চিরচেনা ক্যাম্পাসে নেই প্রাণের স্পন্দন

চিরচেনা ক্যাম্পাসে নেই প্রাণের স্পন্দন

মকিবুল মিয়া


করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ ৩৭ হাজার শিক্ষার্থীর প্রাণের স্পন্দন প্রিয় সরকারি বাঙলা কলেজের ক্যাম্পাস। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী চলতি বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

বিষন্ন মন আর এই নিথর দেহ চার দেয়ালে আটকে প্রায় দীর্ঘ অর্ধ বছর।মাঝে মাঝে মনে হয় বাড়ির এই গন্ডি পেড়িয়ে চলে যায় আমার প্রাণ প্রিয় ক্যাম্পাসে।

সর্বক্ষণ মনে হয় কেমন আছে আমার প্রিয় ক্যাম্পাস? ভালো আছে কি?সরকারি বাঙলা কলেজের ক্যাম্পাসের সাথেই যেন সবকিছু ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কেননা ক্যাম্পাসের চিরচেনা দিনগুলো স্মরণ করতেই ভেসে ওঠে প্রিয় বন্ধুদের চেহারা থেকে শুরু করে তাদের সঙ্গে ক্লাস করা, আড্ডা, ঘুরেবেড়ানো।

এ ছাড়া শিক্ষকদের স্নেহ, বড় ভাইদের ও আপুদের আদর ও ভালোবাসা। টংয়ের মামার দোকানে চায়ের আড্ডা, চিরচেনা ছাতিম তলায় বন্ধুদের জন্মদিন পালন, লাভ রোডে ভাইভার দিনে ফটোশুট কিংবা শাড়ি-পাঞ্জাবি পরে কাপলদের হেঁটে বেড়ানোর দৃশ্য, ফারুক চত্বরে দাঁড়িয়ে বড় ভাইদের সঙ্গে খোশগল্প, রাজনৈতিক আলাপআলোচনা, আবুল কাশেম হলে থাকা, অনুষদ ভবনের নিচে বন্ধুদের জন্য অপেক্ষা করা ও ফটোকপির দোকানে ভিড় জমানো, খেলার মাঠে নিজের বিভাগকে সাপোর্ট করতে যাওয়া, মেইন গেটের সামনে দাঁড়িয়ে যুব থিয়েটার কর্মীদের গান শোনা,লেক পারে বসে আড্ডা দেওয়া এবং কাপলদের আনাগোনা দেখা।

ছাতি তলায় বসে গোল আড্ডা, গ্রন্হাগারে যাওয়া ও সেমিনারে যাওয়া আরো কত কী?দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় সবাই গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছে। যাদের বাড়ি ক্যাম্পাসের আসেপাশে তাদের কাছ থেকেই ক্যাম্পাসের খোঁজ খবর পাওয়া যাচ্ছে।

মাঝেমধ্যে তারা ছবি তুলে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে আপলোড করে থাকে।ক্যাম্পাসের ছবিগুলো দেখতেই যেন এক ভালো লাগা কাজ করা,ভালোবাসা আর প্রিয় ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়ার তৃষ্ণা অনুভূতি হয়।চিরচেনা ক্যাম্পাস এখন বর্ণিল সাজে সজ্জিত।

ক্যাম্পাসের লেকে, লাভ রোডে পাখির কূজন চারিদিকে সবুজের বনায়ন আরও বিস্তৃত রূপ লাভ করেছে। দেয়াল ফেটে গুল্ম উদ্ভিদের জন্ন, ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি ধূসর চিত্র পাল্টে রঙিন করে দিয়েছে। সরকারি বাঙলা কলেজের ক্যাম্পাসের চারিদিকে যেন এখন প্রকৃতি হাসছে,খেলছে ও দুলছে।

ক্যাম্পাসের পড়াশোনা পাশাপাশি বন্ধুদের মধ্যে আনন্দ-উল্লাস সর্বদা লেগে থাকত, পাশাপাশি যে কোনো দিবসের অনুষ্ঠান কিংবা আলোচনা সভা চলত।কোনো বিভাগ বা কোনো শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা নানা আয়োজন করতো ক্যাম্পাসে।হাসি, ঠাট্টা, গল্পো আরো কত কিই-না হতো? কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সবকিছুই এখন নিস্তব্ধ।

হাহাকার আর নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে ক্যাম্পাসের প্রতিটি কোণায় কোণায়। প্রিয় ক্যাম্পাসে আজ নেই কোন বর্ণিল আলোকসজ্জা কিংবা আয়োজন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে এখন যে একাকিত্বের বসবাস। এখন নেই কোন অনুষ্ঠান বা শীর্ষক সেমিনার। শিক্ষার্থীদের ও শিক্ষকদের পদচারণার অভাবে প্রিয় ক্যাম্পাস যেন আজ চিরনিদ্রায় ঘুমিয়ে আছে। কবে জেগে উঠবে সবার প্রাণ প্রিয় ক্যাম্পাস সেই অপেক্ষায় শিক্ষার্থীরা প্রহর গুনছে।

ক্যাম্পাসের সেই ফুচকাওয়ালা, ভ্যানওয়ালা,বাদাম বিক্রেতা, পিয়ারা বিক্রেতা, গেটের সামনে অসংখ্য টংয়ের দোকানদাররা, আখের রস বিক্রেতাওয়ালা মামা, ফুল হাতে করে বিক্রির জন্য আসা ছোট শিশুরা, কুলফি বিক্রেতা মামা, সবার প্রিয় হালিম বিক্রেতা মামা, ক্যাম্পাসের কর্মচারীরা তাঁরাই বা কেমন আছেন? তাদের সঙ্গে ক্যাম্পাসের দীর্ঘ সময়ের ও আত্মার সম্পর্ক।

দীর্ঘ অর্ধ বছর ধরে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় তাদের জীবন-জীবিকা কেমন চলছে? ক্যাম্পাসই ছিল তাদের একমাত্র আয়ের উৎস। সর্বোপরি ক্যাম্পাসের কথা বলতে গেলে সবচেয়ে যেটি বেশি মনে হয় তা হলো ক্যাম্পাসের বন্ধুদের কথা এবং ক্যাম্পাসের বড় ভাই ও আপুদের কথা।দেশের চৌষট্টি জেলার শিক্ষার্থীদের এখানে ঘটে থাকে মিলনমেলা।

মোহনার মতো এখানে সবাই মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্ব আজ স্থবির সেজন্য কারোর সঙ্গেই দেখা সাক্ষাৎ করা সম্ভাব হচ্ছে না।বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন বা পরিবার ছেড়ে সবাই ক্যাম্পাস নামক গন্ডিতেই চৌষট্টি জেলার শিক্ষার্থীরা নিজেদের পরিবার বানিয়ে নেই।

চিরচেনা ক্যাম্পাসে এখন নেই কোনো পরিবার নেই প্রাণের স্পন্দন সবই যেন এখন স্মৃতি হয়ে গেছে।

রবি ঠাকুরের ভাষায়, ‘মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়,আড়ালে তার সূর্য হাসে।কারণ পৃথিবীর কোনো কিছুই চিরস্থায়ী নয়।এই দুর্যোগও আমরা খুব দ্রুত কাটিয়ে উঠবো। আবার ফিরে যাব চিরচেনা সেই ক্যাম্পাসে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *