পর্নোগ্রাফির কালো থাবায় জর্জরিত তরুণ-তরুণীরা

পর্নোগ্রাফির কালো থাবায় জর্জরিত তরুণ-তরুণীরা

মাজেদুল ইসলাম


পর্নোগ্রাফি বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় একটা বিষয় বিশেষত ছেলেদের কাছে। পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত নয় এমন ছেলে পাওয়াই মুশকিল, হয়তো হতে পারে ৩% ছেলের মেসেঞ্জার গ্রুপ গুলো খোঁজ করলে দেখা যায় ৯০% পর্ন ভিডিও বা পর্ণ ভিডিও থেকে নেওয়া বিভিন্ন পিকচার।

বর্তমানে ৮২% কিশোর ও তরুণেরা সুযোগ পেলে পর্ণ দেখে এবং ক্লাসে বসেই দেখে ৬২% তরুণেরা। বাংলাদেশে বাজারের মেমোরি কার্ড ডাউনলোডের দোকানগুলোতে প্রতিদিন ২.৫ কোটি টাকার ব্যবসা চলে পর্নোগ্রাফির মাধ্যমে।

পর্নোগ্রাফির কালো ছোবলে জর্জরিত কিশোর,তরুন এমনকি বিবাহিত পুরুষরাও ফলে তাদের ব্যক্তি,বৈবাহিক ও সমাজ জীবনকে পিষিয়ে তুলতেছে!

এখন কথা হলো,পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হচ্ছে কেন কিশোর ও তরুণরা???

ছেলেরা পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হওয়ার আগে সবচেয়ে বড় কারণ হলো ধর্মীয় শিক্ষার অভাব। ছেলেরা কৈশোর বয়সের উদ্দমের সাথে পাল্লা দিয়ে যৌন বিষয়েও আগ্রহী হয়ে পড়ে।আর আমরা জানি, বৈধ যৌন সম্পর্ক বিষয়ে ধর্মীয় পাঠ্যপুস্তক ছাড়া কোথাও তেমন আলোচনা নাই।আর ধর্মীয় পুস্তক গুলো তো আমরা না বুঝেই বেশি পড়ে থাকি

এছাড়াও, সংগদোষের প্রভাবে অনলাইনে পাওয়া সস্তা চটিগল্প ও আস্তে আস্তে পর্নোগ্রাফিতে ঢুকে পড়ি।পর্নোগ্রাফি থেকে আসক্ত হয়ে পড়ি হস্তমৈথুনের মতো ভয়ংকর পাপকর্মে। পর্নোগ্রাফি আর হস্তমৈথুন পরস্পর অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত।

আমরা হস্তমৈথুন বা পর্নোগ্রাফির ফলে (ধর্মীয় শাস্তির বিধান বাদেই দিলাম) সামাজিক ও শারীরিক যে ক্ষতি হয় তা বলার চেস্টা করবো।

আমরা দেখতে পাই -চটিগল্প ও পর্নোগ্রাফিতে ওরাল সেক্স,অ্যানাল সেক্স ও পরিবারের বিভিন্ন মানুষ মা,বোন,চাচী,,,এর মেলামেশার বিবরণ দেওয়া হয় নাউজুবিল্লাহ। এসব পড়া ও দেখার পর কিশোর ও তরুণরা অকল্পনীয় সেক্স ফ্যান্টাসিতে ভোগে যেগুলো বাস্তবতার সাথে মানানসই না।

তাছাড়া, বিবাহ জীবনে ও পর্নে বুদ থাকার ফলে নিজের বিবাহিত বউকেও পর্নোগ্রাফির মেয়েদের সাথে তুলনা করার চেস্টা করে এবং পর্নের অভিনেতা, অভিনেত্রীদের বিভিন্ন অ্যাংগেলে ভিডিও করে এসব তৈরী করা হয় এবং ছোট্ট অর্গানকে বড় করে দেখানো হয় একজন পর্ণ আসক্ত মানুষ চিন্তাও করতে পারে না।

তাছাড়া এসব পর্নআসক্তরা তাদের স্ত্রীকেও ওরাল বা অ্যানাল সেক্স করার জন্য বাধ্য করে এবং ভাবে তার স্ত্রীও বুঝি পর্নের অভিনেত্রীর মতো কামুক টাইপের।যেটা একটা স্বাভাবিক মেয়ে খুব কমেই করে/করবে ফলে তৈরী হয় দাম্পত্য জিবনে অশান্তি।

আমরা পর্নগ্রাফি দেখে ভাবি এসব বুঝি সুস্থ্য মানসিকতার ও বৈধ সম্পর্ক কিন্তু এসবের আড়ালে আছে অনেক ভয়ংকর ও জঘন্যতম ঘটনা।এসব পর্নোগ্রাফির অভিনেতা/অভিনেত্রীদের প্রায় সবাই মাদকাসক্ত এবং মেয়েদের অনেককেই জোরপূর্বক এসব করাতে বাধ্য করে এবং প্রায় সবাই যৌনরোগে আক্রান্ত।

আমরা ম্যাক্সিমাম কৈশোর ও তরুণরা এসব দেখে দেখে ও ধর্মীয় শিক্ষা না থাকার দরুন এবং বড়দের সাথে ফ্রাংক্লি শেয়ার করতে না পারায় সাময়িক উত্তেজনা কমাতে হস্তমৈথুনের মতো ভয়ংকর ও জঘন্যতম কাজে লিপ্ত হই ও আস্তে আস্তে আসক্ত হয়ে পারি।পর্নোগ্রাফি দেখে এমন ছেলেরা মিনিমাম মাসে ৫ বার হস্তমৈথুন করে যা শরীর ও মানসিক অস্বস্তিতে ভোগার অন্যতম কারণ।

হস্তমৈথুন করলে আমরা জানি, ঐ দিন আর অন্যান্য কাজে মনোনিবেশ করাই যায় না ঠিকমতো।আর হস্তমৈথুনের ফলে দ্রুত বীর্যপাত হওয়ার লড়াইয়ে আমরা নেমে পড়ি ফলে আমাদের ব্রেইনে এরকমটাই সেটআপ হয়ে পড়ে।তাই দাম্পত্য জীবনেও পুরুষরা দ্রুত বীর্যস্খলনের চেষ্টায় থাকে ও হয়ে যায় ফলে হয়তো স্ত্রীর পুরোপুরি চাহিদা মিটানো সম্ভব হয় না। এর ফলেও তৈরী হয় দাম্পত্য জীবনে কলহ।

তখন এসব পুরুষরা বৈধ মেলামেশার চেয়ে হস্তমৈথুনকেই বেছে নেয়। তাছাড়া,এসব পর্নোগ্রাফি-তে অাসক্ত হওয়ার ফলে মেয়েদের শুধুমাত্র ভোগ্যপণ্য মনে হয়।যার দরুণ পুরুষ ও নারীর সামাজিক মর্যাদার ও ক্ষুন্ন হয়।পরস্পরের মধ্য সমঝোতার বিস্তর ফাটল দেখা যায়।

তাই সম্মানিত ভাইসকল,যারা আমরা পর্নোগ্রাফি ও হস্তমৈথুনের কালো থাবায় জড়িয়ে পড়েছি,,আমরা সবাই এর কবল থেকে বেরিয়ে আসার চেস্টা করি। মানুষ চেস্টা করলে সব পারে এবং ধর্মীয় পাঠ্যপুস্তক পাঠ করে নিজের মনকে শান্ত করবেন।
পর্নোগ্রাফি কখনোই সুস্থ মানসিকতার যৌন সম্পর্ক হতে পারে না।

পর্নোগ্রাফির কবল থেকে বেরিয়ে আসার সহজ পথ হলো,ছেলেদের পুরুষ শিক্ষক ও মেয়েদের মহিলা শিক্ষকের মাধ্যমে পর্ণোগ্রাফি, হস্তমৈথুন সহ যৌন বিষয় সমন্ধে আলোচনা করে কৈশোর বয়সেই এসবের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করা।

জাগো হে নবীনরা এবং হুংকার তুলো পর্ণোগ্রাফি ও হস্তমৈথুনের বিরুদ্ধে।এ নীরব ঘাতক থেকে সবাই মুক্ত হওয়ার চেস্টা করি ও পারলে তরুণরা বিয়ের মাধ্যমে বৈধ সম্পর্কে লিপ্ত হই।

পর্নোগ্রাফির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টি করি এবং আগামীর নবীনদের যেন পর্নোগ্রাফি মুক্ত বাংলাদেশ উপহার দিতে পারি। জয় বাংলা।

লেখক: মাজেদুল ইসলাম, শিক্ষার্থী, শেকৃবি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *