ঢামেক ও ঢাকা বোর্ডের শীর্ষ মেধাবী রাজকুমার এখন মাত্র ৫০ টাকার দিনমজুর

টুডে ডেস্ক Avatar

ক্যাটাগরি : , ,
ঢাকা বোর্ডের শীর্ষ মেধাবী রাজকুমার এখন মাত্র ৫০ টাকার দিনমজুর

ক্যাম্পাস টুডে ডেস্ক


ঢাকা মেডিকেল এবং ঢাকা বোর্ডের শীর্ষ মেধাবী রাজকুমার এখন ৫০ টাকার দিনমজুর। কেমন যেন অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে তাই না। ঘটনাটি অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্য। এমন অবিশ্বাস্য ও সত্য তথ্য প্রকাশ করেছে ‘ডাক্তার প্রতিদিন‘ নামে একটি অনলাইন প্রোটাল। সেই মেধাবীর নাম রাজকুমার শীল। । চেহারাও রাজকুমারের মতই, কোথাও যেন কমতি নে। তার বাড়ি দিনাজপুর জেলার বিরামপুর উপজেলায়।

তিনি ঢাকা বোর্ড থেকে বিজ্ঞান বিভাগে সম্মিলিত মেধাতালিকায় নিজের যোগ্যতায় করে নিয়েছিলেন উচ্চতম স্থান। সুযোগ পেয়ে ভর্তি হয়েছিলেনও ঢাকা মেডিকেল কলেজে। এক কথায় বলা যেতে পারে তিনি মেধাবীদের রাজা। কিন্তু দুঃখের বিষ্য স্বাস্থ্য বিড়ম্বনায় আজ তিনি মাত্র ৫০ টাকার দিনমজুর। বাবা পেশায় নাপিত হলেও চারজন ছেলের একজন বাদে কাউকেই সেই পেশায় আসতে দেননি।

আসুন জেনে নিই অদম্য মেধাবী রাজকুমার শীলের জীবন কাহিনি।

২য় প্রফেশনাল পরীক্ষায় ফার্মাকোলজিতে অ-কৃতকার্য হওয়ার পর ২য়বার পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি। তারপর থেকি তিনি মানসিক রোগের রোগী। সঠিক চিকিৎসা পান নি। এজন্যই হয়তো তার এই হাল। আজ তার নামে আগে যুক্ত হতো ডাক্তার। অর্থাৎ সকলে ডাকত ডা. রাজকুমার শীল।

এমন কি তিনি হতে পারতেন উপ-মহাদেশ খ্যাত চিকিৎসক। ভাগ্যের পরিক্রমায় তিনি আজ কাজ করছেন এক ভুষি কারখানায়। তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের (ঢামেক) কে-৪০ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। রাজ কুমার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের কে-৪০ (k-40) ব্যাচের বলে ডিএমসি’র চিকিৎসকরা আইডেন্টিফাই করেছেন।

“আমাদের বন্ধু রাজকুমার শীল” নামের শিরোনামে ডা. বেলায়েত হোসেন ঢালীর সংগৃহীত লেখা একটি সংগৃহীত লেখা থেকে ঘটনার বিস্তারিত জানা যায়। লেখাটিতে বলা হয়েছে,

আনুমানিক দুপুর ১ টা বেজে ৪৫ মিনিট। স্থান: বহিঃবিভাগ, বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, দিনাজপুর। আমরা কয়েকজন মেডিকেল অফিসার ডিউটি রুমে আছি। রোগী আসা প্রায় শেষের দিকে। এমন সময় প্রায় ৭০ বছর বয়সী একজন মহিলা আসলেন। সাথে ৪৮ আর ৫২ বছর বয়সের দুজন ছেলে। কি সমস্যা জিজ্ঞেস করায় হাতের কাগজগুলো এগিয়ে দিয়ে বললেন, প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য দরখাস্ত করবেন ছেলের জন্য। অনেক কাগজের সাথে পাবনা মানসিক হাসপাতালের ২টি ছাড়পত্র পেলাম। প্রথমে বুঝতেই পারছিলাম না, কোন ছেলে রোগী।

পরে ভদ্রমহিলা বুঝিয়ে বললেন, তার দুই ছেলের জন্যই দরখাস্ত করবেন। ২ জনেরই একই অসুখ। দুইজনের মধ্যে একজনের ন্যাশনাল আইডি কার্ড এর সই দেখে কিছুটা আশ্চর্য হলাম। নাম লেখা রাজকুমার শীল। হাতের লেখাটা কেন যেন তার চেহারার সাথে মিলছে না। সুন্দর লেখা। জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কতদূর পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন। বললেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র ছিলাম। নিজের কান কে বিশ্বাস হচ্ছে না। একে একে উনার সব কিছু বললেন। কে-৪০ ব্যাচের ছাত্র ছিলেন।ঢাকা কলেজ শেষে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হয়েছিলেন। দ্বিতীয় প্রফেশনাল পরীক্ষায় ফার্মাকোলজিতে ফেল করে পরে কয়েকবার পরীক্ষা দিয়েছিলেন।

তারপর মানসিক অসুস্থতার (সিজোফ্রেনিয়া) জন্য বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ ছিলেন ১৪/১৫ বছর। সে সময় একটি কারখানায় কাজ করতেন। ১ বছরের মত পাবনা মানসিক হাসপাতালে ভর্তিও ছিলেন। প্রাথমিক ও জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় বৃত্তিও পেয়েছিলেন, বললেন তার মা। কথা বার্তায় ও বেশ প্রকৃতস্থ মনে হল। নিয়মিত ওষুধ খেয়ে এখন আগের তুলনায় বেশ ভাল আছেন বলে জানালেন। মেডিকেলের পড়াশোনার ও কিছু বিষয় উনার এখনো মনে আছে।

অনুমতি নিয়ে এক সময়ের এই মেধাবী মানুষটির ছবি তুললাম। কে-৪০ ব্যাচের আমার শ্রদ্ধেয় একজন স্যারের ছবি দেখিয়ে বললাম চিনতে পারেন কিনা? মাথা দোলালেন। হয়ত কিছুটা চিনতে পেরেছেন। মনে করার চেষ্টা করলেন। উনার মা ও ছেলের ক্লাসমেট এর ছবি দেখলেন। আবেগাপ্লুত হয়ে পড়লেন। কে জানে, সুস্থ থাকলে হয়ত মেধাবী এই রাজকুমার হয়ে উঠতেন স্বনামধন্য ডা.রাজকুমার। চিকিৎসা জগতে হয়ে উঠতেন ডাক্তারদের সম্রাট।

একজন ভাগ্যবিড়ম্বিত এবং আর্থিকভাবে অসহায় মেধাবী ছাত্রের এমন পরিণতি মেনে নেওয়ার মত নয়।তার মা পার্বতী রাণী শীল জানিয়েছেন, প্রাথমিক ও জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় বৃত্তি পেয়েছিল রাজকুমার। অসুস্থতার পর বর্তমানে সে কথাবার্তায় কিছুটা স্বাভাবিক। নিয়মিত ওষুধ খেয়ে আগের তুলনায় অনেকটা ভালো। রাজকুমারের আরেক ভাই একই রোগে আক্রান্ত। রাজধানীর তিতুমীর কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। তবে অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় স্নাতক সম্পন্ন করতে পারেননি তিনি।

এভাবেই চলছে মেধাবী রাজকুমার শীল মানুষটির জীবন।

সংবাদটি শেয়ার করুন
fb-share-icon
Tweet