জুয়া খেলতে শিশুর জীবনবাজি ধরল পাষন্ড বাবা

জুয়া খেলতে শিশুর জীবনবাজি ধরল পাষন্ড বাবা

সারাদেশ টুডে: পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরেই যখন একটি নবজাতক শুনতে পায় তার জন্মদাতা বাবা জুয়ার নেশায় পড়ে নিজ সন্তানের জীবন বাজী ধরে তখনই নবজাতক নিষ্ঠুর পৃথিবীর সাক্ষী হয়। তেমনি একটি ঘটনা ঘটেছে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার মসূয়া ইউনিয়নের রামদী গ্রামে। জুয়ার নেশায় ১৪দিনের বয়সীসন্তানের জীবন বাজি ধরেছে ফারুক ভূইঁয়া নামের এক ব্যক্তি।

জানা যায়, ৫ নভেম্বর কটিয়াদী পৌর সদরের একটি ক্লিনিকে জন্ম নেয় তাদের তৃতীয় সন্তান। এই কন্যা সন্তানটির নাম রাখা হয় রাধিয়া। এ দিকে, গত সোমবার রাধিয়া জ্বরে আক্রান্ত হলে ওই দিন সকালে তার বাবা ফারুক ভূঁইয়া চিকিৎসার কথা বলে শিশুটিকে তার মায়ের কোল থেকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।

এরপর বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ফারুক ভূঁইয়া তার শ্যালক শফিককে মুঠোফোনে জানায়, ‘শিশু রাধিয়াকে এক মহিলার কোলে দিয়ে সে শৌচাগারে গিয়েছিল। পরে সেখান থেকে এসে দেখতে পায়, রাধিয়াকে নিয়ে ওই মহিলা পালিয়ে গেছে। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও শিশুটিসহ ওই মহিলাকে পাওয়া যাচ্ছে না।’

জানা যায়, কটিয়াদী উপজেলার মসূয়া ইউনিয়নের রামদী গ্রামের মো. ফরিদ ভূঁইয়ার মেয়ে মোছা. রিনা খাতুনের সঙ্গে প্রায় ১৫ বছর পূর্বে একই উপজেলার বালিরারপাড় এলাকার মৃত শাহাবউদ্দিনের ছেলে মো. ফারুক ভূঁইয়ার বিয়ে হয়। তাদের সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে ছিল। কিন্তু ফারুক ভূঁইয়া জুয়া খেলায় আসক্ত থাকায় তাদের সংসারে অভাব অনটন দেখা দেয় এবং এ নিয়ে প্রায়ই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হতো।

এমন খবর পেয়ে ছোট বোন রিনাকে নিয়ে শফিক হাসপাতালে গিয়ে শিশুটির বাবা ফারুককে খুঁজতে থাকেন। এ সময় তাকে না পেয়ে তার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে ফোন বন্ধ পান। এরপর তারা ফারুকের বাড়ি বালিরারপাড় গ্রামে যান।

এ দিকে, রাধিয়ার বাবা অন্য একটি মুঠোফোনে শিশুটির মা রিনাকে জানায়, ‘শিশু রাধিয়াকে ফিরে পেতে হলে তাকে ছয় লাখ টাকা দিতে হবে।’

পরবর্তীকালে রাধিয়ার মামা শফিক ও মা রিনা আক্তার জানতে পারে, শিশু রাধিয়াকে তার বাবা ফারুক ভূঁইয়া, দাদী রেহেনা খাতুন ও তাদের আত্মীয় জসিম ভূঁইয়াসহ অজ্ঞাত আরও দুই-তিনজন মিলে উপজেলার বেতাল গ্রামের সুমন ভূঁইয়ার স্ত্রী জাকিয়া আক্তারের কাছে ৭০ হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়েছে।

এ ঘটনায় শিশু রাধিয়ার মা মোছা. রিনা খাতুন পরদিন মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) কটিয়াদী মডেল থানায় ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার পর পুলিশ পাষণ্ড বাবা ফারুক ভূঁইয়া ও শিশুটিকে কিনে নেওয়া জাকিয়া আক্তারকে আটকসহ শিশু রাধিয়াকে উদ্ধার করে। এরপর বুধবার (২০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় তাদের কিশোরগঞ্জ আদালতে প্রেরণ করে। পরে ওইদিন রাতেই শিশু রাধিয়াকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়ে দুই আসামিকে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন আদালত।

এ দিকে, ঘটনার নেপথ্যের কারণ জানতে আদালতে দুই আসামির প্রত্যেককে পাঁচ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কটিয়াদী থানার এসআই মো. মোস্তফা কামাল।

এ ব্যাপারে কটিয়াদী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এম এ জলিল দৈনিক অধিকারকে জানান, ‘১৪ দিনের শিশু সন্তানকে বিক্রি করে ফারুক ভূঁইয়া ৭০ হাজার টাকা পেয়েছিল। এক রাতেই জুয়া খেলে সে পুরো টাকা শেষ করে দেয়। জুয়ার নেশায় পড়েই সে এমন নির্মমতার পথ বেছে নিয়েছিল বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে।’

দ্য ক্যাম্পাস টুডে

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *