বাংলাদেশের সফলতম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মদিনে সশ্রদ্ধ শুভেচ্ছা

বাংলাদেশের সফলতম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মদিনে সশ্রদ্ধ শুভেচ্ছা

প্রফেসর ড. আনন্দ কুমার সাহা


আগামী ২৮শে সেপ্টেম্বর ২০২০ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মদিন। তাঁর এই জন্মদিনে আমাদের গভীর শ্রদ্ধা। অনেক চড়াই উতরাই পেরিয়ে তিনি ৭৪তম বৎসরে পা রাখতে যাচ্ছেন। ১৯ বার হত্যার মুখোমুখি থেকে প্রাণ বেঁচে গিয়েছেন। তাঁর এই ৭৪তম জন্মদিনে আমাদের আন্তরিক শ্রদ্ধা এবং কিছু কথা।

শিক্ষা ও ছাত্র রাজনীতি
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা, বাঙালি জাতির পিতা ও বাংলাদেশ সরকারের প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। তাঁর মাতার নাম বেগম ফজিলাতুন্নেছা।

১৯৪৭ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন্নেছার পাঁচ সন্তানের মধ্যে সবার বড় তিনি। তাঁর বাল্যশিক্ষার শুরু টুঙ্গিপাড়াতেই। ১৯৫৪ সাল থেকে তিনি ঢাকায় পরিবারের সঙ্গে মোগলটুলির রজনীবোস লেনের বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। পরে মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনে ওঠেন। ১৯৫৬ সালে তিনি টিকাটুলির নারীশিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৬১ সালের ১লা অক্টোবর ধানম-ির ৩২ নম্বরের বাড়িতে থাকা শুরু করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি আজিমপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন।

বাল্যকাল থেকেই রাজনীতি সচেতন শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সরকারি ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজের ছাত্রসংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর তিনি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং পরের বছর সভাপতি নির্বাচিত হন। শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি সকল গণআন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা সে সময় পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করায় বেঁচে যান। পরবর্তীকালে তিনি ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয়ে ৬ বছর অবস্থান করেন। ১৯৮০ সালে ইংল্যান্ড থেকে তিনি স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন শুরু করেন। বাংলাদেশে রাজনীতির গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনতে ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে সর্বসম্মতিক্রমে মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী অসাম্প্রদায়িক সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। বাংলাদেশের গণমানুষের ভবিষ্যত উন্নয়নের কথা চিন্তা করে ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে তিনি ১৯৮১ সালের ১৭ই মে দেশে ফিরে আসেন।

কারাবাস
১৯৮১ সালে দেশে ফিরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে লিপ্ত হওয়ার পরপরই শেখ হাসিনা শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পড়েন। তাঁকে বারবার গ্রেফতার করে কারাগারে রাখা হয়। শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য কমপক্ষে ১৯বার সশস্ত্র হামলা করা হয়। ১৯৮৩ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি সামরিক সরকার তাঁকে আটক করে ১৫ দিন কারাগারে রাখে। ১৯৮৪ সালের ফেব্রুয়ারি এবং নভেম্বর মাসে তাঁকে দুইবার গৃহবন্দি করা হয়। ১৯৮৫ সালের ২রা মার্চ তাঁকে আটক করে প্রায় ৩ মাস গৃহবন্দি করে রাখা হয়।

১৯৮৬ সালের ১৫ই অক্টোবর থেকে তিনি ১৫ দিন গৃহবন্দি ছিলেন। ১৯৮৭ সালের ১১ই নভেম্বর তাঁকে গ্রেফতার করে এক মাস কারাগারে রাখা হয়। ১৯৮৯ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনা আবারও গৃহবন্দি হন। ১৯৯০ সালের ২৭শে নভেম্বর শেখ হাসিনাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। ২০০৭ সালের ১৬ই জুলাই সামরিক বাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করে সংসদ ভবন চত্বরে সাবজেলে পাঠায়। প্রায় ১ বছর পর ২০০৮ সালের ১১ই জুন তিনি মুক্তিলাভ করেন।

মৃত্যুর মুখোমুখি
শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে উল্লেখযোগ্য হামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে ১৯৮৭ সালের ১০ই নভেম্বর সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালনকালে তাঁকে লক্ষ্য করে পুলিশের গুলিবর্ষণ। এতে যুবলীগ নেতা নূর হোসেন, বাবুল ও ফাত্তাহ নিহত হন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তাঁকেসহ তাঁর গাড়ি ক্রেন দিয়ে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। ১৯৮৮ সালের ২৪শে জানুয়ারি চট্টগ্রাম কোর্ট বিল্ডিংয়ের সামনে শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে এরশাদ সরকারের পুলিশ বাহিনী লাঠিচার্জ ও গুলিবর্ষণ করে। এ ঘটনায় শেখ হাসিনা অক্ষত থাকলেও ৩০জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী শহীদ হন। লালদীঘি ময়দানে ভাষণদানকালে তাঁকে লক্ষ্য করে দুইবার গুলি করা হয়। জনসভা শেষে ফেরার পথে আবারও তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি করা হয়।

১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠনের পর শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য বারবার হামলা করা হয়। ১৯৯১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদের উপ-নির্বাচন চলাকালে তাঁকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করা হয়। ১৯৯৪ সালে ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে তাঁর কামরা লক্ষ্য করে অবিরাম গুলিবর্ষণ করা হয়। ২০০০ সালে কোটালীপাড়ায় হেলিপ্যাডে এবং শেখ হাসিনার জনসভাস্থলে ৭৬ কেজি ও ৮৪ কেজি ওজনের দুইটি বোমা পুতে রাখা হয়। শেখ হাসিনা পৌঁছার পূর্বেই বোমাগুলো শনাক্ত হওয়ায় তিনি প্রাণে বেঁচে যান। বিএনপি সরকারের সময় সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা হয় ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট। ঐদিন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে এক জনসভায় বক্তব্য শেষ করার পরপরই তাঁকে লক্ষ্য করে এক ডজনেরও বেশি আর্জেস গ্রেনেড ছোড়া হয়। রোমহর্ষক সেই হামলায় শেখ হাসিনা প্রাণে রক্ষা পেলেও আইভি রহমানসহ তাঁর দলের ২২জন নেতাকর্মী নিহত হয় এবং পাঁচ’শর বেশি মানুষ আহত হন। শেখ হাসিনা নিজেও কানে আঘাত পান।

গ্রন্থের রচয়িতা
শেখ হাসিনা বেশ কয়েকটি গ্রন্থের রচয়িতা। তাঁর গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- শেখ মুজিব আমার পিতা (২০১৫), ওরা টোকাই কেন (১৯৮৯), বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম (১৯৯৩), বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২-১৯৭৫, দারিদ্র্য দূরীকরণ : কিছু চিন্তাভাবনা (১৯৯৫), আমরা জনগণের কথা বলতে এসেছি (১৯৯৮), সামরিকতন্ত্র বনাম গণতন্ত্র (১৯৯৪), বিপন্ন গণতন্ত্র লাঞ্ছিত মানবতা (২০০২), সাদা কালো (২০০৭), সবুজ মাঠ পেরিয়ে (২০১০), বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জন্যে উন্নয়ন (১৯৯৯), সহে না মানবতার অবমাননা (২০০৩), ঞযব ছঁবংঃ ভড়ৎ ঠরংরড়হ-২০২১, ), The Quest for Vision-2021, Democracy in Distress Demeaned Humanity (2003), Living in Tears (2004), Democracy Poverty Elimination and Peace (2005), Secret Documents of Intelligence Branch on Father of the Nation Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman (Edited, 2018).

পারিবারিক জীবন
স্বামী আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম.এ. ওয়াজেদ মিয়া। ড. মিয়া ১৯৪২ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারি রংপুর জেলার পীরগঞ্জ থানার ফতেহাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৭ সালের ১৭ই নভেম্বর জননেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তিনি বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন। ড. ওয়াজেদ মিয়া একজন মেধাবী ছাত্র হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে ১৯৬১ এবং ১৯৬২ সালে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে বি.এস-সি. সম্মান এবং এম.এস-সি. ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৭ সালে ইংল্যান্ডের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ.ডি. ডিগ্রি অর্জন করেন। প্রথিতযশা বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়া ২০০৯ সালের ১০ই মে পরলোক গমন করেন। শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় একজন তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ। তাঁর একমাত্র কন্যা সায়মা হোসেন ওয়াজেদ একজন মনোবিজ্ঞানী এবং তিনি অটিস্টিক শিশুদের কল্যাণে কাজ করছেন।

জননেত্রী শেখ হাসিনা বেঁচে আছেন বলে বাংলাদেশ বেঁচে আছে। আমরা তাঁর ৭৪তম শুভ জন্মদিনে স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করি তিনি দীর্ঘজীবী হউন। শান্তিময় হোক আগামী দিনগুলো। বেঁচে থাকুন বাঙালির প্রতিটি হৃদয়ে।

তথ্যসূত্র: প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের ওয়েবসাইট (https://www.pmo.gov.bd)

লেখক: উপ-উপাচার্য
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *