ছাত্রীর সঙ্গে গণ বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রারের ২৬ মিনিটের অশ্লীল ফোনালাপ ফাঁস

ছাত্রীর সঙ্গে গণ বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রারের ২৬ মিনিটের অশ্লীল ফোনালাপ ফাঁস

নিজস্ব প্রতিবেদক


সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) রেজিস্ট্রার মো. দেলোয়ার হোসেনের সাথে একই প্রতিষ্ঠানের একজন ছাত্রীর ২৬ মিনিট ৩২ সেকেন্ডের অশ্লীল ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। অনুসন্ধানের ভিত্তিতে জানা যায়, রেকর্ডিংটি করোনার আগের। অডিও ক্লিপ ফাঁস হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) গোপনসূত্রে এই রেকর্ডিংয়ের ব্যাপারে জানা যায়। এতে রেজিস্ট্রার ঐ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন ধরণের অশ্লীল কথাবার্তা বলেন এবং অবৈধ সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব দেন।

রেকর্ডিংয়ে রেজিস্ট্রার যৌন সম্পর্কের বিভিন্ন বিষয়ে ঐ ছাত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘একটা যুবক-যুবতী যদি একসাথে থাকে, তখন কি হয় তুমি বুঝো না? ভালোবাসা গভীর হয়। একটা আত্মা আরেকটা আত্মার সাথে মিশে যায়। সে সুখ স্বর্গীয় সুখ, যেটা কিনতে বা খেতে পাওয়া যায় না।’

ঐ ছাত্রীকে কুপ্রস্তাব দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘কবে যাবা? আগামী অক্টোবর ৬/৭ তারিখের দিকে। আমরা সকালে যাবো বিকেলে ফিরে আসবো। আমার গাড়ি আছে সমস্যা হবে না।’ এছাড়া রেজিস্ট্রার যৌন সম্পর্কের বিষয়ে ঐ ছাত্রীকে এমন কিছু কথাবার্তা বলেন, যা ভাষায় প্রকাশযোগ্য নয়।

এ ধরণের ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) মো. নজরুল ইসলাম রলিফ বলেন, ‘আমরা কল রেকর্ডিংয়ের বিষয়ে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টিদের সাথে আলোচনায় বসবো। আমরা তাদের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানবো। যদি সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীবান্ধব না হয়, তাহলে আমাদের পক্ষ থেকে বড় কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।’

ঘটনার বিষয়ে রেজিস্ট্রার মো. দেলোয়ার হোসেনের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরবর্তীতে ফোনকলের কারণ দেখিয়ে ক্ষুদেবার্তা পাঠালেও তার কোনো উত্তর দেননি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) ডা: লায়লা পারভীন বানুর সাথে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর তিনি কোনো বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

এ প্রসঙ্গে কি পদক্ষেপ নেয়া হবে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা কি করবো, সেটা আপনারা বলে দিবেন নাকি? যা প্রয়োজনীয় করছি। আপনারা যা ভালো মনে হয়, করেন। এটা নিয়ে বেশি নাক গলানো ঠিক না। আমাদেরকে প্রশাসন চালাতে দেন। এসব আজগুবি কাহিনী ছাপায়ে নিজেদের ঝামেলা বাড়াবেন না।’

সার্বিক বিষয়ে ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘এই অডিও সহ উনার কীর্তিকালাপ সম্বন্ধে আমরা জানি। উনি থাকবেন না, এটা করোনার আগেই সিদ্ধান্ত হয়েছে। করোনা আসায় আর ভিসি বাইরে থাকায় কার্যকর হয়নি। এখন শুধু প্রসিডিউরের অপেক্ষায় আছে। উনার বিরুদ্ধে ডকুমেন্ট আছে। উনি থাকছেন না, এটা নিশ্চিত। আইনী ব্যবস্থার বিষয়ে আমরা উনার বিরুদ্ধে সকল তথ্য একত্রিত করে ট্রাস্টি বোর্ডের সভায় সিদ্ধান্ত নিব।’

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালেও রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রী যৌন নিপীড়ন সংক্রান্ত একটি অভিযোগ ইউজিসিতে দাখিল করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তখন তদন্ত কমিটি গঠন করে অভিযোগের বিষয়ে রেজিস্ট্রারের কাছে জবাব চাওয়া হয়। কিন্তু তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি বলে জানায় ইউজিসি। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক নারী শিক্ষক রেজিস্ট্রার কর্তৃক নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন অভিযোগ রয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *