বঙ্গবন্ধু ছিলেন এক দূরদর্শী রাজনীতিক

বঙ্গবন্ধু ছিলেন এক দূরদর্শী রাজনীতিক

প্রভাষ কুমার কর্মকার


পৃথিবীতে কোনো কার্য সম্পাদনের ক্ষেত্রে মানুষের নির্দিষ্ট কোনো সীমারেখা নেই, সীমারেখা নিবদ্ধ থাকতে পারে শুধু মানুষের চিন্তন রেখায়ই। আমরা যদি কোনো কিছু সৃজন কিংবা চিন্তনের আগেই সংকীর্ণতার কারণে তার বাউন্ডারি বা সীমারেখা নির্ধারণ করে ফেলি, তবে ওই পরিকল্পনা কখনোই দীর্ঘ পথপরিক্রম করে সফল পরিসমাপ্তিতে পৌঁছাতে পারে না। অর্থাৎ অনেক অসাধ্যই সাধন করা সম্ভব হয়, যদি দৃঢ় মনোবল আর সঠিক সময়োপযোগী পরিকল্পনার সমন্বয় ঘটানো যায়।

আমার অনুসন্ধিত্সু মনে এই অনুধাবন রেখাপাত করল ব্রেন ট্রেসির ইংরেজি উক্তি ‘There are no limits to what you can accomplish, except the limits you place on your own thinking’ অনুধাবন করতে গিয়ে। বাংলাদেশ আমাদের জন্মভূমি। প্রাণপ্রিয় এই মাতৃভূমি আমার অহংকার।

বাংলাদেশ নামটি মনে এলেই কিংবা চিন্তা করলেই যেন আমাদের মনে অসম্ভব ভাবাবেগ তৈরি করে, আমরা বিমোহিত হই। আমাদের জাতীয় সংগীত, ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি…’ আমাদের মনকে আন্দোলিত করে।

১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ স্বাধীনতার ডাক, অতঃপর রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৬ই ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়। ৩০ লাখ শহীদ ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা পেলাম প্রাণপ্রিয় স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ। এখন প্রশ্ন এই যে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সৃজনে কোন চিন্তাশক্তি কাজ করল? কে তিনি, যিনি এই অনুপম চিন্তাশক্তির ধারক? নাকি আকাশ থেকে নেমে আসা কোনো জাদুকরের বাঁশির ফুঁ আমাদের এই স্বাধীনতা উপহার দিল।

বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের সৃষ্টিতত্ত্ব কিংবা রহস্য যাই বলি না কেন, তার ইতিহাস দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। স্বাধীনতা-পরবর্তী প্রজন্ম হিসেবে বাংলাদেশ সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের কাছে কিছুটা অস্পষ্টতা থাকাটাও অস্বাভাবিক নয় এই কারণে যে, জন্মের প্রায় সাড়ে তিন বছর পরই এ দেশের কপালে ঘোর অমানিশার কালো টিপ যেমন পরতে হয়েছে স্বাধীনতাবিরোধী পাকিস্তানপ্রেমীদের দ্বারা, তেমনিভাবে মিথ্যার অপলাপে ক্ষণিকের জন্য হলেও সত্যকে উপেক্ষিত হতে হয়েছিল।

আর তাইতো আমাদের স্বাধীনতার বীজ কখন, কিভাবে বপিত হয়েছিল সে বিষয়ে কারো কারো কিছুটা অস্পষ্টতা থাকতেও পারে, তবে কখনো কখনো কারো কারো জ্ঞানপাপী মনোভাব পোষণ অবাক করে! প্রকৃতপক্ষে নিপীড়িত, নিষ্পেষিত, শোষিত ও অধিকারবঞ্চিত বাঙালি জাতির জন্য ভাবনা নামক আনুভূতিক সত্তা দৈববাণীতে আসে না।

এর জন্য শয়নে, স্বপনে-জাগরণে ও মননে দেশমাতৃকার জন্য চিন্তাকর্ষক হওয়ার প্রয়োজন হয় এবং প্রয়োজন হয় পরোপকারী, আত্মদানের মতো চেতনার। আর এই পরোপকারী, আত্মদানার্থক বীজের বপন কিংবা অঙ্কুুরোদ্গম শুরু হতে হয় বাল্যকাল থেকেই, পরিবার থেকেই।

১৯২০ সালের ১৭ মার্চ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল তত্কালীন ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার অন্তর্গত টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু। পিতা শেখ লুত্ফর রহমান ও মাতা সায়েরা খাতুনের আদরের সন্তান বঙ্গবন্ধুর ডাকনাম ‘খোকা’। সেদিনের সেই ছোট্ট খোকার পারিবারিক ঐতিহ্য ও পিতা-মাতার মানবতাবাদী দর্শন তাঁর মানবহিতৈষী ভাবদর্শনকে আরো পরিণত করতে প্রেরণা জুগিয়েছে।

তিনি পরোপকারী ও আত্মদানার্থক চিন্তনশক্তির লালন শুরু করেন বাল্যকাল থেকে এবং তাঁর পরিবার থেকেই। নিপীড়িত ও অধিকারবঞ্চিতের জন্য ভাবনা, তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে উদ্দীপ্ত হওয়ার প্রেরণা ও ত্যাগের আকর তিনি তাঁর পরিবার থেকে পেয়েছেন।

শোষিত-নিপীড়িত ও অধিকারবঞ্চিত মানুষের জন্য আজীবন সংগ্রামই তাঁকে আত্মত্যাগী অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে স্বীকৃতি এনে দিয়েছে। পিতা-মাতার আদর্শ তাঁর নিজস্ব সত্তাকে বিকশিত করতে অনুপ্রাণিত করেছে। মহীয়সী রমণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের একনিষ্ঠ সহযোগিতা তাঁকে মুজিব ভাই থেকে বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু থেকে জাতির পিতা হয়ে ওঠার জার্নি সম্পাদনে অমূল্য অবদান রেখেছে।

ইস্পাত-কঠিন মনোবল বঙ্গবন্ধুকে জয়ের ব্যাপারে আগুয়ান রেখেছে। কর্মী ও সাধারণের জন্য ভাবনা বলি আর উৎকণ্ঠাই বলি, তা সর্বদা চিন্তনে রাখতেন বলেই তিনি পেরেছিলেন অসম্ভবকে সম্ভব করতে। কর্মীবান্ধব বঙ্গবন্ধু তাই ‘কারাগারের রোজনামচা’য় লিখেছেন, ‘আমার নিজের উপর বিশ্বাস আছে, সহ্য করার শক্তি খোদা আমাকে দিয়েছেন। ভাবি শুধু আমার সহকর্মীদের কথা (উৎস : কারাগারের রোজনামচা—শেখ মুজিবুর রহমান, পৃষ্ঠা-৬৮)।’

তিনি চেয়েছিলেন এ দেশের জনগণের কষ্ট লাঘব করতে এবং তাদের আত্মপরিচয়ে বলীয়ান করতে। তিনি দৃপ্তকণ্ঠে বলেছিলেন, ‘নিজের জীবনের বিনিময়ে যদি এদেশের ভাবী নাগরিকদের জীবনকে কণ্টকমুক্ত করে যেতে পারি, আজাদী আন্দোলনের সূচনাতে এদেশের মানুষ মনের পটে যে সুখী-সুন্দর জীবনের ছক এঁকেছিল, সে স্বপ্নের বাস্তব রূপায়ণের পথ কিছুটাও যদি প্রশস্ত করে যেতে পারি, তাহলেই আমার সংগ্রাম সার্থক মনে করব (উত্স : বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্যে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ—শেখ হাসিনা, পৃষ্ঠা-৫২)।’

কর্মসম্পাদনে গণমানুষকে সম্পৃক্ত করার জন্য আবেদন সৃষ্টিকারী ও উদ্বুদ্ধকরণসত্তার জাগরণ ঘটানোর কঠিন মনোবল থাকতে হয়। এই অনুধাবন ও চিন্তাকর্ষণে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এবং মানবহিতৈষী মনোভাব যে বাঙালির মুক্তির উপায় তা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু অনুধাবনই করেছেন তাই নয়, তিনি হূদয়ে ধারণ করে, বাস্তবে প্রতিফলন ঘটিয়ে বাঙালির মণিকোঠা স্পর্শ করে প্রমাণ করে দিয়েছেন যে তিনি কতটা অনন্যসাধারণ। তাইতো এই মহান নেতার আহ্বান আপামর জনতার কাছে শুধু আহ্বানই নয়, এ এক আজ্ঞা পালনের ব্রত।

তাইতো তিনি মাত্র ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে দেশকে স্বাধীন করে বিশ্বে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। আর তা সম্ভব হয়েছে শুধু বঙ্গবন্ধুর দক্ষ নেতৃত্ব, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার কারণেই। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দূরদর্শিতার নিরিখ করতে গিয়ে কিউবার প্রেসিডেন্ট ফিদেল কাস্ত্রো তাইতো বলেছিলেন, ‘আমি হিমালয় পর্বত দেখিনি, শেখ মুজিবকে দেখেছি।’

বঙ্গবন্ধু এমনই দূরদর্শিতার সঙ্গে বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা প্রণয়ন করেন, যা পরবর্তী সময়ে এক দফায় পরিণত হয় এবং তাঁর ডাকে, প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় সমগ্র মুক্তিকামী জনতা ঝাঁপিয়ে পড়ে যুদ্ধে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে, বঙ্গবন্ধুর প্রেরণায়, বঙ্গবন্ধুকে আশ্রয় করে, বঙ্গবন্ধুকে নিয়েই আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, আমাদের স্বাধীনতা।

সারা বিশ্বের দিকে নজর দিলে দেখা যায়, স্বাধীনতার ডাক দিয়ে দীর্ঘ দিন পর্যন্ত স্বাধীনতা অর্জন করতে পারেনি এমন দেশের সংখ্যাও কম নয়। আসলে সময়োপযোগী পরিকল্পনা এবং পদক্ষেপের মাধ্যমে একজন যোগ্য ও দক্ষ সেনাপতি ছাড়া যেমন যুদ্ধ পরিচালনা কিংবা যুদ্ধবিজয় সম্ভব হয় না, তেমনি বঙ্গবন্ধুর সঠিক নির্দেশনা ও পরিকল্পনা ছাড়া এ দেশের মুক্তি ছিনিয়ে আনা কখনোই সম্ভব হতো না।

বাঙালির মর্মস্পর্শী প্রাণের স্পন্দন আমাদের প্রাণপ্রিয় নেতা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কতটা বাংলা অন্তপ্রাণ এবং কতটা কৌশলী দেশ ও দেশের স্বাধীনতার বিষয়ে, সে প্রমাণ তাঁর ৭ই মার্চের ভাষণ। বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠ আমাদের অহংকার, ৭ই মার্চের ভাষণ ইউনেসকো কর্তৃক স্বীকৃত হয়েছে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ভাষণের একটি হিসেবে। এই ভাষণের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হারুন-অর-রশিদ উল্লেখ করেন, ‘বাংলাদেশ রাষ্ট্র সৃষ্টির অনুরূপ, বাঙালির স্বাধীন অস্তিত্ব, জাতীয় সংহতি ও রাষ্ট্রের ভবিষ্যত্ উন্নয়ন-অগ্রগতির ক্ষেত্রেও বঙ্গবন্ধুর দর্শন বা শিক্ষা অনন্তকাল ধরে জাতির জন্য আবশ্যকীয় হয়ে থাকবে।

শুধু বাঙালি জাতির জন্য কেন, বিশ্বমানবতার জন্যও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে অনেক কিছু শিক্ষণীয়। ৪৬ বছর পর ইউনেসকো কর্তৃক তাঁর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণকে বিশ্ব-ঐতিহ্য সম্পদ হিসেবে স্বীকৃতিদান তা-ই প্রমাণ করে (উত্স : ৭ মার্চের ভাষণ কেন বিশ্ব-ঐতিহ্য সম্পদ : বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ—হারুন-অর-রশীদ)।’

এ দেশকে যে তিনি স্বাধীন করবেন, দুঃখী নিরন্ন মানুষের মুখে হাসি ফোটাবেন সেই সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা তাঁর বহুদিনের, যার অনেক প্রমাণের মধ্যে ৭০-এর সাধারণ নির্বাচনের আগে প্রদত্ত ভাষণ প্রণিধানযোগ্য। ওই নির্বাচনের প্রাক্কালে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, শিক্ষাই শ্রেষ্ঠ নীতি এবং শিক্ষা হলো শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ। দেশ গঠনের পূর্বেই তিনি শিক্ষা বিষয়ে বলেন, ‘সুষ্ঠু সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য শিক্ষা খাতে পুঁজি বিনিয়োগের চাইতে উত্কৃষ্ট বিনিয়োগ আর কিছু হতে পারে না (উত্স : বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্যে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ—শেখ হাসিনা, পৃষ্ঠা-৬১)।’

জাতীয় উত্পাদনের কমপক্ষে ৪ শতাংশ সম্পদ শিক্ষা খাতে ব্যয়ের তাগিদ তিনি তখনই অনুধাবন করেন। তিনি পাঁচ বছরের শিশুদের জন্য অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থার পরিকল্পনা, মাধ্যমিক শিক্ষার দ্বার উন্মোচন, নতুন নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন, বিশেষ করে মেডিক্যাল, কারিগরি ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য শিক্ষাবান্ধব পরিকল্পনার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করেন। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকদের স্বেচ্ছাচারিতা-বর্বরতা তাঁকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে দেয়নি। আবারও বঙ্গবন্ধুকে কারাবরণ করতে হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শুধুই একজন মানব অথবা একটা শরীরী আত্মাই নন, তিনি একটি প্রেরণা। তিনি বাঙালি জাতির স্বপ্ন-উন্মেষ, অগ্রভাগে নেতৃত্বদানকারী, পরিকল্পনা প্রণয়নকারী এক মহান রাজনীতিক।

জাতিরাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টা ও স্বপ্নের বাস্তবায়নকারী মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর জীবনের ব্রত ও সংগ্রামী রাজনীতির অন্যতম লক্ষ্য ছিল এ দেশের জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা, শোষণ-বৈষম্যহীন অসাম্প্রদায়িক জাতি গঠন করা। আর এ লক্ষ্যে পৌঁছাতে তিনি স্বাধীনতা-পূর্ব সময় থেকেই পরিকল্পনা শুরু করেছিলেন।

জাতির পিতা প্রকৃতপক্ষেই দেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে বদ্ধপরিকর ছিলেন বলেই অগ্রাধিকারভিত্তিক ক্ষেত্রগুলোও তখন থেকেই নির্ধারণ করেন। যে জাতির শিক্ষাব্যবস্থা যত উন্নত, সে জাতি তত উন্নত—তা তিনি মনে করতেন বলেই উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন, আধুনিক, বিজ্ঞানভিত্তিক ও আলোকিত মানবসম্পদ তৈরির প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।

অতঃপর রাজনীতির এই মহাকবি শত প্রতিকূলতা আর প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে আমাদের একান্ত আপন করে দিলেন গৌরবদীপ্ত লাল সবুজের পতাকা এবং আমাদের জাতীয় সংগীত, আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি …।

অবশেষে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে আমাদের মাঝে বীর বেশে উপস্থিত হলেন স্বাধীনতার এই মহানায়ক। দেশে ফিরেই তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য নানা রকম পরিকল্পনা গ্রহণ করলেন।

ক্ষুধা, দারিদ্র্য, বঞ্চিত, শোষিত ও নির্যাতিত মানুষের চিরকষ্ট ও বেদনার প্রচ্ছদ দূর করতে হলেন বদ্ধপরিকর, যাতে এ দেশকে শিক্ষাদীক্ষায় এই উপমহাদেশ তথা বিশ্বের মধ্যে সবার ঊর্ধ্বে তুলে ধরা যায়, এ দেশ যেন উন্নত আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আলোকবর্তিকা ছড়িয়ে দেওয়ার অভিপ্রায়ে কাজ শুরু করেন।

বাঙালির মানসপটে উজ্জ্বল নক্ষত্র জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন বাঙালির অস্তমিত স্বাধীনতা সূর্যকে আমাদের নিজের করে দিলেন, ঠিক তখনই এই দেশের বিরোধীভাবাপন্ন পাকিস্তানপ্রেমীরা ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়ে। মানুষ নামের কুলাঙ্গাররা পাকিস্তানের পরাজয়কে নিজেদের পরাজয়সম ভাবাদর্শনের অংশ হিসেবে নীলনকশার জাল বুনতে শুরু করে। গোটা বাঙালি জাতি যখন বিজয়ের আনন্দে আত্মহারা, তখন ওই নরপিশাচেরা পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য মত্ত হয়ে ওঠে, হয়ে ওঠে ভয়ংকর।

সুযোগ বুঝে তারা জাতির সূর্যসন্তান বঙ্গবন্ধুকে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট নির্মমভাবে হত্যা করে। এই ষড়যন্ত্রের উদ্দেশ্য শুধু বঙ্গবন্ধুকে ক্ষমতা থেকে সরানো কিংবা তাঁকে হত্যা করাই নয়, বরং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে ক্ষতবিক্ষত করে পাকিস্তানের আদর্শিক রাষ্ট্র কায়েম করা। মিথ্যার ভিত্তি যে ঘুণে জর্জর, মিথ্যাশ্রয়ীরা যে দুর্বল, ভীতি যে তাদের তাড়া করে ফেরে তাইতো ওই ঘাতকচক্র শুধু জাতির পিতাকেই বুলেট বিদ্ধ করেই ক্ষান্ত হয়নি, পরিবারের সব সদস্যের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর অতি আদরের ১০ বছরের ছোট্ট রাসেলও ঘাতকদের নির্মমতা থেকে প্রাণে রক্ষা পায়নি। এমন হূদয়বিদারক বর্বরতম হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর ইতিহাসে আর কখনো কেউ দেখেনি। ব্যক্তি মুজিবের অনুপস্থিতি যে তাঁর আদর্শের পুষ্পবৃষ্টি হয়ে ৫৬ হাজার বর্গমাইল অতিক্রম করবে, তা ওই ঘাতকচক্র অনুমান করতে পারেনি।

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন-উন্মেষ যাঁর সাধনা, আদর্শ যাঁর অনুপ্রেরণা, সত্য-সুন্দর-কল্যাণাশ্রয়ী পথ যাঁর নিশানা, সেই মহাপরিকল্পনা প্রণয়নকারী উন্নত বাংলাদেশের রূপকার গণমানুষের হূত্স্পন্দন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা আপনার নিকট শোকের এই মাসে আমাদের নিবেদন, আপনি অতি দ্রুত আমাদের জাতির পিতার দণ্ডপ্রাপ্ত খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকর করুন।

লেখক : অধ্যাপক, পরিসংখ্যান বিভাগ ও প্রশাসক, জনসংযোগ দপ্তর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *