বঙ্গবন্ধু’র ভাস্কর্য আমাদের অস্তিত্বের প্রতীক

বঙ্গবন্ধু’র ভাস্কর্য আমাদের অস্তিত্বের প্রতীক

মোঃ আশরাফুল আমিন: ইতিহাসের মহানায়ক সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, বাংলার মানুষের অস্তিত্বে মিশে থাকা মহাপুরুষের নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এদেশের মানুষকে শোষণ, বঞ্চনা, নিপীড়ন থেকে মুক্ত করতে বাঙালির অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে নিজের জীবনের সবটুকু দিয়ে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন, বাঙালি জাতিকে প্রতিষ্ঠিত করতে নিজের জীবন টুকুও দিয়ে গেছেন৷

পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণী, প্রতিটি মানুষ নিজের অস্তিত্বের জন্য লড়াই সংগ্রাম করে কিন্তু বঙ্গবন্ধু সবসময়ই বাঙালি জাতির অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম করেছেন৷ বাঙালি জাতির অস্তিত্ব যখন হুমকির মুখে তখনই পাকিস্তানি শোষক শ্রেণির কবল থেকে বাঙালি জাতিকে মুক্ত করতে বজ্র কণ্ঠে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধু’র ডাকে সারা দিয়ে এদেশের আপামর জনসাধারণ অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মত ফেটে পরেছিল।

সেই মহান মানুষ’টির নেতৃত্বে আমরা পেয়েছিলাম লাল সবুজের পতাকা।আমরা পেয়েছিলাম স্বাধীন ভাবে বাঁচার জন্য একটি সোনার বাংলা। আজ হয়ত বঙ্গবন্ধু’র দেহ আমাদের মাঝে নেই কিন্তু বঙ্গবন্ধু’র আত্মা আমাদের অস্তিত্বের মিশে আছে।সম্প্রতি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠী’র বিরূপ ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যকে আমরা প্রাণ ভরে ঘৃণা করি।

যারা বঙ্গবন্ধু’র ভাস্কর্য অপসারণের দাবি তোলার মত দুঃসাহস দেখায় তাদের এদেশে থাকার কোন অধিকার থাকে না। বঙ্গবন্ধু’র অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশে উগ্র মৌলবাদীদের কোন যায়গা নেই। ইতিহাস ঘাঁটলে আমরা দেখতে পাই বঙ্গবন্ধু ছিলেন অত্যন্ত ধার্মিক। টুঙ্গিপাড়া’র সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের বঙ্গবন্ধুর জন্ম । বঙ্গবন্ধু এদেশে ধর্মীয় জীবন যাপনের জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা করে গিয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর আন্তরিক উদ্যোগে প্রথম ইসলামিক ফাউন্ডেশন গড়ে উঠেছিল। বঙ্গবন্ধু’ই এদেশে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড স্থাপন করে ধর্মীয় শিক্ষার যাত্রা শুরু করেছিল। বিশ্ব ইজতেমার জন্য টঙ্গীতে যায়গা বরাদ্দ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। তৎকালীন সময় সদ্য স্বাধীন দেশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু’ই প্রথম ইসলামের পবিত্র ইবাদত হজ্জ পালেন জন্য প্রয়োজনীয় সু-ব্যবস্থা করেছিলেন এমনকি সরকারি কোষাগার থেকে হজ্জের জন্য আর্থিক অনুদান দিয়ে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন৷ বঙ্গবন্ধুর কাছে দেশের মুসলিম সম্প্রদায় চির ঋণি। একটা শান্তিময় রাষ্ট্রের জন্য এমন কিছু নেই যা বঙ্গবন্ধু করে যান নি।

এমন শান্তিময় রাষ্ট্রের সম্প্রীতি যারা নষ্ট করতে চায় সেই মৌলবাদীদের বিষ দাঁত ভেঙে দিতে হবে। ধর্মান্ধ লোকগুলো মূর্তি ও ভাস্কর্যের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য গুলো আড়াল করে মানুষকে বিভ্রান্ত করে এদেশের শান্তি, শৃঙ্খলা, সম্প্রীতি নষ্ট করতে চায় ওরা এই বাংলা’র জমিনে উগ্রবাদ, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ কায়েম করতে চায়। মূর্তি তৈরি করা হয় উপাসনালয়ে পূজা করার জন্য।

মূর্তি কে ভাগ্যবিধাতা, রিজিকদাতা,শক্তিদাতা ইত্যাদি আসনে বসানো হয় যা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং শিরক। কিন্তু কখনো কি ভাস্কর্য বানানো হয়ছে পূজা করার জন্য,নাকি কখনো বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে পূজা করা হয়ছে? কখনো না। ভাস্কর্য একটি প্রাচীনতম শিল্পকলা, এটি একটি জাতির ইতিহাস-ঐতিহ্য,শিল্পকলা রুচিবোধের অস্তিত্বের নিদর্শন হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

ভাস্কর্য হাজার বছর পূর্বেও ছিল বর্তমানেও আছে।কিন্তু হঠাৎ করে বঙ্গবন্ধু’র ভাস্কর্য নিয়ে প্রশ্ন উঠে এটা ভেবে দেখার বিষয়! বঙ্গবন্ধু’র ভাস্কর্য অপসারণ করার মত দুঃসাহসিক মন্তব্য কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছে? এরা সব সময়ই ধর্মকে পুঁজি করে রাজনীতি করতে চায়। নিজের রাজনৈতিক পায়দা নিতে ধর্মকে ব্যবহার করে। ধর্মকে পুঁজি করে অসাম্প্রদায়িক চেতনা নষ্ট করে বাংলাদেশের মাঠিতে মৌলবাদ কায়েম করতে চায়।

এদের প্রতিহত করার এখনি সময়। আর যদি কেউ বঙ্গবন্ধু’র ভাস্কর্য নিয়ে বিরূপ প্রশ্ন তোলে তাহলে ঐ উগ্র মৌলবাদীদের হাড় গুড়িয়ে দেওয়া হবে৷ আজ কবিতার ভাষায় বলতে চাই –

” যতদিন রবে পদ্মা যমুনা
গৌরি মেঘনা বহমান,
ততকাল রবে কীর্তি তোমার
শেখ মুজিবুর রহমান
দিকে দিকে আজ রক্তগঙ্গা
অশ্রুগঙ্গা বহমান
তবু নাহি ভয় হবে হবে জয়
জয় মুজিবুর রহমান। “

বঙ্গবন্ধু থাকবে আমাদের হৃদয় মন্দিরে। বঙ্গবন্ধু থাকবে আমাদের অস্তিত্বে। বঙ্গবন্ধু’র ভাস্কর্য থাকবে সারা বাংলা’র পথে প্রান্তের।।

জয়া বাংলা
জয় বঙ্গবন্ধু

মোঃ আশরাফুল আমিন।
শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *