বয়স যখন বাইশ

বয়স যখন বাইশ

বয়স যখন বাইশ
কাজী আদম



মহল্লা দিয়ে যখন হেঁটে যায়,
আমায় দেখে প্রতিবেশীরা মত্ত থাকে আমার আলোচনায়।
ফিসফিস করে একে-অপরকে বলে এই মেয়ের
বয়স হবে কত?
তাচ্ছিল্য স্বরে কেউ বলে হবে আর কত?

বাইশ কিংবা তেইশের ট্রেনে চড়েছে,
হকচকিয়ে!পাশের জন বলে কি বলিস বাবা! এই সেরেছে।
সুখের বাইশ বসন্ত পার করেছে, এখন বিয়ে হবে কবে?
ওনারা আমার বাইশ বসন্ত দেখেছে,বাইশ বসন্তের
আড়ালের দুঃখ দেখেনি তবে।

তোমরা আমার বাইশ বসন্ত দেখেছো,
দেখো নি আমার জীবনের বাইশটি কালবৈশাখী,
কত ঝড়-ঝঞ্ঝা গেছে বয়ে,কত দুঃখ-বেদনায় ছিলাম
চার-দেয়াল আর নিদ্রাহীন রাত গুলো তার সাক্ষী।

তোমরা দেখেছো আমার জীবনে বসন্তের ফুল ফুটতে,
কোনো দিন দেখনি পাড়ার নষ্ট ছেলেদের
উস্কানির যন্ত্রণায় মুখ লুকিয়ে কাঁদতে ।

অথচ তোমাদের চোখে আমার বাইশ বসন্ত পড়লো ধরা,
তোমরা কি দেখেছো আমার জীবনে সুখের খরা?
বয়স আমার বাইশ হয়েছে, তাই হাসতে হাসতে
বলো বিয়ে হবে কবে?আমরা বিয়ে খাবো!
কখনো কি জানতে চেয়েছো?

কত দিবস কাটিয়েছি অসহ্য স্মৃতির যন্ত্রণায়,
মাঘের সন্ন্যাসী করুন শীতের কাছে
বস্ত্রহীন যেমন অসহায়,
তেমনি আমি অসহায় হয়েছি অসংখ্যবার দুঃখের কাছে
কাবু।

কিন্তু তোমাদের মুখ থেকে সরে না,বাইশ বসন্তি
মেয়ের বিয়ে খাবার কলরব,
যদি বলি এখন কি বিয়ে,সংসার সামলানোর সময়?
একসাথে সবাই উঠো বলে,সবি বয়সের
দোষ,মেয়ে তুই বড্ড পেকেছিস এবার কর চুপ।

না পারি বলতে,না পারি বরদাস্ত করতে,লোক লজ্জার
ভয়ে বখাটেদের যন্ত্রণায় থাকতে হয় নিশ্চুপ ।
মুখ ফোটে কিছু বললেই,সবাই বলো! সবি বয়সের
দোষ, মেয়ে তুই বড্ড বেড়ে গেছিস এবার কর চুপ।

তোমাদের ছেলেরা বাইশ বছর বয়সেও কলেজ যায়,
স্বপ্ন দেখো হবে তাঁরা ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার,
তবে কেন!সবে বাইশ হওয়া মেয়ের গলে
ঝুলাতে চাও স্বামীর সংসার?
বয়স বাইশ হয়েছে তো কি হয়েছে?

আমিও তো স্বপ্ন দেখি যোগ্য মানুষ হবার।
আমিও তো হতে পারি শেষ ভরসা মা-বাবার,
তোমরা সবাই মিলে আমার স্বপ্নগুলো কেন ধ্বংস করো বারবার?
বয়স আমার বাইশ, চাইলেই পারি প্রতিবাদিনী হবার,

বয়স আমার বাইশ তাই অদম্য ইচ্ছা শক্তি নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবো, তোমাদের যা ইচ্ছা বলো,এতে কিছু যায় আসে না
আমার, বয়স আমার প্রতিবাদী বাইশ ,সময় এখন এগিয়ে চলার।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *