বিশ্ব শিক্ষক দিবসে দুই প্রফেসরকে শ্রদ্ধা

বিশ্ব শিক্ষক দিবসে দুই প্রফেসরকে শ্রদ্ধা

ড. মো. আসাবুল হক


আজ ৫ই অক্টোবর। বিশ্ব শিক্ষক দিবস। এ দিনে আমার দু’জন শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষক নিয়ে এ লেখার প্রয়াস। ড. সুব্রত মজুমদার হলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় গণিতের অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর। অপরদিকে, ড. অরুণ কুমার বসাক হলেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ইমেরিটাস প্রফেসর। একাডেমিকভাবে প্রফেসর মজুমদার স্যার প্রফেসর বসাক স্যারের এক বছরের সিনিয়র।

সেই সূত্র ধরে প্রফেসর বসাক প্রফেসর মজুমদারকে গুরুদেব বলে ডাকেন। শিক্ষকতা ও গবেষণার পাশাপাশি প্রফেসর বসাকের যেমন আছে চেয়ার-টেবিল বানানো থেকে হোমিওপ্যাতি চিকিৎসায় দক্ষতা, তেমনি প্রফেসর মজুমদারের আছে সঙ্গীতে। এ দুজন প্রফেসর নিয়ে অনেক কথা বলা যায় অনেক কথা লেখা যায়। যারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটু খোঁজ খবর রাখেন তাঁরা সবাই অবগত আছেন।

বইয়ের পাতার আদর্শ শিক্ষকের বাস্তব উপস্থিতি যে এখনও আমাদের আশেপাশে আছে তার উদাহরণ এ দুজন প্রফেসর। পাঠদান, গবেষণা থেকে দৈনিন্দন জীবনে প্রতিটি কাজের প্রতি যেমন তাঁরা দায়িত্ব্যবান, তেমনি কাজগুলো করেন অত্যন্ত নিয়ম তান্ত্রিকভাবে। আর এরই ধারাবাহিকতায় তাঁরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ এবং গণিত বিভাগের গবেষণার কাজকে কতটা এগিয়ে দিয়েছেন তা স্বচক্ষে না দেখলে বোঝা যাবে না। প্রফেসর বসাক এ পর্যন্ত শতাধিক আন্তর্জাতিকমানের প্রকাশনাসহ অনেকে তাঁর তত্ত্বাবধায়নে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেছেন।

অপরদিকে, প্রফেসর মজুমদারের তত্ত্ববধায়নে প্রায় ১৫ জনের উর্দ্ধে পিএইচডি-এমফিল ডিগ্রী অর্জন করেছেন। তিনি প্রায় ৩০ এর কাছাকাছি আন্তর্জাতিকমানের প্রকাশনাসহ গণিতের ওপর অনেকগুলো বই লিখেছেন এবং অনুবাদ করেছেন। তিনি সঙ্গীতের উপরও একটি বই লিখেছেন। তিনি ম্যকারারে বিশ্ববিদ্যালয় এবং বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়-এ যথাক্রমে সহযোগী অধ্যাপক এবং সহকারী প্রভাষক হিসেবে প্রায় পাঁচ বছর যাবত শিক্ষাদান করেছেন। প্রফেসর মজুমদার যেমন আইসিটিপি, আমেরিকা, কলকাতা এবং বাংলাদেশ ম্যাথমেটিক্যাল সোসাইটির সম্মানিত সদস্য, তেমনি প্রফেসর বসাকও বিশ্বের বিভিন্ন ফিজিক্যাল সোসাইটির ফেলো এবং সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে পেনিনসুলা ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট প্রদত্ত ‘প্রফেসর বসাক পুরস্কার এবং প্রফেসর বসাক বৃত্তি’ প্রদান করা হয়। ট্রাস্ট থেকে বিজ্ঞান অনুষদের এবং পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সেরা ছাত্রদেরকে সম্মানিত করা হয়। বৃত্তির ঘোষণা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে প্রফেসর বসাক পেনিনসুলা ওয়েলফেয়ার কর্তৃপক্ষকে কৃতজ্ঞতা জানান এবং নামি-দামি শিক্ষকদের নামে বৃত্তি চালুর জন্য পেনিনসুলা ওয়েলফেয়ারের মত সমাজের বিত্তবান এবং প্রতিষ্ঠানদের প্রতি আহবান জানান। গুণী এবং আদর্শবান এসব শিক্ষকদের পুরস্কৃত করা এবং তাঁদের নামে বিভিন্ন বৃত্তি বা পুরস্কার চালু হচ্ছে জানলে ভাল লাগারই কথা। প্রফেসর বসাক এ বয়সেও পড়ালেখা, গবেষণা এবং বিভাগের অন্যান্য কাজের পেছনে যে সময়টা দেন তার সিকিভাগ সময়ও যদি আমরা দিতে পারতাম তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ইতিহাস অন্য রকম হতে পারত।

অপরদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে প্রায় ৪৫ বছর ধরেই শিক্ষকতা পেশায় ছিলেন প্রফেসর মজুমদার। শিক্ষকতার পাশাপাশি গুণী এ প্রফেসরের সঙ্গীত জগতে আছে অগাধ জ্ঞান এবং অবাধ বিচরণ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট-বড় প্রায় সব ধরনের সংগীত অনুষ্ঠান, প্রতিযোগিতা ইত্যাদি তাঁর তত্ত্বাবধায়নে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাঁর আর্শীবাদ নিয়ে আজ বাংলাদেশের সংগীত জগতে অনেকেই প্রতিষ্ঠিত। প্রফেসর মজুমদার বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির একজন সম্মানীত সদস্য এবং অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়গুলোতে তিনি অনেক সময় স্ব শরীরে উপস্থিত থেকে ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়ে উৎসাহ যোগান।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিভাগের প্রফেসর অরুণ কুমার বসাক শিক্ষকতা পেশায় থাকলেও প্রফেসর সুব্রত মজুমদার অবসরে গেছেন অনেক বছর হলো। বাংলাদেশ সরকার প্রফেসর সুব্রত মজুমদার স্যারকে ইউজিসি প্রফেসর করে সম্মানিত করেছেন। প্রফেসর সুব্রত মজুমদার স্যার অবসরে গেলেও ছাত্রদের টানে বিভাগে এসে মাঝে মাঝে ক্লাস নেন যা ছাত্রছাত্রীদের বিশেষ পাওয়া। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিতে আমরা অনেকে যখন ক্ষমতাসীনদের পেছনে ঘুরঘুর করি, সেখানে এ দু’জন প্রফেসরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষমতাসীণরা স্পর্শ বা কাছে টানতে পারেনি। তাঁরা গবেষণা এবং শিক্ষকতাকে ধ্যান-জ্ঞান মনে করে সারাটা জীবন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে সেবা দিয়ে গেছেন এবং এখনও যাচ্ছেন।

আজ বিশ্ব শিক্ষক দিবসে প্রফেসর বসাক এবং প্রফেসর মজুমদারকে স্যারকে জানাই শ্রদ্ধা ও সম্মান। আমরা শিক্ষকরা যেন তাঁদের মতো গৌরবান্বিত হতে পারি-তাহলেই কেবল বিশ্ববিদ্যালয় গৌরবান্বিত হবে। গুণী এ দুই প্রফেসরের দীর্ঘায়ু ও মঙ্গল কামনা করছি।

লেখকঃ প্রফেসর, গণিত বিভাগ,
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *