বুধবার, ২২ মার্চ ২০২৩, ০৩:০৬ অপরাহ্ন

তিতুমীরের এমন দৃশ্য কেউ দেখেনি!

  • আপডেট টাইম বুধবার, ১ এপ্রিল, ২০২০, ১০.১২ পিএম

আরাফাত হোসেন


রাত পেরিয়ে ভোর হতেই দেখা যেত কতগুলো ছেলে মাঠে ফুটবল খেলছে। এদের কেউ কেউ আবার শরীর চর্চায় সময় কাটাচ্ছে। মধ্য বয়সী কিছু লোক মাঠের চারপাশে হাঁটাহাঁটি করছে। সময় গড়িয়ে সাতটা পার হতে না হতেই শীট, বই, ব্যাগ হাতে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা শুরু হয়ে যেত।

আড্ডার ফুলঝুরিতে মুখরিত হয়ে যেত গোটা ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণ। এখন সবই যেন স্বর্ণালি অতীত! বলছিলাম রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী সরকারি তিতুমীর কলেজের কথা। করোনাভাইরাস আতংকে এমন সুনসান পরিবেশ বিরাজ করছে কলেজটিতে।

যে মানুষটি সকাল নয়টার ক্লাসে উপস্থিত হওয়ার জন্য সকাল থেকেই তাড়াহুড়ো করত সে আজ ঘরে আবদ্ধ। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলেও বাস থেকে নামার জন্য তাড়াহুড়া করতে দেখা যায়না কোন শিক্ষার্থীকে। কলেজের মেইন গেটের সামনে নেই কোনো কোলাহল, নেই হাত উঁচিয়ে বাস থামানোর প্রতিযোগিতা।

দেশে করোনা ভাইরাসের উদ্ভূত পরিবেশ মোকাবিলায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বন্ধ হয়েছে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যার ফলে লোকারণ্য ক্যাম্পাসে ভর করেছে শূন্যতার হাহাকার। এটি কোন সাধারণ ঈদ বা পূজার ছুটি নয়, নয় কোন ঋতুর ছুটি। এটি চীনের উহান প্রদেশ থেকে বিশ্বের ২০০ টি দেশে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় বাধ্যতামূলক সাধারণ ছুটি। যার মেয়াদ ক্রমশ বেড়েই চলেছে। ইতিমধ্যেই দ্বিতীয় দফায় ছুটি বেড়েছে, শঙ্কা রয়েছে ঈদ পর্যন্ত ছুটির মেয়াদ বাড়ানোর।

শেখ রাসেল পুষ্প কানন কিংবা মাঠে ক্রিকেট বা ফুটবল নিয়ে দাপিয়ে বেড়ানো তরুণদেরও কেউ নেই অনুশীলনে। খা খা করছে পুরো মাঠ। গিটারের সুরে যারা মাতিয়ে রাখতো শহীদ মিনার কিংবা গোল চত্ত্বর, তাদের আজ দেখা নেই চিরচেনা এই ক্যাম্পাসে।

খেলার মাঠের হইহই উচ্ছ্বাস, বিজয় বিতর্ক মঞ্চের কলতান, ছাত্রলীগ চত্বরের ঝাঝালো স্লোগান, গোলচত্বরের মুখরিত পরিবেশ, বেলায়েত চত্বরের নীরব আড্ডা, শাকিল চত্বরের সিঙাড়া সমুচা কিংবা গোটা ক্যাম্পাসের মুখর থাকা কলরব। সবই যেন আজ নিস্তব্ধ। গোটা ক্যাম্পাস যেন হাহাকার করছে স্বরূপে ফিরে যেতে!

সবুজাভ ক্যাম্পাসের ফলের গাছগুলোতে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর মধুমাসের আগমনী বার্তা নিয়ে প্রচুর মুকুল ধরেছে। তুলনামূলকভাবে বেশি ফলন আশা করায় যায়। কিন্তু কতবড় হলো সেই আম! নাকি ঝড়ে পড়ছে আমের মুকুল! আজ তা বুঝবার উপায় নেই!

চিরচেনা সেই ওভারব্রীজের এখন আর কেউ আড্ডায় মেতে উঠে না! প্রেমিক প্রেমিকারা কেউই তার প্রিয়তমার অপেক্ষা করে থাকেনা, কারণ তারা আজ স্বেচ্ছায় গৃহবন্দী। অজানা কালের পর আবার দেখা মিলতে পারে প্রেমিক যুগলের।

প্রাণের প্রিয় এই ক্যাম্পাস থেকে, অসময়ে এবারই প্রথম এতোটা সময় দূরে থাকতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। মন না মানলেও থাকতে হচ্ছে ক্যাম্পাস ছেড়ে। কিছুই যে করবার নেই আমাদের, সৃষ্টিকর্তা সহায় হোন। পরিশেষে কবি গুরুর ভাষায় বলতে হয়- ‘যেথাই থাকি যে যেখানে বাধন আছে প্রাণে প্রাণে’।

জগত থেকে অচিরেই কেটে যাক করোনার কালো মেঘ, মুক্তি পাক ধরা মুক্তি পাক তিতুমীর ক্যাম্পাস। চিরচেনা এই রঙিন সবুজ ক্যাম্পাস আবার কলকলিয়ে উঠুক শিক্ষার্থীদের কলতানে।

The Campus Today YouTube Channel

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazar_creativenews_II7
All rights reserved © 2019-20 The Campus Today