প্রেমিকযুগলকে ধরতে গিয়ে গণপিটুনিতে ৩ পুলিশ আহত

প্রেমিকযুগলকে ধরতে গিয়ে গণপিটুনিতে ৩ পুলিশ আহত

এ, বি, এম আতিকুর রহমান বাশারঃ প্রেমের ঘটনায় পালিয়ে যাওয়া দেবীদ্বারের প্রেমিক যুগলকে বুড়িচং উপজেলা থেকে উদ্ধারে আসা পুলিশের লাথি খেয়ে আহত প্রেমিক অচেতন হয়ে পড়ে। প্রেমিকের মৃত্যু হওয়ার গুজবে ৩ পুলিশকে গনপিটুনি দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে স্থানীয়রা।

পরে স্থানীয়দের পক্ষ থেকে ৯৯৯-এ ফোন করলে বুড়িচং থানা পুলিশ, দেবীদ্বার থানা পুলিশ, ক্যান্টম্যান্ট হাইওয়ে পুলিশ ও দেবপুর পুলিশ ফাঁড়ির বিপুল সংখ্যক পুলিশ গিয়ে ঘটনাস্থল থেকে আটক ৩ পুলিশ ও প্রেমিক যুগলকে উদ্ধার করে দেবীদ্বার থানায় নিয়ে আসা হয়।

ওই ঘটনায় দেবীদ্বার থানায় প্রেমিক ইউছুফ সহ ৩জনকে অভিযুক্ত করে প্রেমিকা আখী আক্তারের মা নূরজাহান বেগম তাকী হয়ে দেবীদ্বার থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। মামলা নং- ১৮, তারিখ- ২৯/১২/২০২০ইং।

ঘটনাটি ঘটে সেমবার দিবাগত রাত ৯টায় কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার পোষ্টঅফিস রাম্পুর এলাকায়। উদ্ধার করতে আসা দেবীদ্বার থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এ,এস,আই) ইকরামুল হক প্রেমিক ইউছুফকে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তার তলপেটে সজোরে লাথি মারলে তাৎক্ষনিক জিহ্বা বের করে অচেতন অবস্থায় মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে।

স্থানীয়রা এ নিয়ে পুলিশের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন এবং তাদের মারধর না করে থানায় নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন। এক পর্যায়ে পুলিশের উপর মারমূখী হয়ে বেধরক মারধর করতে থাকলে স্থানীয়দের নিকট পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের বাঁচাতে প্রাণ ভিক্ষা চান। এসময় আব্দুল গফুর নামে এক যুবক তিন পুলিশকে উদ্ধার করে একটি ঘরে নিরাপদে রেখে ৯৯৯-এ ফোন করেন।
স্থানীয়রা বিষয়টি মানতে নারাজ, তাই তারা ওই ঘরের দরজা জানালা ভেঙ্গে পুলিশ সদস্যদের বের করে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন।

স্থানীয়রা জানান, দেবীদ্বার উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের বিহারমন্ডল গ্রামের ধনু ফকিরের বাড়ির মোসলেম উদ্দিনের মেয়ে মোহনপুর পাবলিক কলেজ’র একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী আখী আক্তারের সাথে প্রতিবেশী সামসুল হকের ছেলে মুদী দোকান ব্যবসায়ি মো. ইউছুফ’র সাথে দির্ঘ প্রেমের সূত্র ধরে রোববার সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়।

বিহারমন্ডল গ্রামের আব্দুল গফুর জানান, প্রতিবেশী আখীর সাথে ইউছুফএর ২ বছরের প্রেম ছিল, এক মাস পূর্বে তারা পালিয়ে যেয়ে ৩লক্ষ টাকা দেন মোহরানায় বিয়ে করেন। ১০দিন পর তাদের পারিবারিক ভাবে মেনে নেয়ার আশ্বাসে ফিরিয়ে আনা হয়। ওদের ফিরিয়ে আনার পর ঘটনার সমাধান না করে, পুনরায় ২৩ ডিসেম্বর আখীকে পাশ^বর্তী এলাহাবাদ ইউনিয়নের সিঙ্গারী খোলা গ্রামে বিয়ে দেন। বিয়ের দু’দিন পর রোববার সন্ধ্যায় নতুন স্বামীকে নিয়ে কনের বাড়িতে আসার পর নতুন স্বামীকে ঘরে রেখেই আখী আবারো পুরাতন প্রেমিক স্বামী ইউছুফকে নিয়ে পালিয়ে যায়। ওই ঘটনায় সোমবার আখীর মা নূরজাহান বেগম বাদী হয়ে দেবীদ্বার থানায় একটি অপহরণের অভিযোগ পত্র দাখিল করেন।

পুলিশ ইউছুফকে ধরতে এসে তাকে না পেয়ে তার বড় ভাই ইব্রাহীমকে ধরে নিয়ে যায়। পুলিশ ইউছুফের সেল ফোনে জানান, তোমার ভাইকে উদ্ধার করতে তোমাদের দু’জনকে থানায় আসতে হবে। ইউছুফ তার প্রেমিকাকে নিয়ে বুড়িচং উপজেলার পোষ্টঅফিস রাম্পুর এলাকা থেকে বাস যোগে থানায় আসার সময় প্রেমিকা আসবেনা বলে জানান, এসময় জোর করে তাকে গাড়িতে উঠাতে চাইলে স্থানীয়রা এসে তাদের আটক করে পাশ^বর্তী রাম্পুর গ্রামের সিএনজি চালক মনিরের বাড়িতে আটক রেখে উভয়ের অভিভাবকদের খবর দেন।

এরই মধ্যে দেবীদ্বার থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক(এ,এস,আই) ইকরামুল হক দু’জন সিপাই নিয়ে সিভিল পোষাকে হাজির হয়ে ইউছুফের হাতে হাত কড়া পরিয়েদেন। তার পরই ওই অপ্রিতিকর ঘটনা ঘটে।

পোষ্ট অফিস রাম্পুর এলাকার মোসলেম মিয়া জানান, অন্য থানা থেকে আসামী ধরতে হলে সংশ্লিষ্ট থানাকে অবহিত এবং তাদের সহযোগীতায় আসামী ধরার নিয়ম থাকলেও দেবীদ্বার থানা পুলিশ তা করেননি। যার কারনে এ বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয়েছে।

সংবাদ পেয়ে দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জহিরুল আনোয়ারের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে আসেন, তার পরই বুড়িচং থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোজাম্মেল হক ও ক্যান্টনম্যান্ট হাইওয়ে পুলিশের একটি দল ও দেবপুর পুলিশ ফাড়ির একটি দল সহ বিপুল সংখ্যক পুলিশ এসে আটক ৩ পুলিশ ও প্রেমিক যুগলকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন।

এব্যারে দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জহিরুল আনোয়ারের সাথে সেল ফোনে যোগাযোগ করলেও ফোন রিসিভ করেননি। তবে উদ্ধার করতে যাওয়া দেবীদ্বার থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক(এ,এস,আই) ইকরামুল হক জানান, ঘটনাস্থলে দু’টি গ্রুপ সৃষ্টি হওয়ায় আমাদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। আহত ইউছুফ জানিয়েছে আমার লাথিতে নয়, তার মৃগী রোগ থাকায় সে অচেতন হয়ে পড়েছিল।

বুড়িচং থানার ওসি মোজাম্মেল হক জানান, আমাদের অবহীত না করে আমাদের থানা থেকে আসামী ধরতে আসলেও, যেহেতু অভিযোগটি দেবীদ্বার থানার সেহেতু ওই থানায় মামলা হতে বাঁধা নেই।

ব্রাক্ষণপাড়া- দেবীদ্বার সার্কেল এ,এস,পি আমিরুল্লাহ জানান, কিছু পুলিশ মানুষের সাথে আচরনের শিক্ষাটাও নেননি। তাদের কারনে গোটা পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তী ক্ষুন্ন হচ্ছে। পেশাগত দায়িত্ব পালনে শৃংখলা বিরোধী কাজ করার অপরাধে দেবীদ্বার থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক(এ,এস,আই) ইকরামুল হক সহ ৩ পুলিশের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যাবস্থা নেয়া হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *