বিশ্ববিদ্যালয়ের রেঙ্কিং যেন জাতির জন্য লজ্জা

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেঙ্কিং যেন জাতির জন্য লজ্জা

কামরুল হাসান মামুন

বছর ঘুরে আবারো বিশ্ববিদ্যালয় রেঙ্কিং! এবং আবারো পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা হবে। তারপর কিছুদিন তথৈবচ। এইবারের টাইমস হাইয়ার এডুকেশন কর্তৃক প্রকাশিত বিশ্বের ৯৩টি দেশের ১৫০০ টি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে করা এই রেঙ্কিং-এ বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয় ১০০০ এর মধ্যে নেই। কোন কোন দেশ দুঃখ করছে কেন তাদের কোন বিশ্ববিদ্যালয় সেরা ১০-এ নেই, কোন কোন দেশ দুঃখ করছে কেন তাদের কোন বিশ্ববিদ্যালয় সেরা ১০০-তে নেই আর আমরা আক্ষেপ করছি কেন আমাদের কোন বিশবিদ্যালয় সেরা ১০০০ এর মধ্যে নেই। একসময় আমরা ৭০০-৮০০-তে থাকতাম।

কিন্তু ক্রমান্বয়ে নামতে নামতে এখন আমরা সেরা ১০০০ থেকে ছিটকে গেছি। অথচ আমাদের শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্বের কোন দেশের শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে অথচ একটিও ১০০০ এর মধ্যে নেই এমন আরেকটি দেশও পৃথিবীতে নেই। নেপালের কথা ধরুন। সেখানে আছেই দুটি বিশ্ববিদ্যালয় তার মধ্যে ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের সমান রেঙ্কিং।

পাকিস্তানের কায়েদে আজম বিশ্ববিদ্যালয় রেঙ্কিং-এ ৪০০-৫০০ এর মধ্যে, রেঙ্কিং-এ ৬০০-৮০০ এর মধ্যে আছে ইসলামাবাদের COMSATS বিশ্ববিদ্যালয়, এদের ৫টি বিশ্ববিদ্যালয় আছে ৮০০-১০০০ এর মধ্যে আর ৭টি আছে ১০০০+ এর মধ্যে। আমরা খালি টাকার উন্নয়ন দিয়েই বড়াই করে গেলাম। অথচ শিক্ষার মানে কত পিছিয়ে এটিই তার সবচেয়ে শক্তিশালী প্রমান।

ভারতের সেরা প্রতিষ্ঠান হলো ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সাইন্স এবং আইআইটি রোপার যাদের অবস্থান ৩০১-৩৫০ এর মধ্যে। এছাড়া ৪টি আইআইটি আছে জেদের অবস্থান ৩৫১-৪০০ এর মধ্যে। আর ৪০১-৫০০-র মধ্যে আছে ৫টি আইআইটি। ৩টি আইআইটি আছে ৫০০-৬০০-র মধ্যে। তাদের মোট ৩৬টি প্রতিষ্ঠান আছে ১০০০ এর মধ্যে আর বাকি ২০ টি প্রতিষ্ঠান আছে ১০০০+ এর মধ্যে। নিশ্চিতভাবেই দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারত একটি রোল মডেল।

লক্ষণীয় এরা কিছু ইনস্টিটিউট করেছে যারা বিশ্বে ভারতের সম্মান তুলে ধরেছে। এদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান কিন্তু তেমন ভালো না। এইদিক থেকে পশ্চিমা দেশ এমনকি চীন জাপান কোরিয়া থেকেও ভিন্ন। অর্থাৎ ভারত তার নিজস্ব একটি মডেল তৈরী করেছে যে আন্ডারগ্রাজুয়েট করবে বিশ্ববিদ্যালয়ে কিন্তু পিএইচডি করবে ইনস্টিটিউটগুলোতে।

শিশুরা যেমন পার্কে গিয়ে স্লাইডে চড়ে নিচে নেমে আনন্দ পায়। আমরাও ঠিক তেমনি শিক্ষার মানের অধপতনের স্লাইডে চড়ে কেবল নিচেই নামছি আর বলদের মত হাসছি। নামতে নামতে যে একসময় এত নিচে নেমে যাব যেখান থেকে আর উপরে উঠা হয়ত প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে। আমি যদি শেখ হাসিনা হতাম তাহলে অন্তত গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়কে এমন একটি রোল মডেল বানাতাম যেন এটা দিয়েই বিশ্বে বাংলাদেশের নাম শিক্ষা ও গবেষণার অজুহাতে ছড়িয়ে পরে।

বঙ্গবন্ধুর নামে বিশ্ববিদ্যালয় হবে আর সেই বিশ্ববিদ্যালয় হবে যাচ্ছে তা মানের এইটাতো তার নামের প্রতি অবিচার করা হয়। এর চেয়ে না থাকা বেটার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা আর কি বলব। গত দশ বছরে (এর আগের কথা না হয় নাই বললাম) যেই মানের শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে তারা আগামী ১০ বছর পরে নেতৃত্বে আসবে। তখন বুঝবেন ধস কাকে বলে। একটু খোঁজ নিয়ে দেখেন এই ১০ বছরে নিয়োগ পাওয়া অধিকাংশ শিক্ষকই দেশের বাহিরে পিএইচডি করতে কোন স্কলারশিপ পাচ্ছে না।

এরা দেশের বার্ডেন হয়ে যাবে। একসময় এদেরকে দেশের কোন স্কলারশিপ দিয়ে বিদেশে পিএইচডি করতে পাঠাতে হবে যা দেশের অর্থ বিদেশে পাচার হওয়ার সামিল। দেশের টাকায় বিদেশে পিএইচডি করানোর পক্ষে আমি একদম না। আমি না আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের মাঝে কোন ভিশন দেখছি না যাতে একটু স্বপ্ন দেখতে পারি যে আগামী ৫ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রেঙ্কিং-এ উন্নতি হবে।

কামরুল হাসান মামুনের টাইমলাইন থেকে নেওয়া

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *