বাংলাদেশ ২০০৯ সাল থেকে বিশ্বের কাছে ৪টি নতুন উদ্ভিদ প্রজাতি উন্মোচন করেছে

বাংলাদেশ ২০০৯ সাল থেকে বিশ্বের কাছে ৪টি নতুন উদ্ভিদ প্রজাতি উন্মোচন করেছে

বাসস : বাংলাদেশ জাতীয় হার্বেরিয়াম ২০০৯ সাল থেকে ফ্লোরিস্টিক গবেষণার মাধ্যমে চারটি নতুন উদ্ভিদ প্রজাতি এবং উদ্ভিদের চারটি নতুন জাত আবিষ্কার করেছে, যেগুলো দেশের উদ্ভিদ গবেষণায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

বাসস-প্রাপ্ত একটি সরকারি নথি অনুযায়ী, নতুন আবিষ্কৃত উদ্ভিদের প্রজাতিগুলো হলো: কলোকেসিয়া হাসানি, অ্যালোকেসিয়া হারারগানজেনসিস, টাইফোনিয়াম ইলাটাম ও অ্যালোকেসিয়া সালারখানি। আর চারটি নতুন জাত হলো: র‌্যাপিডোফোরা ক্যালোফিলাম ভ্যারাইটি: ভাইওলেসিয়াস, কলোকেসিয়া ওরেসবিয়া, ভ্যারাইটি: স্টোলোনিফেরা, টাইফোনিয়াম ট্রিলোবেটাম, ভ্যারাইটি: ফালভাস ও কলোকেসিয়া ফ্যালাক্স, ভ্যারাইটি: পারপুরিয়া।

উদ্ভিদ শ্রেণিবিন্যাস গবেষণার জাতীয় গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ ন্যাশনাল হার্বেরিয়াম (বিএনএইচ), এবং শুষ্ক উদ্ভিদের নমুনা জাদুঘর দেশের বিভিন্ন স্থানে মাঠ গবেষণা পরিচালনা করে উদ্ভিদের এ প্রজাতিগুলো আবিষ্কার করেছে।

গবেষণা সংস্থাটি ২০০৯ সাল থেকে ফ্লোরিস্টিক গবেষণার মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য ৩৪৬টি উদ্ভিদ প্রজাতি রেকর্ড এবং ৬৭টি উদ্ভিদ প্রজাতি পুনঃআবিষ্কার করেছে, যা দেশের উদ্ভিদের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অর্জন।

২০১৫-১৮ সময়কালে ‘সার্ভে অফ ভাস্কুলার ফ্লোরা অফ চিটাগাং অ্যান্ড দ্য চিটাগাং হিল ট্র্যাক্টস (এসভিএফসি)’ শীর্ষক একটি প্রকল্পের অধীনে জাতীয় হার্বেরিয়াম দেশের সবচেয়ে জীববৈচিত্র সমৃদ্ধ অঞ্চল চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটিতে উদ্ভিদ জরিপ ও তথ্য সংগ্রহ পরিচালনা করে।

প্রকল্পের অধীনে ৪৫,১৪৬টি উদ্ভিদ নমুনা (ডুপ্লিকেটসহ ১,৫০,০০০ নমুনা) সংগ্রহ, সনাক্ত ও প্রক্রিয়াকরণ করা হয়েছে এবং হার্বেরিয়াম শীট প্রস্তুত করে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা হয়েছে। অন্যদিকে এ সংগৃহীত উদ্ভিদ নমুনার উদ্ভিদ শ্রেণিবিন্যাস গবেষণার মাধ্যমে সনাক্তকরণের সময় বাংলাদেশে নতুন ৯২টি উদ্ভিদ প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে।

মাঠ জরিপের মাধ্যমে প্রকল্প এলাকা থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে ৩৪৪টি উদ্ভিদ প্রজাতিকে বিপন্ন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

প্রকল্পের অধীনে ২,৯১৬ টি ভাস্কুলার উদ্ভিদের সচিত্র বর্ণনা সম্বলিত তিনটি খ-ে প্রকাশিত ‘ভাস্কুলার ফ্লোরা অব চট্টগ্রাম অ্যান্ড দ্য চিটাগং হিল ট্র্যাক্টস’ শীর্ষক বইটি এদেশের উদ্ভিদবিদ্যার ইতিহাসে একটি মাইলফলক।

ছবিসহ সমস্ত উদ্ভিদ প্রজাতির তথ্যের একটি ই-ডাটাবেসও প্রস্তুত করা হয়েছে।

২০২০-২০২৩ সময়কালে বন বিভাগের অধীনে টেকসই বনায়ন ও জীবিকা (সুফল) প্রকল্প ‘উদ্ভিদের বাংলাদেশ জাতীয় লাল তালিকা এবং নির্বাচিত সংরক্ষিত এলাকায় উদ্ভিদের আক্রমণাত্মক এলিয়েন প্রজাতির (আইএএস) উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা কৌশল’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।
আইইউসিএন বাংলাদেশের কারিগরি সহায়তায় প্রকল্পের আওতায় দেশের বন বাস্তুতন্ত্রের ১ হাজার ভাস্কুলার উদ্ভিদ প্রজাতির লাল তালিকা মূল্যায়ন এবং পাঁচটি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে এলিয়েন আক্রমণকারী উদ্ভিদ নিয়ন্ত্রণের কৌশল তৈরি করা হয়েছে।

মূল্যায়নের সময় আইইউসিএন রেড লিস্টের মানদ- অনুসারে আটটি উদ্ভিদ প্রজাতিকে বিলুপ্ত, পাঁচটি গুরুতরভাবে বিপন্ন, ১২৭টি বিপন্ন, ২৬২টি গুরুতরভাবে বিপন্ন, ৬৯টি হুমকির সম্মুখীন এবং ২৭১টি সর্বনি¤œ উদ্বেগের হিসাবে ঘোষণা করা হয়।

এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট ক্লাসিফিকেশন ফর এলিয়েন ট্যাক্সা (ইআইসিএটি) সূচকের মানদ- ব্যবহার করে সাতটি প্রধান আক্রমণাত্মক উদ্ভিদ প্রজাতিসহ মোট ১৪টি উদ্ভিদ প্রজাতিকে আক্রমণাত্মক উদ্ভিদ প্রজাতি হিসাবে চিহ্নিত করা হয় এবং তাদের নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা তৈরি করা হয়।

জাতীয় হার্বেরিয়াম এই কর্মসূচির অধীনে ‘জাতীয় উদ্ভিদের লাল তালিকা’ (https://iucnredlist-bd.org/) নামে একটি ওয়েবসাইট চালু করেছে।

বর্তমানে, উদ্ভিদ গবেষণা সংস্থা ২০২১-২০২৪ সময়ের জন্য বরিশাল ও সিলেট বিভাগের ভাস্কুলার প্ল্যান্ট স্পিশিজ সার্ভে (এসভিএফবিএস) শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, যার ব্যয় ১৬.১০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ- ১০টি জেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *