বেরোবিতে ‘বি’ ইউনিটের প্রশ্নবিদ্ধ ভর্তি কার্যক্রম স্থগিতের জন্য শিক্ষক সমিতির চিঠি

বেরোবিতে ‘বি’ ইউনিটের প্রশ্নবিদ্ধ ভর্তি কার্যক্রম স্থগিতের জন্য শিক্ষক সমিতির চিঠি

বেরোবি টুডেঃ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ২০১৯-২০ সেশনে ‘বি’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা বিতর্কে সংশ্লিষ্ট ইউনিটের ভর্তি কার্যক্রম বন্ধের দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।

বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) রেজিস্ট্রার আবু হেনা মোস্তফা কামাল বরাবর এক চিঠিতে এ দাবি জানায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।

জানা যায়, বেরোবি ভর্তি পরীক্ষায় দুই ইউনিটে ফেল করলেও ‘বি’ ইউনিটে রেকর্ড পরিমাণ নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন মিশকাতুল জান্নাত নামে এক ভর্তিচ্ছু। এটি অবৈধ উপায়ে করা হয়েছে বলে দাবি শিক্ষক সমিতির।

শিক্ষক সমিতি জানায়, গত বুধবার (৪ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক ইমরানা বারী’র ছোট বোন মিশকাতুল জান্নাতের রেকর্ড সংখ্যক মার্কস নিয়ে প্রথম স্থান অধিকারের বিষয়টি জানাজানি হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে সমালোচনার ঝড় ওঠে। নিয়ম অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা বা কর্মচারীর নিকটাত্মীয় ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলে লিখিতভাবে জানানোর কথা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। এছাড়া প্রভাষক ইমরানা বারী ও তার ছোট বোন মিশকাতুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর ঘনিষ্ঠ বলেও অভিযোগ উঠেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষক বলেন, এক ভর্তিচ্ছু কীভাবে উপাচার্যের মতো জাতীয় ব্যক্তিত্বের ফেসবুক বন্ধু, যেখানে ক্যাম্পাসের অনেকেই চাইলেও তার বন্ধুতালিকায় যুক্ত হতে পারেননি । উপাচার্য ঐ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর বগুড়ার বাড়িতেও বেশ কয়েকবার ঘুরতে গিয়েছিলেন। ভর্তি পরীক্ষার ২/৩ দিন আগে অভিযুক্ত ওই শিক্ষার্থী ও তার বোন প্রভাষক ইমরানা ভিসির বাসায় গিয়েছিলেন বলেও দাবি করেন তিনি।

এছাড়া গত ২ ও ৩ ডিসেম্বর বেরোবিতে ভর্তিচ্ছুদের মৌখিক, ওএমআর এ পরীক্ষার্থীদের হ্যান্ডরাইটিং যথাযথভাবে না মিলিয়েই ‘বি’ ইউনিটের ক্ষেত্রে তড়িঘড়ি করে ভর্তি করানোরও অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখার দাবি তুলেছেন শিক্ষকরা।

এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহ-সভাপতি তরিকুল ইসলাম বলেন, এই ঘটনার চূড়ান্ত তদন্ত হওয়া উচিত। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধেও যেহেতু সন্দেহের তির আছে, তাই তিনি তদন্ত কমিটি গঠন করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা ইউজিসি থেকে কমিটি করে এ ঘটনার তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।

এদিকে গত বছরে ভর্তি জালিয়াতির বিরুদ্ধে যারা সোচ্চার ছিলেন, এ বছর তাদের ভর্তির মূল কার্যক্রম থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান বলেন, সারাদেশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান চালাচ্ছে। আমরা ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা দাবি করছি।

নীল দলের সাধারণ সম্পাদক আসাদ মণ্ডল বলেন, ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় সমস্যা হওয়ার মূল কারণ- বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের স্বৈরাচারীভাবে এই ইউনিটের ডিনশিপ নিয়ে থাকা। তিনি যেহেতু উক্ত ইউনিটের ডিন, তাই তার গঠিত তদন্ত কমিটি কতোটা গ্রহণযোগ্যতা পাবে সেটিও ভেবে দেখার বিষয়। ভালোভাবে তদন্ত করলে এই ইউনিটে আরও অনেক মিশকাতুল জান্নাত বের হতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. গাজী মাযহারুল আনোয়ার বলেন, এ ইস্যুতে ‘বি’ ইউনিটের সমন্বয়ক যেসব শব্দ ব্যবহার করে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে আমাদের শঙ্কা জাগে। বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শিক্ষিকা ইমরানা বারী’র সাথে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি জানান, কলা অনুষদের মিটিংয়ে তিনি প্রশ্নপত্র প্রণয়নের জন্য প্রস্তাব পেলে নিজের ছোটবোন ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে জানিয়ে প্রশ্নপত্র প্রণয়নে অপারগতা প্রকাশ করেন। অন্য ইউনিট এর সমন্বয়ক বা ডিন কে বিষয়টি জানানোর কোন নিয়ম নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনারা এই বিষয়ে তদারকি করতে চাইলে করতে পারেন, ইউ আর মোস্ট ওয়েলকাম।

অন্যদিকে উপাচার্য ডক্টর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বর্তমানে দেশের বাইরে থাকায় তার সঙ্গেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।



সংবাদ প্রেরক দ্য ক্যাম্পাস টুডের বেরোবি প্রতিনিধি সাকীব খান।



সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *