বিসিএসে নিজের আইডেন্টিটি তৈরী করা গর্বের

বিসিএসে নিজের আইডেন্টিটি তৈরী করা গর্বের

বৈশ্বিক মহামারির থাবায় থমকে গেছে গোটা বিশ্ব। কোথাও নেই সুসংবাদ। গোটা বিশ্ব যেন মৃত্যুপুরী। প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ ও ভালো নেই। এই দুঃসংবাদের সময় জাতিকে সুসংবাদ দিয়েছে পিএসসি। কারো মুখে জয়ের আনন্দের উচ্ছ্বাস। কারো চেহারায় গ্লানির ছাপ। বলছিলাম ৩৮ তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের কথা।

৩৮ তম বিসিএসের চূড়ান্ত মেধা তালিকায় স্থান করে নিয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী নাসির উদ্দিন। তিনি শিক্ষা ক্যাডারে (আইসিটি, মেধা ক্রম ১০) সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছেন।

বর্তমানে তিনি জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আইটি ডিভিশনে কর্মরত আছেন। নাসির উদ্দিনের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন সিয়াম

কেমন আছেন?

আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি। ধন্যবাদ আপনাকে।

বিসিএসই কেন আপনাকে দিতে হবে মনে হলো?

অন্যান্য টেকনিক্যাল স্টুডেন্টদের মতো প্রথম দিকে আমারও কোন পরিকল্পনা ছিলনা, বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার। তবে ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে সরকারের যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেওয়া। সেই সাথে আইসিটি বিষয়ে ব্যাপক কাজের ক্ষেত্র তৈরি হওয়ায় বিসিএস এর প্রতি আগ্রহ তৈরী হয়।

আপনি ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে বিসিএসে আসলেন কেন?

আমি কিন্তু আমার টেকনিক্যাল ফিল্ডেই আছি। এই সেক্টরকে ডেভেলপ করার জন্য কিছুটা হলেও আমার টেকনিক্যাল জ্ঞান কাজে লাগাতে পারবো।

আপনার কাজ ছিল পৃথিবীব্যাপী কিন্ত আপনি একটা গন্ডির মধ্যে চলে আসছেন। এরকম সীমাবদ্ধ জায়গায় আসার কারণ কী?

আমি আসলে সেটা মনে করি না। আমার কাছে মনে হয় কোন বেসরকারি সফটওয়্যার ফার্মে কাজ করলে আমি বরং সেখানেই আবদ্ধ হয়ে যেতাম। আইসিটি শিক্ষা ক্যাডারে আরও বেশি কাজ করার সুযোগ আছে। প্রফেশনাল স্কীলকে ডেভেলপ করে দেশকে সত্যিকার অর্থেই ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে রুপান্তর করে, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ভূমিকা রাখতে পারবো বলে আশা করি।

বিসিএসে আসার গল্পটা যদি বলতেন ?

বিসিএস আশার ইচ্ছেটা কখনোই ছিলোনা। তারপরও বন্ধুদের সাথে শখ করে ৩৫ তম বিসিএস এ আবেদন করি। খুব বেশি পড়ার সুযোগ হয়নি। প্রশ্ন খুব কঠিন হওয়ায় ম্যাথ, ইংলিশ ও বিজ্ঞান ভালো করায় টিকে যাই। এর পর আসলে নিজের ভেতরে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়।

বিসিএসের প্রস্তুতি কীভাবে নিলেন?

সত্যি করে বলতে গেলে বিসিএস এর জন্য খুব প্লান করে, রুটিন করে পড়াশোনা কখনো করা হয় নি। তবে যতটুকু করেছি তা ইফিশিয়েন্ট ওয়েতে করেছি, সারা দিন-রাত বই নিয়ে পড়ে থাকি নি। যতক্ষণ ভালো লেগেছে ততক্ষণ পড়েছি। কোন কোচিং এ ভর্তি হইনি। যতটুকু পড়তাম, যে বিষয়ে পড়ছি সেটা ভালোভাবে জানার চেষ্টা করতাম এবং জানাটাকে উপভোগ করতাম। পড়াশোনার মধ্যে আনন্দ খুঁজে পাওয়াটাই মনে হয় যেকোন পরীক্ষায় ভালো করার আসল সিক্রেট।

বিসিএসকেই কেন আইডেন্টি হিসেবে নিতে হবে বলে আপনার মনে হলো?

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নিঃসন্দেহে ক্যাডার সার্ভিসে নিজের আইডেন্টিটি তৈরী করা গর্বের। সেজন্যই আমি অনুপ্রাণিত হয়েছি।

সংসার ও চাকরী সামলিয়ে বিসিএসের পড়াশোনা কীভাবে কন্টিনিউ করলেন?

পড়াশোনা তো সারা শিক্ষাজীবন ব্যাপিই করতে হয়েছে। সংসার যে শুধুই সামলাতে হয়েছে এরকম না সংসার প্রিপারেশন নেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক ছিল। চাকরি করে পড়াশোনা করাটা বেশ টাফ। তবে এর মধ্যেও যতটুকু সম্ভব চেস্টা করেছি।

৩৮ তম বিসিএসে বিবাহিতদের জয় জয়কার। আপনার স্ত্রীর থেকে সাপোর্ট ছিল কীরকম।

স্ত্রীর সাপোর্ট ছাড়া আসলে কতটুকু সম্ভব হত বলা মুশকিল। বিশেষ করে পড়াশোনা না করতে চাইলে বার বার পড়তে বসার কথা। একটা বিষয় না বললেই নয়, যখন রাত জেগে পড়তাম আমার প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করতো, পড়া কোনভাবেই মাথায় ঢুকতো না তখন আমার স্ত্রী মাথা ম্যাসাজ করে দিতো এবং মাথার ব্যাথা ভালো হয়ে যেত। ফলে আমি আরও বেশি সময় পড়তে পারতাম।

গত ১০ বছরে বিসিএসের প্রতি যে মোহ শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি হলো সেটা আগে দেখা যায় নি। বিসিএসে এর প্রতি এই মোহের কারণ কী?

আর্থিক নিরাপত্তা (বিশেষ করে সর্বশেষ জাতীয় বেতন কাঠামোতো বেতন বৃদ্ধি) সামাজিক মর্যাদা, জব সিকিউরিটি।

বিসিএস মানেই কী ট্যালেন্টের মাপকাঠি?

ট্যালেন্ট অবশ্যই সহায়ক। কিন্তু বিসিএসই একমাত্র ট্যালেন্টের মাপকাঠি না।

আপনি কর্পোরেট কোম্পানিতে যে পরিমান অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারতেন। শিক্ষা ক্যাডারে তো সেই সুযোগ নেই। কেন ভালো সুযোগ ছেড়ে তার চেয়ে কম সুযোগ সুবিধায় চলে আসলেন?

আর্থিক বিষয় দেখেই যে ক্যারিয়ার প্লান করেছি বিষয়টি সেরকম না। কারও কারও পছন্দের কিছু জায়গা থাকে যেখানে সে আর্থিক সুবিধা কম পেলেও কমফোর্ট ফিল করে। আমার ক্ষেত্রেও সেটি হয়েছে। তাছাড়া সরকারি জবে বর্তমান সুযোগ সুবিধা যেকোনো কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর চেয়ে কোন অংশে কম না।

বেসরকারি সেক্টরে কী সিকিউরিটির অভাব না অন্য কিচ্ছু। না সামাজিকভাবে ইনসিকিউরড?

জব ইনসিকিউরিটি, কাজের প্রেসার, বসের ঝাড়ি। বর্তমান সিচুয়েশনে এটা আরও প্রকট হয়েছে। মহামারীর মধ্যে বেসরকারি চাকরিজীবিদের কে স্যাক করার ঘটনা ঘটছে, বেতন ঠিকমতো পাচ্ছে না পেলেও ফুল বেতন দেয়া হচ্ছে না।

বিসিএস শিক্ষায় আসার কারন কী?

অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, বিসিএস শিক্ষা আমার ক্যাডার চয়েস লিষ্টের ২য় তে ছিল। আগ্রহ এবং প্যাশানের কারণেই আসা।

একাডেমীক ও বিসিএস কোনটাকে গুরুত্ব দিয়ে পড়াশোনা চালিয়েছেন?

আসলে আমি একাডেমিক লাইফ শেষ হওয়ার আগে চাকরির কোন পড়াই পড়ি নাই। যখন যেটার গুরুত্ব দেয়া উচিৎ ছিল সেটাই করেছি। যদিও এখন কম্পিটিশন অনেক বেশি যারা বিসিএস দিতে চায় তাদেরকে একাডেমিক এবং জব রিলেটেড পড়াশোনা সমন্বয় করে পাশাপাশি চালিয়ে যাওয়া উচিৎ। তবে কোনভাবেই একাডেমিক পড়ালেখাকে অবজ্ঞা করা উচিৎ নয়।

বিসিএসে উত্তীর্ণ হওয়ার আগ পর্যন্ত সংগ্রাম-স্ট্রাগলের গল্পটা কিরকম ছিল।

আসলে স্ট্রাগল ছাড়া ভালো কিছু অর্জন করা কঠিন। আমি বিসিএস শেষ করার আগেই বিয়ে করেছিলাম। স্বাভাবিক ভাবেই আমার স্ট্রাগলটা একটু বেশিই ছিল। পড়ালেখার পাশাপাশি প্রচুর টিউশনি করতে হতো। তবে টিউশনি ধারুন কাজে দিয়েছে আমায়।

আপনার কী মনে হয় বিসিএসে কোন প্রতিষ্ঠান বা কোন সাবজেক্টকে আলাদা করে দেখা হয়?

এটা খুব ম্যাটার করে না। কেউ যদি ভালো পরীক্ষা দেয় সে যে বিশ্ববিদ্যালয় এবং যে সাব্জেক্টরই হোক না কেন ফলাফল অনুকুলে আসবে।

অন্য ক্যাডারের জন্য আবার বিসিএস দেওয়ার ইচ্ছা আছে?

আমার শেষ বিসিএস ছিল এটা। এজ শেষ তাই আর অংশগ্রহণের সুযোগ নাই।

নবীনদের বিসিএস প্রস্তুতি কীভাবে নেওয়া উচিত?

সিলেবাসটা ভালো করে বুঝে সিলেবাস ধরে ধরে বেসিক বইয়ের সাথে যেকোনো রেফারেন্স বই পড়লে সুযোগ বেশি থাকবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিজের দূর্বল সাইট টা খুঁজে বের করা এবং সেটা রিকোভার করার চেষ্টা করা। কমবেশি যতটুকুই পড়ুন না কেন সেটা যেন ইফিশিয়েন্ট ওয়েতে হয়।

প্রিয় ক্যাম্পাসের ছোটদের প্রতি পরামর্শ কী?

জুনিয়রদের উদ্দেশ্যে একটা কথাই বলব, বাস্তবতা ও পছন্দের ভিত্তিতে আগে নিজের ক্যারিয়ার ভিশন ঠিক করে ফেলতে হবে। আর সেটা অর্জনের যা যা করা দরকার সেটাই করতে হবে।

সিয়াম
শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *