শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩, ০১:১২ পূর্বাহ্ন

নারী ভাষা সংগ্রামীদের যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়নি

  • আপডেট টাইম শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২০, ৫.১৪ পিএম

নাসরাতুল ফেরদৌস তিতলি


১৯৪৭সালে জিন্নাহর দ্বি-জাতি তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে ভারত এবং পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন দেশের জন্ম হয়।পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটিতে পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে ধর্মীয় মিল ছাড়া বাকি সবকিছুতে ছিল অমিল এবং বৈষম্য। বৈষম্যের এই ধারাবাহিকতায় শুরু হয়েছিল পূর্ব পাকিস্তানের উপর শাসন,শোষণ এবং নির্যাতন যার প্রথমটিতে আঘাত হানে মাতৃভাষার উপর।

পূর্ব পাকিস্তানের ৫৬শতাংশ জনগণের মুখের ভাষা বাংলা হলেও পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকেরা চেয়েছিল একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদে পূর্ব বাংলার প্রতিনিধি ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত উর্দু ও ইংরেজির সঙ্গে বাংলাকেও গণপরিষদের অন্যতম ভাষা হিসেবে ব্যবহারের প্রস্তাব উত্থাপন করেন কিন্তু তা অগ্রাহ্য করা হয়। ১৯৪৮ সালে গঠিত রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্যদের মধ্যে বেশকিছু নারী ভাষা সংগ্রামীরাও ছিল যাদের কথা ইতিহাসে যথাযথভাবে প্রকাশিত হয়নি।


“কোন কালে একা হয়নি ক’ জয়ী পুরুষের তরবারি,
প্রেরণা দিয়াছে, শক্তি দিয়াছে বিজয় লক্ষ্মী নারী।”


১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি খাজা নাজিমুদ্দিনের বক্তব্যের পর ৩১ জানুয়ারি ঢাকা বার লাইব্রেরিতে একটি সর্বদলীয় সভা আহ্বান করা হয়। সেখানে তৎকালীন ইডেন কলেজের ছাত্রী মাহবুবা খাতুন বক্তৃতা করেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি স্বীকার করিয়ে নেয়ার জন্য প্রয়োজন হলে মেয়েরা তাদের রক্ত বিসর্জন দেবে।’ ভাষা আন্দোলনকে ছড়িয়ে দিতে ১৯৫২ সালের ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি ‘পতাকা দিবস’ পালিত হয়। এ সময় প্রায় ৫০০ পোস্টার লেখার দায়িত্ব দেয়া হয় নাদিরা বেগম ও শাফিয়া খাতুনকে। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য ছাত্রীদের নিয়ে সে দায়িত্ব পালন করেন।

৫২-এর ২১ ফেব্রুয়ারি সর্বাত্মক হরতাল পালনের জন্য দু’সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ব্যাপক প্রস্তুতি চলে। এতে মেয়েদের বিরাট অংশগ্রহণ ছিল। লায়লা সামাদ, শামসুন নাহার, শাফিয়া খাতুন, সারা তৈফুর, রওশন আরা বাচ্চু, সুফিয়া আহমেদ, রওশন আরা রহমান, হালিমা খাতুন, কায়সার সিদ্দিকী প্রমুখ ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বকশীবাজার কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা কলেজ), মুসলিম গার্লস স্কুল, বাঙলা বাজার গার্লস স্কুল, কামরুন্নেসা গার্লস স্কুলে গিয়ে মেয়েদের আন্দোলনের জন্য উদ্বুদ্ধ ও সংগঠিত করেন।

২১ ফেব্রুয়ারি আমতলায় গাজীউল হকের সভাপতিত্বে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্তের পর ছাত্রদের কয়েকটি দলে বের হলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এরপর মেয়েদের একটি দল বের হয় যেখানে ছিলেন সুফিয়া আহমেদ, রওশন আরা বাচ্চু, শাফিয়া খাতুন, শামসুন্নাহার, সারা তৈফুরসহ বেশ কয়েকজন। পুলিশ তাদের ওপরও লাঠিচার্জ করে।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জে ধর্মঘট পালিত হয়। নারায়ণগঞ্জে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ নাম মমতাজ বেগম। তাকে পুলিশি নির্যাতন থেকে জেলে পর্যন্ত যেতে হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি খুলনায় করনেশন গার্লস কলেজের ছাত্রীরা স্কুলের দেয়ালে বাংলা ভাষার পক্ষে পোস্টার লাগান।

সিলেটে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে বেগম জোবেদা রহিম চৌধুরী, সৈয়দা সাহার বানু চৌধুরী, সৈয়দা লুৎফুন্নেছা বেগম, সৈয়দা নজিবুন্নেছা বেগম, রাবেয়া খাতুনের নাম উল্লেখযোগ্য। চট্টগ্রামের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের সঙ্গে মিরা সেন, জাহানারা রহমান, জওশন আরা রহমান, প্রতিভা মুৎসুদ্দি, হোসনে আরা মাক্ষী নামগুলো জড়িয়ে আছে। আন্দোলন-সংগ্রাম থেকে শুরু করে পোস্টার লেখা, লাগানো নানা কার্যক্রমে তারা অংশ নিয়েছিলেন। ভাষা শহীদদের রক্তের বিনিময়ে এবং নারীদের সম্পূর্ণ প্রচেষ্টার ফলাফল আমাদের বাংলা ভাষা। কিন্তু ইতিহাসে সেই সকল ভাষা সংগ্রামী নারীদের তাদের যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়নি।


লেখকঃ শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ এবং মুক্তিযুদ্ধ অধ্যয়ন বিভাগ,
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

The Campus Today YouTube Channel

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazar_creativenews_II7
All rights reserved © 2019-20 The Campus Today