বেসরকারী শিক্ষকদের বেতন মোবাইল ব্যাংকিং এ প্রদান কতটুকু যৌক্তিক?

বেসরকারী শিক্ষকদের বেতন মোবাইল ব্যাংকিং এ প্রদান কতটুকু যৌক্তিক?

মোহাম্মদ মুজাহিদুল আমিন সোহেল


গত কিছুদিন ধরে একটি বিষয় নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে, আর তা হলো ঝামেলা কমানোর জন্য (!) বে-সরকারী এমপিওভূক্ত শিক্ষকদের বেতন মোবাইল ব্যাংকিং এর
মাধ্যমে প্রদান করা হবে।

আসলেই কী ঝামেলা কমবে? আমার মনে হয় ঝামেলা তো কমবেই না বরং বাড়বে।

সমস্যা-১: একসাথে ৩৪২৪৭৫ টি একাউন্ট এ টাকা পাঠাতে হবে। ধরে নিলাম ঈদুল ফিতরের সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যাকাত ফান্ডের টাকা প্রেরণের বিড়ম্বনার মত ঘটনা
এখানে ঘটবেনা, এটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে করা হবে, তাই কোন ভূল হবেনা (!) ।

তাহলে এই ৩৪২৪৭৫ জন শিক্ষক কর্মচারীর প্রায় প্রত্যেকেই একটি নির্দিষ্ট দিনে টাকা তুলতে এজেন্ট দের কাছে যাবে। অবস্থাটা একটু ভেবে দেখেন। এই চাপ সামাল দিতে নিশ্চই মোবাইল ব্যংকিং এজেন্টদের পক্ষে সম্ভব নয়। প্রতিমাসে প্রায় ৭১৪০৮৬৫১৮৭ টাকা একদিন/ দুই দিনের মধ্যে পরিশোধ কার প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। এবার বলবেন প্রত্যেক মোবাইল ব্যংকিং নির্দিষ্ট কোন ব্যাংকের অংশ, সে ব্যাংকে গেলেই তো হয়। তাহলে ঘুরে ফিরে এক কথাই দাঁড়ালো এবং
ঝামেলা ও হয়রানি বাড়লো।

সমস্যা-২: ৭১৪০৮৬৫১৮৭ টাকা পরিশোধ করার জন্য মোবাইল ব্যাংক কোম্পানীর কমিশন ১.৭৫% হিসেবে দিতে হবে ১২৪৯৬৫১৪১ টাকা।

এক বছরে এর পরিমাণ হলো ১৪৯৯৫৮১৬৮৯ টাকা। কে দিবে এই টাকা? যদি সরকার এই কমিশনের টাকা পরিশোধ করে তবে প্রশ্ন হলো কেন এই খরচ? যেখানে একজন শিক্ষক অবসরে গিয়ে তিন বছর অর্ধাহারে অনাহারে থেকে যখন মৃত প্রায় বা কোন কোন ক্ষেত্রে মরে যাওয়ার পরে ওনার অবসর ভাতা পান সেখানে অযথা প্রায় ১৫০ কোটি টাকা খরচ করার কি অর্থ?

আর যদি এই কমিশনের টাকা শিক্ষক কর্মচারীদের দিতে হয় , তবে প্রশ্ন কেন তারা এই টাকা দিবেন? আমি এটাকে অপচয় মনে করছি।

সমস্যা -৩: কোন শিক্ষক বা কর্মচারী অবসরে গেলে ডাটাবেজ থেকে ওনার নাম অটমেটিক মুছে যাবে। কিন্তু কেউ হঠাৎ মারা গেলে বা উচ্চতর গ্রেডে প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করলে
এই তথ্য হালনাগাদ করতে করতে যে সময় লাগে সে সময়ে টাকা প্রেরণে যে জটিলতা সৃষ্টি হবে তা কিভাবে নিরসন করা হবে?

সমস্যা -৪: যারা ইতমদ্যে ব্যাংক থেকে সার্ভিস লোন নিয়েছেন তাদের লোনের কিস্তি কিভাবে পরিশোধিত হবে? উনি তো আর মোবাইল ব্যাং থেকে লোন নেননি।

এত এত সমস্যা সামনে রেখে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে এমপিওর টাকা পরিশোধ করাটা একটি অযৌক্তি সিদ্ধান্ত বলে আমি মনে করি।

সমাধান: সরকার যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে বেসরকারী শিক্ষকদের বেতন পরিশোধ করতে চান তাহলে BEFTN (বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার নেটওয়ার্ক ) ব্যবহার করে প্রত্যেক শিক্ষকের ব্যাংক একাউন্ট এ টাকা প্রেরণ করতে পারেন। এটি নিরাপদ। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকে শিক্ষক/ কর্মচারীদেরকে চেক বই এর
বদলে এটিএম কার্ড প্রদান করতে পারেন যার সাহায্যে যে কোন ব্যাংকের যে কোন শাখা থেকে টাকা উত্তলোন করা যায় BEFTN ব্যবহার করে।

আশা করছি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে অযথা হয়রানি ও অপচয় এর হাত থেকে রাষ্ট্র ও বেসরকারী শিক্ষক-কর্মচারীদের রক্ষা করবেন।
সবাইকে ধন্যবাদ।

মোহাম্মদ মুজাহিদুল আমিন সোহেল
শিক্ষক ও লেখক।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *