ড. মোর্শেদ হাসান খানকে চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি সাদা দলের

ড. মোর্শেদ হাসান খানকে চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি সাদা দলের

ক্যাম্পাস টুডে ডেস্ক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খানকে চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াতপন্থী সাদা দলের শিক্ষকরা।

বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে তারা এ দাবি জানান।

জানা যায়, সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে পত্রিকায় নিবন্ধ প্রকাশ করার অভিযোগে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

সাদা দলের আহবায়ক অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীন মতপ্রকাশ ও মুক্তবুদ্ধির লালন ও চর্চার কেন্দ্র হিসেবে সুপরিচিত। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য। কিন্তু আমরা হতাশা ও উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সুমহান ঐতিহ্য নস্যাত হতে চলেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ড. মোর্শেদ হাসান খান মার্কেটিং বিভাগের একজন অধ্যাপক। একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর একটি নিবন্ধের সূত্রধরে উদ্ভূত প্রতিক্রিয়া ও পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে এবং রিপোর্টের ভিত্তিতে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনিক ট্রাইবুন্যাল গঠন করা হয়। আমরা জানতে পেরেছি যে, ট্রাইবুন্যাল প্রথমে তাঁর বিরুদ্ধে একটি শাস্তির সুপারিশ করেছিল।’

কিন্তু একটি মহল এটি জানতে পেরে ট্রাইবুনালের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার জন্য সংবাদ প্রকাশের ব্যবস্থা করে এবং ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিলও করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একটি পরিস্থিতি তৈরি করে ট্রাইবুনালের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের মাধ্যমে গত ৯ সেপ্টেম্বর সিন্ডিকেট সভায় অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খানকে চাকুরি থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়।’

তিনি আরো বলেন, ‘১৯৭৩ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশের ৫৬ ধারার-৩ উপধারা এবং ১ম স্ট্যাটিউটের ৪৫ ধারার ৩ উপধারা অনুযায়ী নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধ, অদক্ষতা এবং চাকরিবিধি পরিপন্থী কাজের সাথে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে চাকুরি থেকে অব্যাহতি প্রদান করা যায়।

অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান উপর্যুক্ত কোনো অভিযোগে অভিযুক্ত নন।’
বাংলাদেশের সর্বত্র ভিন্ন মতের মানুষের প্রতি নিপীড়ন, নির্যাতন চলছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কেউ রেহাই পাচ্ছেন না। ভিন্ন মতের বক্তব্য কেবল পাল্টা বক্তব্য দিয়েই খণ্ডন করা উচিত। কিন্তু সরকার জবাব দেয় হামলা, মামলা, খুন, গুম ও ধর্ষনের মাধ্যমে।’

ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয় ১৯৭৩ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশে। আদেশের ৫৬ ধারার২ উপধারা অনুযায়ী যে কোনো শিক্ষক বা কর্মকর্তা রাজনীতি করার তথা স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অধিকার রাখেন। নিবন্ধটি প্রত্যাহার, দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা সত্ত্বেও তাঁকে চাকুরি থেকে অব্যাহতি প্রদানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত নজিরবিহীন ও ন্যাক্কারজনক। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত চাকরিবিধিরও সুস্পষ্ট ব্যত্যয়।’

এটি স্বাধীন মতপ্রকাশ ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যের পরিপন্থী উল্লেখ করে তিনি এ ধরণের ‘নজিরবিহীন ও ন্যাক্কারজনক’ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। একইসঙ্গে এ সিদ্ধান্ত বাতিল করে তাঁকে চাকরিতে পূর্নবহাল করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানান।

এ সময় মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন, অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান, অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান খান, অধ্যাপক মামুন আহমেদ, অধ্যাপক কালাম সরকার, অধ্যাপক আবদুস সালাম, অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুস সালাম, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, অধ্যাপক হাসানুজ্জামান, অধ্যাপক মোস্তফা আল মামুন, অধ্যাপক কামরুজ্জামান, অধ্যাপক জাফরুল আজম, অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী, সাইফুদ্দিন আহমেদ, এম এ কাউসার, জাহিদুল ইসলাম, আল আমিনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক শিক্ষক।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *