ফরিদপুরের লোকাল বাস গুলোতে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া!

ফরিদপুরের লোকাল বাস গুলোতে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া!

বিশেষ প্রতিবেদনঃ মা বাবার পরিশ্রম আর কষ্টের টাকায় আমাদের পড়ালেখা করান ,অনেক পরিবারে দুই তিন জন সন্তান আছে যারা লেখা পড়া করছেন ।সেই পরিবারের প্রধান আয়ের উৎস হয় তো বাবা না হয় মা যারা কৃষক না হয় শ্রমিক ।

তাদের দুই বেলা ভালো ভাবে খেতে কষ্ট হয় ,কিন্তু তাদের সন্তান কে তারা ভালো একটি স্কুল বা কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে চান । তাই অনেক দরিদ্র ঘরের শিক্ষার্থীরা গ্রাম থেকে শহরের একটি ভালো স্কুল কলেজে ভর্তি হয় ।সবার পক্ষেই এই ফরিদপুর শহরে থেকে পড়ার মতো অর্থিক ক্ষমতা নেই।

কেউ বা পড়া লেখার পাশাপাশি ফরিদপুর থেকে সকালে কলেজ শেষ করে দুপুরে বাবার সাথে গ্রামের ক্ষেতে কাজ করে ।ফরিদপুর শহরের সবচেয়ে বড় কলেজ হচ্ছে সরকারী রাজেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ।এই বিশ্ববিদ্যালয় অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা গ্রাম থেকে আসে প্রতিদিন আবার ক্লাস শেষ করে গ্রামে চলে যায় ।

এই যাও আসার মাধ্যম হচ্ছে গণ পরিবহন ।কিন্তু একজন কৃষক বা শ্রমিকেরা যখন তাদের সন্তানের এই পরিবহণের ভাড়া মিটাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে তখন তাদের পাশে কেউ নেই দাঁড়ানোর ।বছর কয়েক আগেও ফরিদপুর জেলার গণপরিবহন গুলোতে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়া চালু ছিল।এখন আর তা নেই ।সেদিন কথা হলো এক শিক্ষার্থীর সাথে তিনি সরকারি রাজেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স করছেন ।

তিনি ভাঙ্গা থেকে ফরিদপুর এসে প্রতিদিন ক্লাস কর্নে । তার প্রতিদিন যাওয়া আসার খরচ পড়ে ১০০ টাকা যা তার পরিবারের জন্য চাপের হয়ে যায় বলে তিনি জানান।তিনি আরো বলেন এই রাস্তা গণপরিবহণ গুলোর কনটেক্টারেরা শিক্ষার্থীদের সাথে খুব বাজে ব্যবহার করে ।

শিক্ষার্থীদের ২৫ টাকার হাফ ভাড়া অনুরোধ করে ৪৫ টাকা দেওয়া যায় , তবে তাদের শিক্ষার্থীদের সারা পথ দাঁড়িয়ে আসতে হয় । শিক্ষার্থীরা যখন হাফ ভাড়া দিতে চায় তখন তাদের উপর চরাও হোন হেল্পার কনটেক্টারেরা এবং তারা হাফ ভাড়া তো নেনই না বরং ন্যায ভাড়া পঞ্চাশ টাকা তার থেকে আরো অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করে।

এই হাফ ভাড়ার প্রচলন কিভাবে শুরু হয়েছিল তা জানান, অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউটের(এআরআই) সাবেক পরিচালক ও বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সামছুল হক । তিনি বলেন, সম্ভবত ১৯৬৪ সালে বিআরটিসি চারটি বাস দিয়ে সরকারিভাবে গণপরিবহন সেবা দেয়া শুরু করে। তখন থেকে সরকারের নির্দেশে নেয়া হতো। কিন্তু এটা ছিল সম্পূর্ণ সরকারি সেবা।

পরবর্তীতে যখন সরকারি বাসের সাথে সাথে বেসরকারি বাস গণপরিবহনের সেবা দেয়া শুরু করে। তখন সরকারি বাসের নিয়মে বেসরকারি বাসেও ছাত্রদের হাফ ভাড়া নেয়া হতো। কিন্তু এ বিষয়ে যেহেতু কোনও লিখিত নিয়ম নাই। এটা একটা প্রথা হয়ে দাঁড়ায়, যেটা পরবর্তীতে বেশ কিছুদিন চলে। কিন্তু সরকার যেহেতু বেসরকারি বাস কোম্পানির সাথে কোনও চুক্তি করে নাই সেহেতু এই হাফ ভাড়া নিতে তারা বাধ্য নয়।

তবে সাধারণ যাত্রীদের সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে বেসরকারি গণপরিবহন সঙ্গে সরকারের যদি চুক্তি থাকতো, বিআরটিএ’র নির্ধারিত ভাড়া ছাড়া অতিরিক্ত ভাড়া না নেয়াসহ ছাত্রদের হাফ ভাড়া বিষয়ে চুক্তি থাকত তাহলে ভালো হতো এবং এতো তর্কবিতর্ক হতো না। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই বেসরকারি গণপরিবহনের সাথে সরকার চুক্তি করে থাকে। সরকারের চুক্তি এবং লিখিত কোনও আইন না থাকার কারণে হাফ ভাড়ার এই প্রথাটা ধীরে ধীরে উঠে যেতে থাকে।

দ্য ক্যাম্পাস টুডের সাথে কথা হয় সরকারি রাজেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবরাব নাদিম ইতুর তিনি বলেন, এই জেলার সকল শিক্ষার্‌থীদের একটাই দাবি চালু হোক গণপরিবহন গুলোতে শিক্ষার্থীদেও জন্য হাফ ভাড়া । তিনি আরো দাবি করেন সরকারি রাজেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন গুলো ফরিদপুরের রাজবাড়ী রাস্তার মোড় থেকে রাজেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ক্যাম্পাস পর্যন্ত চালু করা হোক।



প্রতিবেদনটি লিখেছেন দ্য ক্যাম্পাস টুডে’র প্রতিনিধি শিতাংশু ভৌমিক অংকুর


সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *