ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে বশেমুরবিপ্রবি ৮ সংগঠনের বিবৃতি

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে বশেমুরবিপ্রবি ৮ সংগঠনের বিবৃতি

বশেমুরবিপ্রবি টুডে: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ বাতিলের দাবিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) আটটি সংগঠন যৌথ বিবৃতি প্রদান করেছে।

বিবৃতি প্রদানকারী সংগঠনগুলো হলো বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বশেমুরবিপ্রবি সংসদ, উদীচী, স্ফুলিঙ্গ(আবৃত্তি সংসদ), বশেমুরবিপ্রবি সাহিত্য সংসদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, শিল্প সাহিত্য সংঘ, বিজ্ঞান ক্লাব এবং Consumer Youth Bangladesh

যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, চলমান করোনা মহামারীর প্রকোপে চারিদিকে মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলেছে, শোকে স্তব্ধ শহর-বন্দর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত। মানুষের চিকিৎসা না পাওয়ার হাহাকার,স্বজন বিয়োগের আর্তচিৎকার আর ক্ষুধার যন্ত্রণায় প্রতিদিন একটু একটু করে ভারী হয়ে উঠছে বাংলাদেশের আকাশ।

এই মহামারীতে বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার ভঙ্গুর দশা ও অবাধ দূর্নীতির চালচিত্র ইতোমধ্যেই জনগণের কাছে নগ্ন সত্য হিসেবে প্রকাশ পেয়েছে। শুরু থেকেই যেসকল সচেতন নাগরিক এই রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, যৌক্তিক সমালোচনা করেছেন, রাষ্ট্র তাদের কন্ঠকে রোধ করে চলেছে “ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন” নামক এক ঔপনিবেশিক মনস্তত্ত্ব থেকে তৈরী আইনের মাধ্যমে।

যখন কিনা রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্ব ছিলো করোনা সংকট মোকাবেলায় সর্বোচ্চ মনোসংযোগ করে কার্যকারী পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করা, জনগণের জীবনের নিরাপত্তা দেয়া। তা না করে বরং রাষ্ট্র উল্টো মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে হরণ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। যার দরুন বাংলাদেশকে আজ পার করতে হচ্ছে স্মরণকালের সবচেয়ে দুঃসময়।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ইতোমধ্যে ফটোসাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল,কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, এক্টিভিস্ট দিদারসহ বেশ কয়েকজন শিকার হয়েছেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নামক এই নিপীড়নমূলক আইনের। সকল প্রকার যৌক্তিক সমালোচনাকে অপরাধ জ্ঞান করে রাষ্ট্র কেড়ে নিচ্ছে মানুষের বাক-স্বাধীনতার
অধিকার এবং একই সাথে সৃষ্টি করে চলেছে এক সর্বজনীন ভয়ের সংস্কৃতি। এদিকে রাষ্ট্রযন্ত্রের তাঁবেদারিতে পিছিয়ে নেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসনও ৷

আমরা অত্যন্ত বিস্ময়ের সাথে লক্ষ করেছি তথাকথিত ‘মানহানি’, ‘কটুক্তি’, ‘গুজব রটানো’ ইত্যাদি অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক মামলা করা হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কাজী জাহিদুর রহমান, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সিরাজুম মুনিরা, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহিরের বিরুদ্ধে।স্মরণ করিয়ে দেই,
শাবিপ্রবির শিক্ষার্থী ও গোটা দেশে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধ ও প্রতিবাদের মুখে শিক্ষার্থী মাহির এর বিরুদ্ধে করা নিপীড়নমূলক মামলা অত্র বিশ্বিবদ্যালয় প্রশাসন প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়েছে।

আমরা মনে করি রাষ্ট্র এই দৃষ্টান্ত ভুলে যাবেন নাহ্।এছাড়া বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের যৌক্তিক সমালোচনার অভিযোগে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্র ইউনিয়ন এর সাধারণ সম্পাদক সাদিকুল ইসলাম স্বীকার হয়েছেন সাময়িক বহিষ্কারাদেশর এবং সর্বশেষ নবম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে এই আইনের আওতায়।

সব মিলিয়ে যেকোনো শ্রেণী, পেশা, বয়সের মানুষের বিরুদ্ধেই নেমে আসছে এই নিবর্তনমূলক কালো আইনের খড়গ। একটি স্বাধীন এবং গণতান্ত্রিক দেশে যা কখনোই কাম্য নয়৷

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতারকৃত সকলের মুক্তি দাবি করে বলা হয়, আমরা মনে করি রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে সরকারের অব্যবস্থাপনা ও ব্যর্থতার সমালোচনা করা যেকোনো নাগরিকের মৌলিক এবং সাংবিধানিক অধিকার৷ এই মৌলিক অধিকার যেই আইন হরণ করে সেই অসাংবিধানিক আইনের বিলোপ দাবি করা যেকোনো সচেতন নাগরিকের অবশ্য করণীয়।

গণতন্ত্র, গণমানুষ ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের প্রতি সম্মান রেখে আমরা সকলে অচিরেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানাই এবং একই সাথে উক্ত আইনে হেনস্তার শিকার হওয়া এবং কারারুদ্ধ সকলের মুক্তির দাবি জানাই।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *