বশেমুরবিপ্রবি: ঘরে বসেই বেতন পাচ্ছেন যে শিক্ষক

বশেমুরবিপ্রবি: ঘরে বসেই বেতন পাচ্ছেন যে শিক্ষক

বশেমুরবিপ্রবি টুডেঃ যৌন নিপীড়ন করে শাস্তি হিসেবে ঘরে বসে বেতন পাচ্ছেন গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইজ্ঞিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ আক্কাছ আলী।

গত তিন মাসে শিক্ষক আক্কাছ আলী ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা বেতন নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে বেতনের টাকা বন্ধসহ আক্কাছ আলীকে স্থায়ী চাকরীচ্যুত করার দাবি জানিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের শিক্ষার্থী সাফায়েত হোসেন বলেন, ঘরে বসেই যদি যৌন নিপীড়ক আক্কাছ আলী জামাই আদরে সরকারের টাকা পান, তাহলে অন্য শিক্ষকরা পেশাগত দায়িত্ব কেন পালন করবেন?

জানা যায়, চলতি বছরের এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং(সিএসই) বিভাগের সভাপতি ও সহকারী অধ্যাপক মোঃ আক্কাছ আলীর বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একাধিক শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়নের একটি অভিযোগপত্র প্রকাশ পায়।

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আক্কাছ আলীর অপসারণ দাবিতে ক্যাম্পাসে একটি বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচী পালন করেন। ঘটনার সত্যতা তদন্তে ৫ সদস্যর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং সেই কমিটি যৌন নিপীড়নের দায়ে আক্কাছ আলীকে অভিযুক্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ভিসিকে সুপারিশ করেন।

এরপর সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আক্কাছ আলীকে বিভাগীয় সভাপতির পদ থেকে আজীবনের জন্য অব্যাহতি দেয়। এছাড়া আগামী ৪ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও একাডেমিকসহ সকল কাজ থেকে থেকে বিরত রেখে বাধ্যতামূলক ছুটি দেয়।

একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মানবিক কারণে তার মাসিক বেতনের ৫৯ হাজার ৭৭৯ টাকা তাকে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তিনি কোন দায়িত্ব পালন না করে ঘরে বসেই পাবেন বলে এ সিদ্ধান্তে জানানো হয়। গত জুলাই মাস থেকে তিনি নিয়মিত পাচ্ছেন।

এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ওই শিক্ষককে স্থায়ী চাকরীচ্যুতির দাবিতে শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে বিভাগের সামেন টানা দেড় মাস অবস্থান কর্মসূচী পালন করেন। পরে তাদের সেমিষ্টার পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়।

গণমাধ্যমে ওই বিভাগের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তার সংবাদ প্রকাশের পর সাবেক ভিসি খোন্দকার নাসিরউদ্দিন তাদের পরীক্ষার ব্যবস্থা করেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে আক্কাছ আলীর স্থায়ী চাকরীচ্যুতির দাবিতে ভাটাপড়ে।

গত ৩০শে সেপ্টেম্বর সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিন পদত্যাগ করেন। পরে আক্কাছ আলীর বিষয়টি নিয়ে নতুন করে সামনে উঠে আসে।

কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের শিক্ষার্থী সাফায়েত হোসেন বলেন, মোঃ আক্কাছ আলী যৌন নির্যাতনের দায়ে অভিযুক্ত। তদন্তে তা প্রমাণিতও হয়েছে। নম্বর প্রদানে তিনি দুর্নীতি করতেন। কিন্তু সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের প্রশ্রয়ে সব কিছুতে পার পেয়ে যেতেন।

যৌন নির্যাতনের দায়ে তাকে চার বছরের জন্য একাডেমিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এই সময়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুরো বেতন ও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন। এটা কোন শাস্তি হতে পারেনা। তার অপসারণই একমাত্র শাস্তি হতে পারে।

কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের শিক্ষার্থী খন্দকার নিয়াজ মাহমুদ বলেন, শিক্ষক মোঃ আক্কাছ আলী শ্রেণি কক্ষে এসে পড়াশুনার বিষয়ে তেমন আলোচনানা করে নিজের ব্যক্তিগত জীবনসহ বিভিন্ন গল্প করতেন। এ ছাড়া আমাদের ব্যবহারিক পরীক্ষা নিয়মানুযায়ী না নিয়ে তিনি ইচ্ছামত নিয়ে থাকতেন।নিজের পছন্দ অনুযায়ী মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে নিজের খুশিমত নম্বর দিতেন।

একসাথে ১০/১২ জনের মৌখিক পরীক্ষা নিতেন। তাছাড়া মেয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে তিনি খুবই নোংরা আচরণ করতেন। বিভিন্ন প্রলোভন দেখাতেন।পরীক্ষা না নিয়ে একজন মেয়ে শিক্ষার্থীকে তিনি ‘এ প্লাসথপর্যন্ত দিয়েছেন । সুতরাং এমন একজন ব্যক্তি কখনও শিক্ষক হতে পারেন না। আমরা তার অপসারণ চাই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য প্রফেসর ড. শাহজাহান বলেন, ”আমরা এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা ম্যানেজমেন্ট নিয়ে খুব ব্যস্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস, শিক্ষকদের ডিউটি ইত্যাদি ঠিক করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতেই আমাদের সময় চলে যাচ্ছে। এ কারণে আমরা অন্য দিকে নজর দিতে পারছি না। তবে আক্কাছ আলী সহ আরো শিক্ষকের বিরুদ্ধে আমাদের কাছে অভিযোগ আছে। এ বিষয় গুলো আমলে নিতে একটু সময় লাগবে। তারপরে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।”

দ্য ক্যাম্পাস টুডে ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *