বশেমুরবিপ্রবি: অনলাইন ক্লাসের উপস্থিতি গণনা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

বশেমুরবিপ্রবি: অনলাইন ক্লাসের উপস্থিতি গণনা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক


৩০-৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) একমাস ধরে অনলাইন ক্লাস চলছে। তবে অনলাইন ক্লাস করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কোনো ধরণের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়নি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।

নিজ অর্থায়নে ইন্টারনেট এবং দরিদ্র শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ডিভাইস কিনে যুক্ত হতে হচ্ছে বশেমুরবিপ্রবির অনলাইন ক্লাসে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) মুখপানে চেয়ে বসে আছে।

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, এসমস্ত অনলাইন ক্লাসে উপস্থিতি গণনার বিষয়ে তেমন কোনো নির্দেশনা নেই। জানা যায়, নির্দেশনা না থাকলেও কিছু শিক্ষক অতি উৎসাহী হয়ে অনলাইন ক্লাসকে অফিসিয়াল ক্লাস হিসেবে গণনা করছেন। আর এতে বিপদে পড়েছেন নেটওয়ার্ক সমস্যা এবং দারিদ্র্যের কারণে ক্লাসে অংশ নিতে না পারা শিক্ষার্থীরা। এসমস্ত শিক্ষার্থীদের দাবি, অনলাইন ক্লাসকে অফিসিয়াল ক্লাস হিসেবে বিবেচনা করা উচিত না। এক্ষেত্রে একজন শিক্ষক তাঁর লেকচার ভিডিও করে দিলে একদিকে যেমন শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা চলবে অন্যদিকে নেটওয়ার্ক সমস্যা তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না। কারণ সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা যেকোনো সময়ে ক্লাসটি করে নিতে পারবে।

বিভিন্ন বিভাগে কথা বলে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৪টি বিভাগের মধ্যে অধিকাংশ বিভাগের অনলাইন ক্লাস গত ১৮ অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে। তবে এখনও অনলাইন ক্লাস শুরু হয়নি এমন বিভাগও রয়েছে কয়েকটি। অনলাইন ক্লাস চলা বিভাগগুলোর মধ্যে অধিকাংশ বিভাগে উপস্থিতি গণনা করা হচ্ছে না। কিন্তু মানবিক অনুষদের কয়েকটি বিভাগসহ বেশ কিছু বিভাগের শিক্ষকেরা অনলাইন ক্লাসের উপস্থিতি গণনার বিষয়ে কড়াকড়ি নির্দেশনা আরোপ করেছেন বলে জানা গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাবিদেরা বলছেন, অনলাইন ক্লাস শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নতুন অভিজ্ঞতা। অনেক শিক্ষক জানতেন না কিভাবে অনলাইনে ক্লাস নিতে হয়। কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ এবং সহায়তা ছাড়া এখন অনেক শিক্ষক ক্লাস নিচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও বিষয়টি তেমন। তবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নেটওয়ার্ক দুর্বলতার জন্য অনেক শিক্ষার্থী এসমস্ত ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারছে না। আবার অনেক দরিদ্র শিক্ষার্থী রয়েছে যাদের স্মার্টফোন বা প্রয়োজনীয় ডিভাইস নেই। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত না করেই উপস্থিতি গণনা করা বা সেগুলোকে অফিসিয়াল ক্লাস হিসেবে বিবেচনা করা অমানবিক।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান বলেন, আমার বাড়ি সাতক্ষীরার শ্যামনগরে। প্রতিটা ক্লাস করতে আমাকে বাড়ি থেকে ২ কিলোমিটার দূরে যেতে হয়। তারপরও অনেকসময় নেটওয়ার্ক পাই না।

লাইভস্টক সাইন্স অ্যাণ্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, ক্লাস চলাকালীন সময়ে নেটওয়ার্কের সমস্যার জন্য পড়া বুঝতে সমস্যা হয়। এটা শুধু শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে না। ক্লাসের মাঝে মাঝে শিক্ষকেরাও ডিসকানেকটেড হয়ে যান। ৪০ মিনিটের ক্লাসে কানেকটেড, রিকানেকটেড,ডিসকানেকটেড করতে গিয়ে সময় চলে যায়।

পঞ্চগড় জেলার শিক্ষার্থী মো. পারভেজ বলেন, বাড়ি থেকে অনেক দূর গিয়ে অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হতে হয়। অনেক সময় নেটওয়ার্কের কারণে ক্লাসে যুক্ত হতে পারি না সেক্ষেত্রে উপস্থিতি বাদ পড়ে যায়।

পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি নিজের পড়ালেখার খরচ নিজে চালাই। আমার পরিবারের মোট ছয় সদস্য রয়েছে তাদের ভরণপোষণ দিতে গিয়ে বাবাকে হিমশিম খেতে হয়। অনলাইন ক্লাসের ক্ষেত্রে মূল সমস্যা হচ্ছে ইন্টারনেট ক্রয় করা নিয়ে। পকেটে নেট কেনার টাকা না থাকলে ক্লাস করতে পারি না। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এবিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

এদিকে শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে ইন্টারনেট প্রদানের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, বিভিন্ন বিভাগের সভাপতি ও ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অনুরোধ করা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়নি বশেমুরবিপ্রবি প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট কেনার বিশেষ সুবিধা এবং দরিদ্র শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোন কেনার ব্যাপারে সুবিধা দেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে বশেমুরবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. একিউএম মাহবুব বলেন, ‘সব জায়গাতে চোরের আড্ডা। আমি ৫০০ দরিদ্র শিক্ষার্থীকে সাহায্য করতে গেলে আরও ৫০০ বড়লোক শিক্ষার্থী চলে আসবে। তাছাড়া সাত আটমাস ধরে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে থাকে না, সেখানে যে টাকা খরচ হতো বাড়িতে থাকার কারণে সেটা হচ্ছে না। ফলে ক্লাসের জন্য তারা পাঁচ-সাত হাজার টাকা খরচ করতে পারবে না? বাড়িতে থেকে শিক্ষার্থীরা তাদের লেখাপড়া করতে গিয়ে ইনভেস্ট করবে না? বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ডে তেমন টাকা নেই। ইউজিসি টাকা-পয়সা দিলে সেগুলো শিক্ষার্থীদের দেওয়া হবে। আর শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি আমি কমিয়ে দিবো।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *