বেওয়ারিশ কুকুর অপসারণের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে শেকৃবি শিক্ষক – শিক্ষার্থীরা

বেওয়ারিশ কুকুর অপসারণের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে শেকৃবি শিক্ষক – শিক্ষার্থীরা

মাজেদুল ইসলাম, শেকৃবি প্রতিনিধি

বসবাসের দিক দিয়ে নিকৃষ্টতম শহরের তালিকায় স্হান লাভ করেছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা।প্রায় চার কোটি লোকের বসবাস এ শহরটিতে।

বিশাল এ শহরটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ নামে দুইটি সিটি কর্পোরেশনের সৃষ্টি করা হয়েছে।

তন্মোধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অলিগলিতে বেওয়ারিশ কুকুরের প্রকোপে অতিষ্ঠ স্হানীয় জনগণ।তাই তারা ডিসেম্বর মাসের মধ্যে নগরপিতার কাছে এসব বেওয়ারিশ কুকুর অপসারণ করে সুন্দর ও সুশৃঙ্খল সিটি কর্পোরেশন প্রত্যাশার জন্য মানববন্ধন করে।

এরই ফলশ্রুতিতে এসব বেওয়ারিশ কুকুর অপসারণের কার্যক্রম শুরু করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন।

তবে এক্ষেত্রে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতেছে না, এ কাজে অাত্মনিয়োগ করা কর্মচারীবৃন্দ।কুকুর অপসারণ করার জন্য অচেতন বা এনেস্হিসিয়া করার যে নিয়মাবলি সে বিষয়ে ঘোর আপত্তি তুলতেছে প্রাণী চিকিৎসক গণ।

প্রাণীদেরও যে জীবন আছে এবং তাদের সুষ্ঠু স্বাভাবিক ভাবে বাঁচার অধিকার আছে এ বিষয়ের কোন দৃষ্টিপাতেই করা হচ্ছে না। ফলে ক্ষুব্ধ সাধারণ শিক্ষার্থী এবং বিশেষত ভেটেরিনারিয়ান ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা।

প্রতিবাদস্বরুপ, আজ দুপুর পৌনে ১২টায় রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের” অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি” এর উদ্যোগে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অবস্হানরত শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং উক্ত বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ঢাকাস্হ শিক্ষার্থীরা সানন্দে এমন হীন মানসিকতা সম্পূন্ন কাজের তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং কুকুর অপসারণের জন্য পদক্ষেপ গুলো উপস্হাপন করেন।

উপস্থিত বক্তৃতার মধ্যে- বিশ্ববিদ্যালয়টির অ্যানিমেল সায়েন্স অ্যান্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের অ্যানিমেল নিউট্রিয়েন্স, জেনেটিকস অ্যান্ড ব্রিডিং বিভাগের প্রফেসর ড. লাম ইয়া আসাদ, মেডিসিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. কে বি এম সাইফুল ইসলাম, মাইক্রোবায়োলজি ও প্যারাসাইটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. উদয় কুমার মোহন্ত, মেডিসিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ বিভাগের শিক্ষক ডা. দেলোয়ার হোসেন, অ্যানাটমি হিস্টোলজি অ্যান্ড ফিজিওলজি বিভাগের শিক্ষক ডা. সুজন কুমার সরকার, ফিশারিজ একোয়াকালচার অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স অনুষদের একোয়াকালচার বিভাগের শিক্ষক মীর মোহাম্মদ আলী, ভেট সায়েন্স অ্যান্ড এএইচ স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের ভিপি মো. রাশেদুল ইসলামসহ সংগঠনটির প্রায় অর্ধশত সদস্য অংশ নেন।

উক্ত মানববন্ধনে ডা. কে বি এম সাইফুল ইসলাম বলেন-সিটি কর্পোরেশনের কুকুর এনেস্থিসিয়া করার ক্ষেত্রে কুকুরে ওজন নেয়া, শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ সহ যেসব বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিতে হয়, তার কোনটাই মানা হচ্ছে না এবং এই কাজের ক্ষেত্রে কোন ভেটেরিনারিয়ান না থাকায় বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি CNVR- Capture Neuter Vaccination & Return অর্থাৎ বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে কুকুরগুলো ধরে, বন্ধ্যাত্বকরণ এবং ভেক্সিনেশন করার পর তাকে তার আগের জায়গায় ফেরত পাঠানোর প্রতি গুরুত্ব দেন। আর যদি অপসারণ করতেই হয়, সেক্ষেত্রে তাদের পুনর্বাসন করতে হবে।যেখানে তাদের টেরিটোরিয়াল ফাইট থাকবেনা, তাদের জন্য আবাসস্থল থাকবে, খাদ্যের যোগান থাকবে, সুস্থ স্বাভাবিক জীবনের নিশ্চয়তা পাবে।

ডা. উদয় কুমার মোহন্ত বলেন,কুকুরগুলোকে অমানবিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ধরা হচ্ছে। পরবর্তীতে এদের মেরে ফেলা হচ্ছে কিনা সে বিষয়েও তিনি যথেষ্ট সন্দেহ পোষণ করেছেন। আর এই নিধনের ফলে পরিবেশের ভারসাম্যের উপর প্রভাব ফেলবে, যার ফলাফল একটা নির্দিষ্ট সময় পর দেখা দিবে। সিটি করপোরেশনে নিযুক্ত ভেটেরিনারিয়ানের মতামতকে উপেক্ষা করার কারণে, তিনি সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের প্রতি নিন্দা জ্ঞাপন করেছেন।

ভেট সায়েন্স এন্ড এনিম্যাল হাজবেন্ডারী স্টুডেন্ট এসোসিয়েশনের ভিপি মোঃ রাশেদুল ইসলাম বলেন-বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল আইন-২০১৯ অনুযায়ী তালিকাভুক্ত প্রাণী চিকিৎসক অথবা টেকনিক্যাল ব্যক্তি ছাড়া এভাবে কুকুরকে চেতনানাশক প্রয়োগ করে আইন লংঘন করা হয়েছে। একটি সভ্য সমাজে অবলা প্রাণির প্রতি এরকম অমানবিক সিদ্ধান্ত নিন্দনীয়।

মানববন্ধনটির অন্যতম আয়োজক কামরুল ইসলাম তারেক বলেন-কুকুর নিধন বা অপসারণ নামে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন একদিকে যেমন চরম অমানবিক প্রক্রিয়ার আশ্রয় নিয়েছে, অপরদিকে তা প্রচলিত আইন অবমাননার শামিল। কেননা, প্রাণী কল্যাণ আইন ২০১৯ এর সাব সেকশন-৭ অনুযায়ী কোনো নির্দিষ্ট এলাকার মালিক বিহীন বেওয়ারিশ প্রাণী নিধন কিংবা অপসারণ আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এর মেয়র -এসব বেওয়ারিশ কুকুর অপসারণেের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রার ভেটেরিনারিয়ানের পরামর্শ ও উপযুক্ত নিয়মাবলি অনুসরণ করে এসব কুকুরের নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্হা করে প্রাণীদের সুষ্ঠু বিচরণের পরিবেশ উন্মোচন করে নগরকে সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করে বিশুদ্ধ ঢাকা উপহার দেবেন এমনটাই প্রত্যাশা সর্বসাধারণের।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *