বেকারত্ব সমস্যা, হালের শিক্ষা ব্যবস্থা ও সমকালীন ভাবনা

বেকারত্ব সমস্যা, হালের শিক্ষা ব্যবস্থা ও সমকালীন ভাবনা

মো.খায়রুল ইসলাম


জীবনে প্রয়োজনীয়তার শেষ নেই কিন্তু স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য উপযোগী অন্ন,বস্ত্র, বাসস্থানের অভাবে মানুষ তার স্বীয় সত্বাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে না।

এসব নিশ্চিতের লক্ষ্যেই মানুষকে কাজ করতে হয়। কেউ কৃষি, কেউ শিক্ষকতা, কেউ বানিজ্য করে আবার কেউবা কলম পিষে এ জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু যখন জীবিকা নির্বাহের কোনো উপায় থাকে না তখন দেখা দেয় বেকার সমস্যা।

আধুনিক বিশ্বে বেকারত্ব নাই এমন দেশ বিরল। এ সমস্যা যখন বিকট আকার ধারন করে তখন অর্থনীতির কাঠামো ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়, তখন দেখা দেয় সামাজিক বিশৃঙ্খলা।

প্রতিটি দেশের জনশক্তিই হচ্ছে সে দেশ গড়ার মূল হাতিয়ার। উন্নত দেশে উৎপাদনের উপাদানগুলো সুপরিকল্পিতভাবে কাজে লাগিয়ে কর্মক্ষম ব্যক্তিদের কর্মসংস্থান করা হয়। প্রয়োজনে অন্যান্য দেশ থেকেও জনশক্তি আমদানী করে কাজের গতিকে অব্যাহত রাখে। কিন্তু অনুন্নত দেশে সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে ও জনশক্তিকে যোগ্যতা অনুযায়ী ব্যবহারের অভাবে উৎপাদনগুলো সঠিকভাবে কাজে লাগানো সম্ভবপর হয় না। যার কারনে কর্মক্ষম ব্যক্তিদের কর্মসংস্থান হয় না। দেখা দেয় বেকারত্ব, ভেঙে যায় দেশের অর্থনীতি।

শুধু সে কারনেই নয়, আধুনিক যুগ আভির্ভাবের ফলে যন্ত্রপাতির দৌরাত্ম্যের গতি বৃদ্ধি পেয়েছে। পূর্বে যে কাজ দশজন লোকে করতো এখন একটা মেশিনই তার চেয়ে বেশি কাজ করতে সক্ষম হ‌চ্ছে। উন্নত দেশে উৎপাদনের উপাদানগুলোকে সঠিকভাবে সমন্বয় করে মনোনিবেশ করা হয় বলেই বেকারত্ব দেখা যায় না। যদিও যায় তবে সেটা নগন্য।

আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থাও বেকারত্বের জন্য দায়ী। শহরাঞ্চলে শিক্ষার হার একটু বেশি হলেও গ্রামাঞ্চলে এর হার তুলনামূলক কম।হাতে গোনা যে অঞ্চলগুলোতে শিক্ষার আলো পেয়েছে সেখানে আবার বৃত্তিমূলক শিক্ষা নগন্য।

যুগের সাথে তাল মিলিয়ে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে এখনো ঢেলে সাজানো হয়নি। এর ফলে একদিকে আশংকাজনকভাবে বেড়ে যাচ্ছে জনসংখ্যা, অন্যদিকে কর্মসংস্থানের অভাবে বেকার থাকছে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা। এই শিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত বেকাররা সমাজের আঙিনায় সৃষ্টি করছে নতুন নতুন অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা। বেড়ে যা‌চ্ছে হতাশা, বখা‌টেপনা।

জাতীয় জীবনে বেকারত্বের প্রভাব অত্যন্ত ভয়াবহ আকার ধারন করে। মধ্যবিত্ত সমাজ বেকারত্বের প্রধান শিকার। তাদের জীবিকার জন্য সুষ্ঠু পথ নেই, যেকোনো জীবিকা অবলম্বনের মানসিকতা নেই।দেশে কারিগরি শিক্ষার এমন বিকাশও ঘটেনি যাতে তা অবলম্বন করে বেকারত্ব কমানো যায়।

জাতির বৃহৎ স্বার্থে এই বেকারত্বের মূল উৎপাটন করতে হবে। সমস্যার জটিলতাকে ভয়াবহ বিবেচনা না করে এমন উপায় বের করতে হবে যাতে ব্যক্তি ও সমাজজীবনে এর অবসান ঘটে।

শিক্ষা যাই থাকুক না কেন শিক্ষার মিথ্যে মোহ ত্যাগ করতে হবে। জীবিকার যেকোনো উপায় অবলম্বনে যাতে কোনো দ্বিধা না থাকে সেভাবে নিজেকে তৈরি করতে হবে। কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে সবাইকে আগ্রহী হতে হবে।নিজেকে একজন উপযুক্ত উদ্যোক্তা হওয়ার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।

কুটির শিল্প স্থাপনও এক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। উৎপাদনের সকল উপাদানকে সমন্বয় করে উৎপাদন করতে হবে। কারিগরি শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে যোগ্যতার ভিত্তিতে জনশক্তিকে কাজে লাগাতে হবে।

চাকরি বিনিয়োগ কেন্দ্রের মাধ্যমে জনশক্তিকে বিভিন্ন দেশে নিয়োজিত হবার সুযোগ দিলে বেকারত্ব কিছুটা হলেও কমে যাবে। তাছাড়া দেশের পলিসি মেকার্সদের সুপরিকল্পিত ও যুগোপযোগী চিন্তাধারার মাধ্যমে নতুন নতুন কর্মের সৃষ্টি করতে হবে।


লেখকঃ শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *