বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক ভবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে আল্টিমেটাম

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক ভবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে আল্টিমেটাম

বেরোবি প্রতিনিধিঃ আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক ভবন প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার নোটিশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। এ সময়ের মধ্যে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করা হলে বড় ধরনের আন্দোলনে নামবে বলে হুশিয়ারি দেয়া হয়েছে।

শনিবার(৬ ফেব্রুয়ারী) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু পরিষদ ও আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের আরেক সংগঠন নীল দল নিষেধাজ্ঞা জারির নোটিশটি প্রত্যাহারের দাবিতে একটি মিছিল বের করে। মিছিলে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরাও অংশগ্রহণ করে। মিছিলটি ক্যাম্পাসের শেখ রাসেল মিডিয়া চত্তর থেকে শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘুরে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

সমাবেশে বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান বলেন, উপাচার্য, রেজিস্ট্রার বছরের পর বছর অনুপস্থিত থেকে তাঁরা নিজেরাই রাষ্ট্রীয় আইন ভঙ্গ করে চলেছেন, প্রতিষ্ঠানের সকল আইন-রীতি ধ্বংস করছেন, তাঁদের এইসব হঠকারী সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়কে আরো ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ভিসি নিয়োগ শর্ত ভেঙ্গে অনিয়ম করে বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে চলেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় এমন ফরমান জারি করার এখতিয়ার রাখেন না তাই ভিসি-রেজিস্ট্রারসহ সংশ্লিষ্টদের বিচারের দাবি জানান তিনি। এসময় আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে নিষেধাজ্ঞার নোটিশ প্রত্যাহার না করা হলে আগামীকাল থেকে আন্দোলনের হুশিয়ারি দেন তিনি।

এদিকে প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে ‘অগণতান্ত্রিক’ উল্লেখ করে প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ফ্রন্ট। এছাড়াও ভিসি বিরোধী শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংগঠন অধিকার সুরক্ষা পরিষদ এক প্রতিবাদলিপিতে এঘটনাকে বাংলাদেশের সংবিধান পরিপন্থী ও সংবিধানের স্পষ্ট লঙ্ঘন উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়ে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। এঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা ছাড়াও শাখা ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে ৩১ জানুয়ারি স্বাক্ষর হওয়া একটি নোটিশ ভাইরাল হয়। এতে প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবন, ভিসির বাংলো, একাডেমিক ভবন এবং শ্রেণিকক্ষের সামনে মিছিল-মিটিং, অবস্থান ধর্মঘট, বিক্ষোভ প্রদর্শন, স্লোগান, বক্তব্য প্রদান ও মৌন মিছিলসহ প্রতিবাদের অংশ হিসেবে তালা লাগানোর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। নোটিশ ভাইরাল হওয়ার পর ক্ষোভে ফুলেফেঁপে উঠে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ও বাইরেসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে সমালোচনার ঝড়।

প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দাবি নিয়ে প্রশাসন ভবনে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন করার ঘটনায় সরকারের সর্বোচ্চ মহলে বেশ সমালোচনা হয়। এরপর সিন্ডিকেটের বিশেষ সভায় এ নিয়ে সমালোচনা হয়। এজন্য অন্যান্য মহলের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে-এমন বিষয় বোঝাতেই এসব নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. একে এম ফরিদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে নোটিশের তীব্র প্রতিবাদ জানান তিনি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে সংবিধান ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন কোন ঘটনা ঘটে নি যে সিন্ডিকেটের বিশেষ সভা করে এরূপ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন সংসদ কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রনীত আইনকে লঙ্ঘন করে বিভাগীয় প্রধান, ডিনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিয়ে চলেছেন। এ অবস্থায় এ ধরনের নোটিশই বলে দেয় যে এ প্রশাসনের অপকর্মগুলো বিনা প্রতিবাদে ও নির্বিচারে চালিয়ে যেতে চায়।

তবে বরাবরের মতো এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আতিউর রহমান, রেজিস্ট্রার আবু হেনা মোস্তফা কামাল, প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. সরিফা সালোয়া ডিনা, ভিসি অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হয়। কিন্তু কেউই ফোন রিসিভ করেননি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *