তরুণদের চোখে বঙ্গবন্ধু যেমন

তরুণদের চোখে বঙ্গবন্ধু যেমন

তাজমিন নাহার


কবি নির্মলেন্দু গুন বলেছেন, ‘কে রোধে তাহার বজ্র কণ্ঠবাণী? গনসূর্যে মঞ্চ কাপিয়ে কবি শোনালেন তার অমর কবিতাখানি।’;পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো কোনো দেশে এমন দু একজন ক্ষণজন্মা পুরুষের আবির্ভাব ঘটে যাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সে দেশের মানুষের সৌভাগ্যের দ্বার উন্মোচন করে দেয়। তারা পরাধীন দেশবাসীর জীবনে মুক্তি এনে দেন, দূর্যোগের ঘনঘটা দূর করে তাদের হাতে স্বাধীনতার সূর্য পতাকা উপহার দেন।

আমাদের দেশের এরূপ একজন সংগ্রামী পুরুষের কথা আমাদের চেতনায় মিশে আছে, মিশে আছে আমাদের রক্ত কণিকায়। তিনি হলেন বাঙালি জাতীর আলোর দিশারী, স্বপ্নের ফেরিওয়ালা, স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

স্বপ্নবাজ এই মানুষটি গোপালগঞ্জ জেলার মধুমতী তীরবর্তী টুঙ্গিপাড়া গ্রামে শেখ লুৎফর রহমান ও সায়েরা খাতুনের ঘর আলোকিত করে ১৭ মার্চ, ১৯২০(বাংলা ২০ চৈত্র, ১৩৫৯) জন্মগ্রহণ করেন। তিনি গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। ১৯৪২ সালে মেট্রিক, ১৯৪৪ সালে আইএ এবং ১৯৪৭ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাসে বিএ পাশ করেন। একই বছর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাবে ভর্তি হন।

বাঙালি,বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ শব্দ তিনটি একই সুত্রে গাথা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল নেতৃত্ব দেন তিনি। তার সারাজীবনের কর্মকাণ্ড, আন্দোলন সংগ্রাম নির্দেশিত হয়েছে বাঙালি জাতির মুক্তির লক্ষ্যে। এই লক্ষ্য নিয়ে তিনিন১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগ এবং ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হন।

বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী ইতিহাস বিকৃতি থেকে রক্ষা করেছে: প্রধানমন্ত্রী

১৯৪৮-১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তিনি বলিষ্ঠ ভুমিকা পালন করেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় থেকেই বঙ্গবন্ধু তরুনদের কাছে জনপ্রিয় ছিলেন। তারুণ্যের ক্ষোভ এবং দ্রোহের সঙ্গে তিনি সংযোগ ঘটাতে পারতেন। তরুণদের ভাবনায় তিনি মিশে যাওয়ার ক্ষমতা রাখতেন। ১৯৫৪ সালে মুসলিম লীগের পতন ঘটে বঙ্গবন্ধুর ডাকে উদ্ধুদ্ধ হয়ে তরুন সমাজের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমেই।

১৯৫৮ সালে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য তিনিই আহ্বান জানান তরুনদের। বাঙালি জাতির ম্যাগনাকার্টা বা মুক্তির সনদ ৬ দফানকর্মসূচীসহ ষাটের দশকে যে আন্দোলন লগুলো পাকিস্তানি সেনাশাসনের ভিত্তি নরিয়ে দিয়েছিল তা তরুণ সমাজের ই কীর্তি।

১৯৬৯ এর গনঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ এর নির্বাচনে নজিরবিহীন বিজয় এ সবই সম্ভব হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর দক্ষ নেতৃত্ব গুনের জন্য। ২৩ ফেব্রুয়ারী, ১৯৬৯ বঙ্গবন্ধু উপাধি লাভ করেন। ৭ মার্চ,১৯৭১ রেসকোর্স ময়দানের বঙ্গবন্ধুর সেই জ্বালাময়ী ভাষণ ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,এবারে সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’ যা বাঙালীর রক্তে আগুন ধরায়, বিজয়ের নেশায় মত্ত করে তোলে।

বঙ্গবন্ধুর ছবি অবমাননা ঘটনায় নোবিপ্রবি শিক্ষার্থী বহিষ্কার

ইউনেস্কো ৭ ই মার্চের ভাষণকে ‘ডকুমেন্টারি হেরিটেজ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম এই ভাষণটি ১২টি ভাষায় অনূদিত হয়। যুদ্ধ -বিধস্ত এই দেশকে ঢেলে সাজানোর কাজ হাতে তুলে নিয়েছিলেন তিনি। সোনার বাংলা গড়তে ব্যাস্ত থাকাকালীন এই বাংলার মাটিতেই ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫ অপশক্তির হাতে তার জীবনাসান ঘটে।

তরুনদের সাথে বঙ্গবন্ধুর অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল। বঙ্গবন্ধুর আকর্ষণীয় ব্যাক্তিত্ব, তার বাগ্মিতা, মানুষের প্রতি নিঃস্বার্থহীন ভালোবাসা, সহজেই মানুষের সাথে মেশা, সাহসীকতা প্রভৃতি গুনাবলী তার দিকে তরুণদের আকৃষ্ট করতে বাধ্য করে। ৭ই মার্চের ভাষণ,তার আঙুলি হেলানো বজ্রকন্ঠ, শব্দ চয়ন ভীষণ শিহরিত করে তরুনদের।৷ তাইতো তরুন প্রজন্ম ধারণ করতে চায় বঙ্গবন্ধুকে।

বঙ্গবন্ধু নিজেও বিশ্বাস করতেন তরুণরাই দেশের মুল চালিকাশক্তি। তিনি তরুণদের সংগ্রামের বাণী শিখাতেন, রাজনীতি ও সাহিত্যর প্রতি উদ্ধুদ্ধ করতেন, অন্যায়ের কাছে আপোষহীন হতে শিখিয়েছেন, শিক্ষা ও শিক্ষার আদর্শগুলো জীবনে ধারন কর‍তে বলেছেন। অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও কারাগারের রোজনামচায় বঙ্গবন্ধু তারুণ্যের প্রতি বিশ্বাস এবং তার নিজের তরুণ জীবনের সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরেছেন।

ঢাবির বঙ্গবন্ধু চেয়ারের অধ্যাপক ড.আতিউর রহমানের নেতৃত্বে তারুণ্যের চোখে বঙ্গবন্ধু কেমন সে বিষয়ে একটি জরিপ করা হয়। যাদের বয়স ১৫-৩০ এবং এদের মধ্যে ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী। এবিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ৭৯ শতাংশ বলেছেন, তারা মনে করেন ৭ ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ ও দ্ব্যর্থহীন বক্তব্য পুরো জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে উদ্ধুদ্ধ করেছিল এবং স্বদেশ স্বাধীন হয়েছিল। ৮১ শতাংশ মনে করেন বঙ্গবন্ধুর নিঃস্বার্থ নেতৃত্বের কারনেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল।

বঙ্গবন্ধুর সাম্যবাদী ভাবনা, উদার রাজনৈতিক দৃষ্টি, শোষনহীন সমাজ গড়ার চেতনা তরুন সমাজকে প্রলুব্ধ করে। তার মানবিকতা এবং সাধারণ মানুষের প্রতি সহমর্মিতার কারনেই তিনি হতে পেরেছেন বাংলার তরুণদের স্বপ্ন সম্রাট।

২০১৪ সালে বিবিসির একটি জরিপে বঙ্গবন্ধু ‘সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালী’ হিসেবে সর্বাধিক ভোট প্রাপ্ত হন। তার এ অবদান বাঙালি জাতি কখনো ভুলবেনা। তাইতো আনন্দ্য সরকার রায় বলেছেন, ‘যতকাল রবে পদ্মা, মেঘনা, গৌরি বহমান,
ততকাল রবে শেখ মুজিব তোমার অবদান।’

তরুনদের চিন্তা ও মননে বঙ্গবন্ধুর দৃঢ় অবস্থান তৈরীর জন্য দরকার বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান। সেক্ষেত্রে ব্যাক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ভাবে উদ্যোগ নিতে হবে। তাহলেই তৈরী হবে ঘরে ঘরে শেখ মুজিব। তরুণেরাই পারে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বুকে লালন করে সোনার বাংলা গড়তে যেখানে মা হাসবে আর শিশুরা খেলবে।

লেখক- শিক্ষার্থী, আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *