অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা
বিশ্বব্যাপী মরণব্যাধী করোণার আক্রমণে আমরা অসহায়। বাংলাদেশও এ মরণব্যাধীর থাবায় আক্রান্ত। লকডাউনে জনজীবন বিপর্যস্ত। বন্ধ রয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ও। এতে আটত্রিশ হাজার শিক্ষার্থী দেশের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করছে। অনেক শিক্ষার্থী সংকটে পড়ে মানবেতর জীবনযাপনও করছে। আমাদের উচিৎ তাদের খোঁজ নেয়া, তাদের পাশে দাঁড়ানো।
বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক শিক্ষার্থী আছে- যাদের প্রাইভেট টিউশনের উপর নির্ভর করে নিজের পড়াশোনা এবং পরিবারের খরচ চালাতে হয়। তারা সহজেই অন্যের কাছে হাত প্রসারিত করতে পারে না। তাদের মানসিক যন্ত্রণা সীমাহীন। জানিনা এ হতভাগ্য সন্তানেরা কে কোথায় আছে। আমরা যদি তাদের পাশে দাঁড়াতে পারি নিঃসন্দেহে সৃষ্টিকর্তা তাঁদের অবদানের স্বীকৃতি দিবেন।
স্টুয়ার্ড শাখার প্রহরী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, কৃষি প্রকল্পের মাঠকর্মী, ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার প্রচেষ্টায় মালিরা নিয়মিত শ্রম দিয়ে যাচ্ছে। তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রণী ব্যাংক এই দুর্যোগের মুহূর্তে সেবা প্রদান অব্যাহত রেখেছে। বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞ।
যে ক্যাম্পাসে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের পদচারণা, যুব সম্প্রদায়ের প্রাণের স্পন্দন, কর্মচঞ্চল সে প্রতিষ্ঠান বর্তমানে থমকে দাঁড়িয়েছে। আমাদের উচিৎ তাদের পাশেও দাঁড়ানো।
এ ধরণের সহযোগিতা শুধু মানুষের জন্যই নয়, সকল প্রকার প্রাণিদের প্রতি থাকতে হবে। প্রত্যেকটি জীবনের মূল রয়েছে। বিভিন্ন সময় সংবাদ, সামাজিক মাধ্যমগুলোতে অসহায় মানুষের পাশাপাশি প্রাণিদের পাশে দাঁড়াতে দেখা যায়। এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
বর্তমানে জনশূন্য এই ক্যাম্পাসে এ মুহূর্তে পাখিদের নির্বিঘ্নে জীবনযাপন লক্ষণীয় এবং উপভোগ্য। তাপসী রাবেয়া এবং খালেদা জিয়া হলের মধ্যবর্তী গাছগুলোতে নাইট হিরণ (নিশী বক)-এর গুঞ্জন কী চমৎকার! এরমধ্যে তারা বাচ্চা দিয়েছে, বড়ও হয়েছে, তাদের প্রাণচঞ্চল আচরণ উপভোগ্য। ঘুঘু পাখিগুলো সকাল থেকে প্যারিস রোড, মন্নুজান-রোকেয়া হলের রাস্তায় আহারের জন্য ঘোরাফেরা করে, দেখতে ভীষণ ভালো লাগে। ওরা একটু লজ্জা পায়, দেখলেই উড়ে পালায়। কিন্তু ওদের লাজুক আচরণ আকর্ষণীয়।
রবীন্দ্রভবনের পাশের পুকুরের ধার ঘেঁষে হেঁটে যাচ্ছে ডাহুক পাখি। মা সামনে, বাচ্চা ৩টি মধ্যখানে আর বাবা পিছনে। স্বাভাবিক দিনগুলোতে এরকম অপূর্ব সুন্দর দৃশ্য দেখা যায় না।
প্যারিসরোড কী অপূর্ব সেঁজেছে! কেউ কেউ বলছেন মনে হয় জাপানের কোন রাস্তায় হাঁটছি। পরিষ্কার রাস্তা দু’দিকে গগন শিরীষ কচিপাতা নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। কি অপূর্ব, মনে হয় আগের চেয়ে এর সৌন্দর্য অনেক গুণে বেড়ে গেছে।
কিন্তু রাস্তা প্রাণহীন। শুধু দেখা যায় রাস্তায় শুয়ে আছে কিছু কুকুর। শুধু প্যারিস রোডে নয়, পশ্চিমপাড়া, প্রশাসন ভবন, শহীদ মিনার, দ্বিতীয়-তৃতীয় বিজ্ঞানভবন, বিনোদপুর-কাজলা গেট এবং চারুকলা পর্যন্ত প্রায় ৮৬টি কুকুর। প্রসেনজিৎ এবং তার ভাই তুষার সরকার ও মাহমুদ সাইকেলে চড়ে তাদের স্বহস্তে রান্না করা খিচুড়ি প্রতিদিন পরিবেশন করে।
আমাদের টিএসসিসি’র কর্মচারী মো. গাজিউল ইসলাম খিচুড়ি রান্না করে খাবার দিয়ে থাকে ক্যাম্পাসের অভুক্ত কুকুরদের। মাননীয় উপাচার্য মহোদয়ের বাসভবন থেকেও রাতে খাবার দেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও এগিয়ে এসেছে ৮৬টি কুকুর এবং ৩৭টি বিড়ালের মতো অসহায় প্রাণীদের পাশে।
কিন্তু কতদিন পারবে এদের খাবার সরবরাহ করতে? শিক্ষার্থীরা কোথায় পাবে অর্থ, একজন কর্মচারী, তারও সীমিত আয়। জিজ্ঞাসা থাকতে পারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কি করছে? প্রশাসন সাধ্যমত চেষ্টা করছে। সমাজের বিত্তবানদেরও কিছুটা দায়িত্ব আছে। আসুন আমরা যে যা পারি তাই দিয়ে এই অসহায় প্রাণীদের পাশে এসে দাঁড়াই।
অগ্রণী ব্যাংক, বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় একটি বাক্স রাখা হয়েছে। এই দুর্যোগ মুহূর্তে অভুক্ত প্রাণীদের সাহায্যার্থে আগ্রহীদের এগিয়ে আসার জন্য বিনীত আহ্বান জানাচ্ছি।
লেখকঃ অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা, উপ-উপাচার্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।