দেশের প্রথম পেশাদার নারী আলোকচিত্রী সাইদা খানম আর নেই
![দেশের প্রথম পেশাদার নারী আলোকচিত্রী সাইদা খানম আর নেই](https://thecampustoday.com/wp-content/uploads/2020/08/images-2.jpeg)
একুশে পদক বিজয়ী বাংলাদেশের প্রথম পেশাদার মহিলা ফটোগ্রাফার সাইদা খান আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। সোমবার দিবাগত রাত পৌনে ৩টার দিকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
সাইদা খানমের স্বজন নিশাত জাহান রানা মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে এ আলোকচিত্রী বার্ধক্যজনিত জটিলতায় ভুগছিলেন।
১৯৩৭ সালের ২৯ ডিসেম্বর পাবনায় জন্ম। মায়ের নাম, নাছিমা খাতুন। আর বাবা আব্দুস সামাদ খান কাজ করতেন শিক্ষা বিভাগে।১৯৪৯ সালে বারো বছর বয়সে মেজ বোনের কিনে দেওয়া ক্যামেরায় ছবি তোলা শুরু। আর পিছনে ফিরে তাকান নি তিনি। পাকিস্তান আমল থেকে আশির দশক পর্যন্ত একটানা ত্রিশ বছরেরও অধিক সময় বাংলাদেশে একমাত্র মাত্র নারী আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ করেছেন তিনি।
নারী হিসেবে নিজের সামর্থ্যকে ডিঙ্গিয়েছেন, ভেঙ্গেছেন প্রথা, সবকিছু ছাপিয়ে তিনি চেয়েছেন তাঁর ক্যামেরায় সময়কে ধরে রাখতে, মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করতে। তাই তাঁর ক্যামেরায় এসেছে অনেক বিরল ছবি – ১৯৭১ সালে যুদ্ধ শুরু হবার ঠিক আগে আগে আজিমপুরে অস্ত্র হাতে প্রশিক্ষণ রত নারীদের ছবি তোলেন তিনি। এছাড়া ১৬ই ডিসেম্বর তৎকালীন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে পাকিস্তানীরা গোলাগুলি শুরু করলে তিনি ছবি তুলতে যান ঝুকি নিয়ে যদিও অতিরিক্ত গোলাগুলির কারণে ছবি তুলতে পারেননি। তবে যুদ্ধের সময়ের প্রচুর ছবি তিনি তুলেছেন।
এছাড়াও তার ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দি হয়েছেন ইতিহাসের সেরা ব্যক্তিত্বরা – মাদার তেরেসা, ইন্দিরা গান্ধী, রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী কণিকা বন্দোপধ্যায়, সত্যজিৎ রায়, মওলানা ভাসানী, বেগম সুফিয়া কামাল, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, রানী এলিজাবেথ, চন্দ্র জয়ী নিল আর্মস্ট্রং, এডুইন অলড্রিন, মার্শাল টিটো, অড্রে হেপবার্ন, এবং অবধারিতভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
দেশের বাইরে ভারত, জাপান, ফ্রান্স, সুইডেন, পাকিস্তান, সাইপ্রাস ও যুক্তরাষ্ট্রে তার তোলা ছবির বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী হয়। জাপানে ইউনেসকো অ্যাওয়ার্ড, অনন্যা শীর্ষ দশ পুরস্কার, বেগম পত্রিকার ৫০ বছর পূর্তি পুরস্কার, বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক সোসাইটির সম্মানসূচক ফেলোসহ বিভিন্ন স্বীকৃতি পান তিনি।
ছবি তোলার পাশাপাশি লেখালেখি করতেন তিনি। তার উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘ধূলোমাটি’, ‘স্মৃতির পথ বেয়ে’, ‘আমার চোখে সত্যজিৎ রায়’। তিনি বাংলা একাডেমি ও ইউএনএবির আজীবন সদস্য ছিলেন।
ছবি: সংগৃহীত