জ্ঞানার্জনে বইমেলার ভূমিকা অকল্পনীয়

জ্ঞানার্জনে বইমেলার ভূমিকা অকল্পনীয়

মোঃ রুবাইয়াদ ইসলাম: বই হচ্ছে মানুষের এক অমূল্য সম্পদ এবং জ্ঞান অর্জনের অন্যতম পাথেয়। আর বইমেলা হলো হরেক রকমের বইয়ের সাথে বিচিত্র মানুষের মেলবন্ধনের অন্যতম মাধ্যম। সাধারণত বইমেলা বিশেষ কোনো দিবস বা উপলক্ষ অনুযায়ী অস্থায়ীভাবে স্বল্প পরিসরে অথবা বৃহৎ পরিসরে গ্রামগঞ্জে কিংবা শহরে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

বইমেলা ঘিরে থাকে খাওয়া-দাওয়া করার জন্য তৈরি বিভিন্ন স্টোল ও বিনোদনের ব্যবস্থা। বইমেলার মাধ্যমে বইয়ের সাথে মানুষের এক ধরনের নিবিড় আত্মীয়তার সম্পর্ক তৈরি হয়ে থাকে। ব্যক্তিজীবনে জ্ঞানার্জনের জন্য বই পড়ার বিকল্প কোন উপায় নেই এবং এক্ষেত্রে বইমেলা অন্যতম সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।

বিশ্বে সর্বপ্রথম প্রাচীন ইউরোপের দেশ জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে ১৪৬২ খ্রিস্টাব্দে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বইমেলার আয়োজন করা হয় এবং ক্রমান্বয়ে তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের দেশে স্বাধীনতা অর্জনের পর সর্বপ্রথম ১৯৭৫ সালে বাংলা একাডেমি কর্তৃক বইমেলার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় এবং তারপর থেকে প্রতিবছর ধারাবাহিকভাবে বইমেলার আয়োজন করা হয়ে আসছে।

বইমেলার মাধ্যমে মানুষের সৃজনশীলতা ও জ্ঞানচক্ষু উন্মীলন হলেও আমরা বই পড়া থেকে অনেকদূর পিছিয়ে রয়েছি। একটি বইয়ের মধ্যে বিচিত্র রকম তথ্য থাকে যা মানুষের জ্ঞান ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করার জন্য যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে‌ থাকে। বই পড়ার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি সমস্ত মানবিক গুণাবলী সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে পারে, ভালো-মন্দের বিচার করতে পারে এবং পূর্ণ মানসিকতা সম্পন্ন ব্যক্তিত্বে পরিণত হতে পারে।

বই পড়ার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি ইতিহাস, ঐতিহ্য, জীবনধারা, সমাজব্যবস্থা, রাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং অতীত সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারে। বর্তমান আধুনিক পৃথিবী গড়ে ওঠার পেছনে বই পড়ে জ্ঞান অর্জন করে তা পরিশ্রমের মাধ্যমে প্রয়োগ করাকে মনে করা হয়ে থাকে।

একটি বই মেলায় থাকে নানান ধরনের বইয়ের সামগ্রী। তন্মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হলঃ গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, কবিতা, গবেষণা, ছড়া, শিশুতোষ, জীবনী, মুক্তিযুদ্ধ, বিজ্ঞান, ভ্রমণ, ইতিহাস, রাজনীতি, রম্যধারা, ধর্মীয়, অনুবাদ, সায়েন্স ফিকশন এবং অন্যান্য বই। মেলার প্রতিটি স্টলের মধ্যে থাকে মলাটে মোড়ানো নতুন বইয়ের গন্ধ।

বইমেলার মধ্যে মানুষ বই কেনার পাশাপাশি বিনোদন কেন্দ্রগুলোতেও ভিড় করে থাকেন এবং খাবারের দোকানগুলো থেকে খাবার কিনে খান। অনেকেই আবার বই মেলায় ঘুরতে এসে নানান ধরনের বই কিনে বাড়ি ফিরেন। বইমেলাকে নবীন-প্রবীণ, জ্ঞানী-গুণী সকলের মিলনমেলা বলা হয়ে থাকে। বইমেলার মুক্তমঞ্চ থেকে প্রতিদিন নতুন নতুন বই প্রকাশিত হয়।

বইমেলায় অনেক নতুন লেখকের বই প্রকাশিত হওয়ায় এটি জ্ঞানচর্চার ও জ্ঞান লাভের এক বিশাল ক্ষেত্র তৈরি করে থাকে। প্রতিবছর বইমেলাকে ঘিরে এক উৎসবমুখর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বইমেলাকে ঘিরে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া এক ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করে।

আমাদের জাতীয় জীবনে বইমেলার গুরুত্ব অপরিসীম। লেখক, পাঠক‌ আর প্রকাশকদের ঘিরে তৈরি বইমেলা জাতির মননশীলতা, সুসংস্কৃতিবোধ এবং রুচিসম্মত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

আমাদের চিন্তা চেতনা বিকাশে বইমেলার ভূমিকা অনস্বীকার্য। বইমেলার মাধ্যমে জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং সুস্থ মানসিকতা সম্পন্ন মানুষে ভরে যাবে প্রিয় মাতৃভূমি- এই প্রত্যাশা সবার।

লেখকঃ শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ,
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *