বায়োটেকনোলজিস্ট, বায়োকেমিস্ট, মাইক্রোবায়োলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের নিয়োগ প্রদান জরুরি

বায়োটেকনোলজিস্ট, বায়োকেমিস্ট, মাইক্রোবায়োলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের নিয়োগ প্রদান জরুরি

অধ্যাপক ড. মো. মেহেদী হাসান খান


বর্তমান করোনা মহামারিতে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অনেক অব্যবস্থাপনা এবং সমন্বয়হীনতা ফুটে উঠেছে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য সরকার ইতিমধ্যে চার (৪) হাজার চিকিৎসক ও পাঁচ (৫) হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছে। তবুও সমস্যার সমাধান দৃশ্যমান হচ্ছে না।

এ অবস্থায় সরকার আরও দুই (২) হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। কিন্তু চিকিৎসার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অন্যান্য গ্রাজুয়েট যেমন বায়োটেকনোলজিস্ট, বায়োকেমিস্ট, মাইক্রোবায়োলজিস্ট কিংবা ফার্মাসিস্টদের নিয়োগের ব্যাপারে কোনো পরিকল্পনা দেখা যাচ্ছে না।

কিন্তু সংক্রামক রোগের জীবাণু শনাক্তকরণে, রোগের কারণ নির্ণয়ে, ভ্যাকসিন তৈরিতে নতুন নতুন ঔষুধ আবিষ্কারে এ সমস্ত গ্রাজুয়েটদের অবদান অনস্বীকার্য।

বর্তমানে বাংলাদেশে আশিটিরও বেশি ল্যাব এ কোভিড-১৯ শনাক্ত হচ্ছে। এর বেশিরভাগ ল্যাবই বায়োটেকনোলজিসহ উপরে বর্ণিত গ্রাজুয়েটরা বিনা পারিশ্রমিক এ স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। এদের মধ্যে অনেকে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। তবুও এদের নিয়োগের ব্যাপারে বা পারিশ্রমিক প্রদানের ব্যাপারে কোন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না।

আমাদের দেশে এই সমস্ত গ্রাজুয়েটরা দেশে কোনো চাকরী না পেয়ে অনেকেই বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। তারা বিশ্বের বিভিন্ন আধুনিক ল্যাবে গবেষণা করে যখন বিভিন্ন রোগের ভ্যাকসিন কিংবা ঔষধ আবিষ্কার করেন, তখন আমরা বাংলাদেশী হিসেবে শুধুমাত্র গর্ববোধ করি। এই ভ্যাকসিন এবং ঔষধ আমরা পরবর্তীতে উচ্চ মূল্যে আমদানি করি।

আমাদের দেশে বিজ্ঞানে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীরা এই সমস্ত বিষয়গুলোতে ভর্তি হয়। পরবর্তীতে দেশে কোন চাকরী না থাকায় বিদেশে পাড়ি জমাতে বাধ্য হচ্ছে। এভাবে আমাদের জনগণের কষ্টের ট্যাক্সের টাকা দিয়ে মেধাবী গ্রাজুয়েট তৈরি করে মেধা পাচার করছি।

১৯৯৩ সালের পূর্বে এই সমস্ত গ্রাজুয়েটদের সরকারী চাকুরীতে প্রবেশের সুযোগ ছিল। এরপর এক অদৃশ্য কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। এমতাবস্থায়, বিশেষ বিসিএস- এর মাধ্যমে চিকিৎসকদের সাথে সাথে বায়োটেকনোলজিস্ট, বায়োকেমিস্ট, মাইক্রোবায়োলজিস্ট এবং ফার্মাসিস্ট গ্রাজুয়েটদেরকেও নিয়োগের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।

বায়োটেকনোলজিস্ট এবং বায়োকেমিস্টদেরকে রোগ শনাক্তকরণের জন্য বিভিন্ন ল্যাবে মাইক্রোবায়োলজিদেরকে সংক্রামক রোগের গবেষণা ও ভ্যাকসিন তৈরিতে এবং ফার্মাসিস্টদেরকে ঔষধ প্রশাসনের বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। দক্ষ ব্যক্তিকে যথাযথ জায়গায় নিয়োগ প্রদান করলে কাজে গতি আসবে এবং বর্তমান অব্যবস্থাপনা এবং সমন্বয়হীনতা দূর হবে।

এজন্য প্রয়োজনীয় পদ সৃষ্টিসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পি.এস.সি সহ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

লেখক: অধ্যাপক ড. মো. মেহেদী হাসান খান, ডীন, বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *