বশেমুরবিপ্রবি: বন্ধ ক্যাম্পাসে কেন গাছ কাটছে?

বশেমুরবিপ্রবি: বন্ধ ক্যাম্পাসে কেন গাছ কাটছে?

শাফিউল কায়েস


গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) বন্ধ ক্যাম্পাসে চলছে গাছ কাটার কর্মসূচি। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো।

বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার (৯,১০ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকরা সরেজমিনে গিয়ে দেখেন, ইতোমধ্যে জয় বাংলা চত্বর থেকে শুরু করে লিপুস ক্যান্টিন ও ছেলেদের হলের পাশে এবং ক্যাম্পাসের পূর্ব দিকে খেলার মাঠের পাশ দিয়ে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় অর্ধশতাধিক গাছ কাটা হয়েছে। এর মধ্যে অনেক গাছ ৪ থেকে ৫ বছর আগে রোপন করা হয়েছিল। যার মধ্যে রয়েছে কড়ই, রেইনট্রি, শিশু ও কদমসহ বিভিন্ন গাছ। কিছু স্থানে বড় গাছগুলো কেটে ফুলের গাছ লাগানো হয়েছে।

কেন কাটা হচ্ছে এই গাছগুলো? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতোমধ্যে এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে চেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

গাছ কাটার ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বৈদ্যুতিক লাইন রক্ষাসহ ঝড়ে জানমালের ক্ষতি হবার আশঙ্কা থেকে গাছগুলো কাটা হয়েছে।

গাছ কাটা নিয়ে কি বলছেন শিক্ষার্থীরা?

বশেমুরবিপ্রবি আইন বিভাগের শিক্ষার্থী এস.কে. ইজাজুর রহমান বলেন, কোন অবস্থাতেই গাছ কেটে উন্নয়ন এই ধরণের ব্যাপার ও সমর্থনযোগ্য না৷ আপনাকে মাথায় রাখতে হবে একটি গাছ কে বাঁচানোর জন্য হলেও আপনাকে, আপনার উন্নয়নের মডেল পর্যন্ত পরিবর্তন করা উচিৎ। সেখানে কোন কারণ ছাড়া, গাছগুলো দ্বারা কোন ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা ছাড়াই নির্বিচারে ক্যাম্পাসের গাছ কেটে ফেলা খুব ই অমানবিক সিদ্ধান্ত৷ এমনকি এই সিদ্ধান্ত যিনিই দিছেন তার ও এই সিদ্ধান্ত দেয়ার অধিকার থাকে না বলেই বিশ্বাস করি। সবুজ বাড়ানো আমাদের দায় কিন্তু সবুজ নিধন আমাদের অধিকার না৷

বশেমুরবিপ্রবি: বন্ধ ক্যাম্পাসে কেন গাছ কাটছে?

ছবিঃ নজরুল ইসলাম

বিশ্ববিদ্যালয়ের রথীন্দ্র নাথ বাপ্পি নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে লিপুস ক্যান্টিনের দিকে যেতে রাস্তার দু’পাশের কিছু গাছ কাটা হচ্ছে। কারণ হিসেবে শুনছি উপরে নাকি বিদ্যুতের তার আছে। আমার মনে হয় এটা গাছগুলো কাটার একটা ঠুনকো কারণ, প্রশাসন ইচ্ছে করলেই গাছগুলোর রক্ষা করতে পারে। তাছাড়া প্ল্যাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী যদি এদিকে রাস্তা থাকে তাহলে রাস্তার দুধারে গাছ থাকাটাই স্বাভাবিক কিন্তু সেখানে বিদ্যুৎ’র তার আসলো কিভাবে৷ আমার মনে হয় গাছগুলো রক্ষা করে বিদ্যুৎ’র তার অন্য দিক থেকে নেয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে আহ্বান থাকবে গাছগুলো যাতে রক্ষা করা যায় সেই চেষ্টার। সে চেষ্টা না করা হলে আমরা শিক্ষার্থীরাই অবশ্যই প্রতিবাদ করবো।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবাদী সংগঠনের বক্তব্য

বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রিন ভয়েস নামে পরিবেশবাদী সংগঠনের সভাপতি আলী আহসান বলেন, এভাবে বৃক্ষ নিধন মেনে নেওয়া যায় না। এতগুলো গাছ না কেটে মাটির নিচ দিয়ে বৈদ্যুতিক লাইন স্থাপন করা যেত।

বশেমুরবিপ্রবি উপাচার্যের বক্তব্য

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. একিউএম মাহবুব বলেন, “যে গাছগুলো কাটা হয়েছে তা পরিকল্পনাহীনভাবে লাগানো হয়েছিল। তাছাড়া গাছগুলোর মাত্র ৬ ফুট নিচে বালু আর বালু রয়েছে। ফলে একটু ঝড়ো বাতাস হলেই এগুলো উপড়ে পড়ে জানমালের ক্ষতি হবার আশঙ্কা রয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে ল্যান্ডস্কেপিং পরিকল্পনা করে বিভিন্ন স্থানে গাছ লাগিয়েছি এবং সেগুলো যথাযথ পরিচর্যা করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে ক্যাম্পাস পূর্বের চেয়ে বেশি সতেজ এবং প্রাণবন্ত হবে। কিন্তু কিছু স্বার্থান্বেষী মহল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ণ করার লক্ষ্যে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিষয়টি নিয়ে চক্রান্ত করছে।”

তিনি আরও বলেন, “ভবিষ্যতে যাতে এধরনের কোন সমস্যার সম্মুখীন হতে না হয় সেজন্য এসব জায়গাগুলোতে পরিকল্পনা অনুসারে গাছ লাগানো হবে যা সৌন্দর্য বর্ধনে সহায়ক হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন
fb-share-icon
Tweet

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *