জোরালো হচ্ছে হল খুলে দেয়ার দাবি

জোরালো হচ্ছে হল খুলে দেয়ার দাবি

ওয়াসিফ রিয়াদ, রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) আটকে থাকা স্নাতক শেষ বর্ষ ও স্নাতকোত্তরের চূড়ান্ত পরীক্ষা নেওয়া এবং তার আগে স্বাস্থ্যসুরক্ষা নিশ্চিত করে আবাসিক হল খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের নেতারা।

সম্প্রতি হল খুলতে আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। এতে জোরালো হচ্ছে হল খুলে দেয়ার দাবি।

জানা গেছে, হল খুলে পরীক্ষা নেয়ার দাবিতে গত ১৫ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল এবং ২৭ ডিসেম্বর শাখা ছাত্রলীগ উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে।

স্মারকলিপিতে তারা জানান- ‘সেশনজট নিরসন এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের প্রেক্ষিতে দ্রুততম সময়ে পরীক্ষা নেয়া যেমন জরুরি, ঠিক তেমনি হল বন্ধ রেখে স্বাস্থ্যসুরক্ষা নিশ্চিত না করেই পরীক্ষা গ্রহণের সিন্ধান্ত একপাক্ষিক, যা শিক্ষার্থীবান্ধব নয়।’

এদিকে হল খুলে দেয়ার দাবিতে আগামীকাল (মঙ্গলবার) অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ। পরে শিক্ষার্থী এবং ছাত্র অধিকার পরিষদ রাবি শাখার নেতাকর্মীরা পৃথকভাবে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেবেও বলে জানা গেছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন- ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হল বন্ধ রেখে শিক্ষার্থীদের যে বিড়ম্বনায় ফেলছে তা স্বৈরাচারিতার প্রতিফলন মাত্র। হল খুলে দেয়া না হলে আন্দোলন আরও বেগবান হবে।’

এর আগে ১৯ ডিসেম্বর একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় হল বন্ধ রেখে ২ জানুয়ারি থেকে আটকে থাকা স্নাতক শেষ বর্ষ ও স্নাতকোত্তরের চূড়ান্ত পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সভায় এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। পরীক্ষা নেয়ার আগে স্বাস্থ্যসুরক্ষা নিশ্চিত করে হলগুলো খুলে দেয়ার দাবি শিক্ষার্থী ও ছাত্রনেতাদের।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, পরীক্ষার্থীদের জন্য হল উন্মুক্ত করে, স্বাস্থ্যসুরক্ষা নিশ্চিত করে পরীক্ষা গ্রহণ করা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে হল খুলে দেয়ার দাবিতে স্মরকলিপি দিয়েছি। উপাচার্য আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। এরপরও যদি হল খুলে দেয়া না হয় তাহলে আবারও আমরা প্রশাসনের সাথে সাক্ষাৎ করবো। এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের স্বার্থ-প্রত্যাশা-অধিকারের আলোকে হল খুলে এবং স্বাস্থ্যসুরক্ষা নিশ্চিত করে পরীক্ষা গ্রহণের দাবি জানান।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সুলতান আহমেদ রাহি বলেন, ‘সেশনজট নিরসন এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের জন্য দ্রুততম সময়ে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত জরুরি, তার আগে জরুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে হলগুলো খুলে দেয়া। এবিষয়ে আমরা গত ১৫ ডিসেম্বর সাংগঠনিকভাবে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছি। হল খুলে না দেয়া হলে আমরাও আন্দোলনে যাব।’

আটকে থাকা পরীক্ষাগুলো নেয়া সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন ছাত্র ইউনিয়ন রাবি সংসদের সভাপতি শাকিলা খাতুন। তিনি বলেন, ‘আবাসিক হল বন্ধ রেখে পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়টি শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রচ- উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তাই শুধুমাত্র পরীক্ষার্থীদের জন্য হলেও হলগুলো খুলে দেয়া হোক।’

রাবি শাখা ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মহব্বত হোসেন মিলন বলেন, করোনাকালীন পরিস্থিতির কারণে শিক্ষার্থীরা সেশনজটে পড়তে যাচ্ছে। যা শুধু শিক্ষার্থী নয় বরং পুরো রাষ্ট্রের জন্যই বড় সমস্যা। এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য শিক্ষার্থীদের দাবির কথা বিবেচনা করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হল খুলে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের চূড়ান্ত পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। একই সাথে শিক্ষার্থীদের জন্য থাকার ব্যবস্থা ও পড়াশোনার পরিবেশ প্রশাসনকে নিশ্চিত করতে হবে। তিনি আরও জানান, দাবি আদায় না হলে কঠোর আন্দোলনে যাবে তারা।

অবিলম্বে হল খুলে দেয়ার দাবি জানিয়ে ছাত্র অধিকার পরিষদ রাবি শাখার সভাপতি মুর্শিদুল আলম বলেন, হল বন্ধ রেখে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থী স্বার্থ পরিপন্থী। আগামীকাল শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সাথে ছাত্র অধিকার পরিষদ একাত্মতা ঘোষণা করবে। পরে সংগঠনের ব্যানারে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করবে তারা।

হল খুলে দেয়ার বিষয়ে প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া সঠিক সিদ্ধান্ত হবে না। শিক্ষার্থীরা যাতে সেশনজটে না পড়ে এবং তারা যেন চাকরিতে আবেদন করতে পারে এজন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষাগুলো নেয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারিভাবে সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।

এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, শিক্ষার্থীদের হল খুলে পরীক্ষা নেওয়ার দাবিটা যৌক্তিক। তবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কিংবা শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একার পক্ষে হল খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব না।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *