বাংলা ভাষা হত্যার বিচার কার কাছে দিব?

বাংলা ভাষা হত্যার বিচার কার কাছে দিব?

মো: রিয়াদ হোসেনঃ ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হওয়ার পর থেকে পূর্ব পাকিস্তান আর পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্যমূলক আচরণের কথা আমরা সবাই হয়ত জানি। প্রথম বৈষম্য শুরু হয় ভাষাকে কেন্দ্র করে, যেখানে শতকরা ৫৬ ভাগ মানুষের মুখের ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার বদলে উর্দুকে রাষ্ট্র ভাষা করার প্রচেষ্টা চলে। সাহসী বাঙালি সেদিন রক্তের বিনিময়ে সেদিন বাংলা ভাষার মান রাখে।

এসব সম্ভব হয়েছে বাংলাকে কেন্দ্র করে বাঙালি জাতীয়তাবোধের তাড়না থেকেই।১৯৭১ সালে বাংলাদেশ মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হয়। সৃষ্টি হয় নতুন ভূখণ্ডের নতুন পতাকার, সেই সাথে বাংলা ও পাই রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদা।

বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। বর্তমান বাংলাদেশের শতকরা ১০০ ভাগ মানষ বাংলা ভাষায় কথা বলে। তবে এদেশে বাংলা চর্চা কি সত্যিই হচ্ছে! নাকি পাশ্চাত্যরীতি অনুসরণ করতে গিয়ে হারিয়ে ফেলছি বাংলাকে!



যেভাবে ভাষার বিকৃতি আর বাংলাকে অগ্রাহ্য করার সংস্কৃতির সৃষ্টি হয়েছে, তাতে আগামীর বাংলাদেশ শুদ্ধ বাংলাকে হারিয়ে ফেলবে এটা শতভাগ নিশ্চিত! তবে, সেটির জন্য দ্বায়ী থাকব আমি, আপনি আমরা সবাই।



দেশের উচ্চ শিক্ষার প্রায় সবই ইংরেজি মাধ্যমের, হোক সেটা সরকারি কিংবা বেসরকারি কিংবা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের নামকরা শিশুবিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয় কিংবা মাধ্যমিক বিদ্যালয় সবগুলো বর্তমানে ইংরেজির দখলে। অভিভাবকের দোষ দিয়ে কি লাভ বলুন যেভানে স্বয়ং দেশের আদালত ব্যবস্থা ইংরেজি নির্ভর।

কি লাভ বলুন তো দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য আর ভাষাকে অপমান করে ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে! না জুটছে নিজের মধ্যে দেশপ্রেম না জুটছে মূল্যবোধ! দেশকে উন্নত দেশের কাতারে দাঁড় করতে চান, তবে উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকান, দেখবেন তারা তাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য আর ভাষাকে প্রাধান্য দিয়েই তাদের দেশকে উন্নত করেছে। মালেয়শিয়া যেতে হলে আপনাকে তাদের ভাষা শিখতে হবে, জার্মানিতে যাবেন তাদের ভাষা শিখতে হবে তবে বাংলাদেশের জন্য বাংলাটা বাধ্যতামূলক নয় কেন!

দেশের নিজস্ব ঐতিহ্যকে বাদ দিয়ে অন্য সংস্কৃতিচর্চা প্রধান কারণ হলো বাংলাকে অগ্রাহ্য করা। এটি আপনি স্বীকার করুন আর না করুণ এটাই সত্য। বর্তমান বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের বেশির ভাগই শুদ্ধ বাংলায় কথা বলতে পারে না। ইংরেজিতে কথার বলার মাঝেই তারা আধুনিকতাকে খুজে পায়। সরকারি হোক আর বেসরকারি হোক সকল চাকরির ক্ষেত্রে ইংরেজিতে ভাল কথা বলতে পারলেই আপনি সেরা, শুদ্ধ বাংলা বলতে পারেন কিনা সেটা বড় কথা হয়। একটা জাতির জন্য এর থেকে লজ্জার বিষয় আর কি হতে পারে! অপ্রিয় হলেও সত্য, যে জাতির পূর্ব পুরুষেরা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে, সে জাতির ভাষার মেরুদণ্ড আজ ভঙ্গুর।

যেভাবে ভাষার বিকৃতি আর বাংলাকে অগ্রাহ্য করার সংস্কৃতির সৃষ্টি হয়েছে, তাতে আগামীর বাংলাদেশ শুদ্ধ বাংলাকে হারিয়ে ফেলবে এটা শতভাগ নিশ্চিত! তবে, সেটির জন্য দ্বায়ী থাকব আমি, আপনি আমরা সবাই।

লেখকঃ শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ এন্ড লিবারেশন ওয়ার স্টাডিজ বিভাগ,
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *