নিয়ম না মেনে তৈরী হচ্ছে জুনিয়র কনসালটেন্টদের পদোন্নতির তালিকা

নিয়ম না মেনে তৈরী হচ্ছে জুনিয়র কনসালটেন্টদের পদোন্নতির তালিকা

ওয়াহিদ তাওসিফ মুছা

একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য দেশটির স্বাস্থখাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়ন এবং নিয়মতান্ত্রিক দক্ষ ব্যবস্থাপনাই বিশ্বের দরবারে দেয় এক অনন্য মর্যাদার আসন৷ কিন্তু সম্প্রতি স্বাস্থ্য খাতের জুনিয়র কন্সালটেন্ট পদে পদোন্নতির তালিকা ক্রম অনুযায়ী প্রকাশ করা হয়েছে।

ওই তালিকায় বহু অসংগতি রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডার এসোসিয়েশন সহ বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের বেশ কয়েকটি ব্যাচ। তালিকায় নিয়ম না মেনেই সাজানো হয়েছে পদোন্নতির ছক এবং নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই সংযুক্ত করা হয়েছে এডহক কর্মকর্তাদের তালিকা বলে অভিযোগ তাদের৷

বিসিএস পদোন্নতির জন্য পরীক্ষা বিধিমালা, ২০১৭ মোতাবেক, ক্যাডারভূক্ত সিনিয়র স্কেল পদে পদোন্নতির জন্য বিভাগীয় পরীক্ষা, বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ, চাকরী স্থায়ীকরণ সহ সিনিয়র স্কেল পদোন্নতি পরীক্ষায় পাশ অথবা অব্যাহতিপ্রাপ্ত হওয়া বাধ্যতামূলক।

সুতরাং, উপর্যুক্ত যোগ্যতাসমূহ অর্জন ব্যতিত ক্যাডার পদে অন্য কোনো সেবার কর্মচারীদের পদোন্নতির সুযোগ নেই। নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারী (জেষ্ঠ্যতা ও পদোন্নতি) বিধিমালা, ২০১১ এর ২। (ঙ) মোতাবেক “পদোন্নতির পদ” অর্থ সংশ্লিষ্ট নিয়োগবিধির বিধান অনুযায়ী যে উচ্চতর পদটি পদোন্নতির জন্য নির্ধারিত তাকে বোঝানো হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১ম শ্রেণির (নন-ক্যাডার মেডিকেল) কর্মকর্তা নিয়োগ বিধিমালা, ২০১০ (এস.আর.ও নং ৪৫-আইন/২০১০) এর শিডিউল- ২।

(খ) শিডিউলভূক্ত পোস্ট বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, উক্ত নিয়োগবিধিতে তফশিলভূক্ত পদ রয়েছে, সহকারী সার্জন (নন-ক্যাডার)/মেডিকেল অফিসার (নন-ক্যাডার)/সহকারি রেজিস্ট্রার (নন-ক্যাডার)/সহকারি রেজিস্ট্রার, ডেন্টাল কলেজ (নন-ক্যাডার)/লেকচারার, ডেন্টাল কলেজ (নন-ক্যাডার)/ডেন্টাল সার্জন (নন-ক্যাডার)।

এ ব্যতীত আর কোনো উচ্চতর পদ উক্ত শিডিউলে অন্তর্ভূক্ত নাই। অর্থাৎ ক্যাডারভূক্তিকরণ ব্যতিত এটি একটি ব্লক পোস্ট। সুতরাং, পৃথক নিয়োগবিধিমালার অধীনে নিয়োগপ্রাপ্তদের কোনোভাবেই ক্যাডারভূক্ত পদে পদোন্নতি প্রদানের উদ্দেশ্যে সমন্বিত তালিকা প্রণয়নের কোনো বিধিসম্মত উপায় নেই। অর্থাৎ, প্রণীত তালিকায় স্থান প্রাপ্ত এডহক বা প্রকল্পভিত্তিক কর্মকর্তাদের স্থান প্রদান সম্পূর্ণ বেআইনী ও বিধির চরমতম লঙ্ঘন।

বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডার এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে সরকারী নিয়োগ ও পদোন্নতির যথাযথ বিধিবিধান মেনে ওই তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। তাই এই তালিকা নিয়ে তারা আপত্তি জানিয়ে গত ৬ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবের কাছে একটি চিঠিও দিয়েছে। সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. আ ম সেলিম রেজা ও মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে প্রকাশিত তালিকায় ছয়টি অসঙ্গতির কথা তুলে ধরা হয়।

চিঠিতে বলা হয়, বিসিএস নিয়োগ বিধিমালা, ১৯৮১ এর বিধি ২(এফ), শিডিউল-২, পার্ট- ২০ অনুযায়ী জুনিয়র কনসালটেন্ট সহ সমগ্রেডের অন্যান্য প্রশাসনিক পদসমূহ স্বাস্থ্য ক্যাডারের শিডিউলভূক্ত পদ।

ক্যাডারভূক্তি ব্যতীত উক্ত পদগুলোতে কোনোভাবেই অন্য কোনো নিয়োগবিধির আলোকে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের পদোন্নতির বিধিগত সুযোগ নেই। ক্যাডার পদে পদোন্নতির জন্য বিসিএস নিয়োগ বিধিমালা, ১৯৮১ অনুযায়ী ফিডার পদে প্রয়োজনীয় চাকুরিকাল পূর্ণ করা আবশ্যক।

উপর্যুক্ত ১ নং অনুযায়ী জুনিয়র কনসালটেন্ট বা অন্যান্য ৬ষ্ঠ গ্রেড সমমান পদের জন্য ফিডার পদ সহকারি সার্জন বা মেডিকেল অফিসার (ক্যাডার)। সুতরাং, স্বাস্থ্য ক্যাডারভূক্তিকরণ ব্যতীত ক্যাডারের বাইরের কর্মকর্তাদের ফিডার পদে প্রয়োজনীয় চাকুরিকাল অর্জন সম্ভব না বিধায় স্বাস্থ্যক্যাডারভূক্ত ৬ষ্ঠ গ্রেডের পদসমূহে কোনোভাবেই স্বাস্থ্য ক্যাডার ব্যতীত অন্য কোন কর্মকর্তার পদোন্নতির সুযোগ নেই।

এডহকভিত্তিক নিযুক্ত কর্মচারী নিয়মিতকরণ বিধিমালা, ১৯৯৪ এর বিধি ৬ মোতাবেক, উক্ত বিধিমালার আওতায় নিয়মিতকরণকৃত কোনো কর্মচারী পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের কোনো ক্যাডারে অন্তর্ভূক্ত হলে ক্যাডারভূক্তির তারিখ হতে ক্যাডারে তার জেষ্ঠ্যতা গণনা করা হবে এবং ক্যাডারের সর্বশেষ ব্যাচের শেষ কর্মকর্তার নিয়মিতকরণকৃতদের জেষ্ঠ্যতার অবস্থান হবে।

কিন্তু, সূত্রে উল্লেখিত জেষ্ঠ্যতা তালিকা পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, এডহক কর্মকর্তাদের ক্যাডারভূক্তিকরণ ব্যতিতই ২৮ তম বিসিএস এর কর্মকর্তাদের স্থান দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, স্বাস্থ্য ক্যাডারে বর্তমানে ৩৯ তম বিসিএস নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন। বিধি মোতাবেক, অদ্যকার দিবসেও এডহক কর্মকর্তাগণ ক্যাডারভূক্তি হলে তাদের স্থান ৩৯ তম বিসিএস এর শেষ কর্মকর্তার পরে স্থানপ্রাপ্ত হবে।

কিন্তু, সকল বিধিমালাকে উপেক্ষা করে কি প্রক্রিয়ায় ২৮ তম বিসিএস এর পূর্বে এডহক ভিত্তিক কর্মকর্তাদের স্থান দেয়া হয়েছে প্রশ্ন সকলের। উল্লেখ্য যে, বিসিএস জেষ্ঠ্যতা বিধিমালা, ১৯৮৩ এর ৩ (জি) মোতাবেক, পূর্ববর্তী উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্তগণ সর্বদেই পরবর্তী উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তির পূর্বে জেষ্ঠ্যতা পাবেন অর্থে, ২৭ তম বিসিএস এর ঠিক পরেই ২৮ তম বিসিএস স্থান পাওয়ার বিধিগত অধিকারী। পরিষ্কারভাবেই, সূত্রে উল্লেখিত তালিকায় জেষ্ঠ্যতা বিধির লঙ্ঘন করা হয়েছে।

এডহক বা প্রকল্প এর কর্মকর্তাগণকে সকল ধরনের চাকুরীবিধিকে লঙ্ঘন করে ২৮ থেকে পরবর্তী সকল বিসিএস কর্মকর্তার উপরে স্থান দেয়া হয়েছে যা বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডার সহ সকল বিসিএস কর্মকর্তার প্রতি অপমানজনক ও গভীর উদ্বেগজনক ও অন্যান্য মন্ত্রনালয় বা দপ্তরের ক্ষেত্রেও ভ্রান্ত সূত্র সৃষ্টিকারী একটি নথি। সুতরাং, ইহা অবিলম্বে সংশোধন করে বিধি মোতাবেক সংশোধিত তালিকা প্রণয়ন ও প্রকাশ সহ ক্যাডার পদে শুধুমাত্র ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি নিশ্চিত করতে হবে।

তালিকায় উল্লেখিত কলামগুলো বিশ্লেষণে দেখা যায়, একই তালিকায় বিসিএস, এডহক ও প্রকল্প ভিত্তিক কর্মকর্তাদের স্থান দেয়া হয়েছে। (কলাম-৭)। যেহেতু, প্রত্যেক চাকরীজীবীর জেষ্ঠ্যতা স্ব স্ব বিধি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, সুতরাং, একই তালিকায় বিসিএস, এডহক, প্রকল্প ভিত্তিক কর্মকর্তাদের স্থান দেয়া সম্পূর্ণ বিধি বহির্ভূত।

এক্ষেত্রে আবশ্যিকভাবে স্ব-স্ব চাকরীর জেষ্ঠ্যতা বিধি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত কর্মকর্তাদের পৃথক তালিকায় স্থান প্রদান করা একমাত্র বিধিসম্মত পদ্ধতি।

চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, এই করোনা পরিস্থিতির মধ্যে বিসিএস কর্মকর্তাগণ কোনো ছুটি বা প্রধানমন্ত্রীর দেয়া প্রতিশ্রুত প্রণোদনা-প্রাপ্তি ছাড়াই প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে হাসপাতালে নিরবিছিন্ন সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন।

এ মহামারি পরিস্থিতিতে সরকারী সকল বিভাগে নিয়মিত পদোন্নতি হলেও করোনার দোহাই দিয়ে পদোন্নতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে উপযুক্ত বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে, যা প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত ও আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ন্যায় বিচার ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে রচিত স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার পথে বাধা স্বরুপ।

লিখেছেন
ওয়াহিদ তাওসিফ মুছা
শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *