. থিওফাইলিন
৫. জ্যান্থিন
৬. গ্যালোট্যানিক এসিড
৭. ভোলাটাইল অয়েল


কফির রাসায়নিক উপাদান

১. ক্যাফেইন (১-২%)
২. ট্রাইগোনেলিন (০.২৫%)
৩. ট্যানিন (৩-৫%)
৪. সুগার (১৫%)
৫. ফ্যাটি এসিড (১০-১৩%)
৬. প্রোটন (১০-১৩%)


উপকারী দিকগুলো

চা এবং কফি দুটোই প্রাকৃতিক ঔষধ হিসেবে কাজ করে। চা এবং কফি দুটি পানীয় এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা আমাদের শরীরে প্রবেশ করলে আমাদের ইন্দ্রিয়কে জাগ্রত করে। মস্তিকের উপর বেশি কার্য়কারী হয় পরিমিত চা। চা এবং কফি দুটোই মানুষের উদ্দিপণা শক্তিকে ত্বরান্বিত করে। চা স্নায়ূতন্ত্র ঠান্ডা রাখে এবং মনে প্রশান্তি বাড়ায় অন্যদিকে কফি প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি করে এবং বাড়তি প্রাণশক্তির উদয় হয়।

সমপরিমাণ চা এবং কফি পান করা মানুষদের ভিতরে কফি পান করা মানুষেরা রাতে নিদ্রাহীনতায় ভোগেন বেশি। দুটো পানীয় ডায়াবেটিকস্ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে তবে হৃদরোগে ভালো কাজ করে কফি এবং ক্যান্সার যেন না হয় সে কাজটি করেন চা। কারণ চায়ে রয়েছে এন্টঅক্সিডেন্ট। গবেষণা মতে চায়ে রয়েছে বেশি উপকারিতা। বাকিটা আপনার মর্জি…।


অপকারিতা

অতিরিক্ত চা পানের কারণে অনিদ্রা দেখা দিতে পারে। তবে কফিতে এর ভয়াবহতা আরো বেশি। চায়ে থাকা ক্যাফেইন অল্প মাত্রায় মূত্রবর্থক হিসেবে কাজ করে অর্থাৎ এটি ডাই-ইউরেটিক। অনেকে মনে করেন সকালের চা ‘বড়’ কাজ সারতে সাহায্য করে। তবে অতিরিক্ত হলে উল্টো বিপরীত হবে। চায়ে থাকা ‘থিওফাইলিন’ নামক রাসায়নিক উপাদান হজমের সময় পানিশূন্যতা তৈরি করতে পারে, যার ফলাফল কোষ্ঠকাঠিন্য।

অতিরিক্ত ক্যাফেইন ঘুমের সমস্যা, অস্থিরতা, অস্বস্তি ও হৃদস্পন্দসন বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য দায়ী। গর্ভবতী মায়েদের চা পুরোপুরি এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ চায়ের ক্যাফেইন ভ্রুণের বৃদ্ধি ব্যাহত করে এবং গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ায়।

প্রোস্টেট ক্যান্সার, এসোফ্যাজিয়্যাল ক্যান্সারের ঝুঁকি হল অতিরিক্ত চা পানের সবচাইতে খারাপ দিক। ক্যাফেইন হৃদযন্ত্রের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান। তাই যারা হৃদরোগে আক্রান্ত কিংবা যারা সেরে উঠেছেন তাদের চা যথাসম্ভব কম পান করাই শ্রেয়।


লেখকঃ শিক্ষার্থী, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *