ভারতের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় তালিকায় প্রথম জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া

ভারতের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় তালিকায় প্রথম জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া

ক্যাম্পাস টুডে ডেস্ক


গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর থেকে ভারতসহ বিশ্ব গণমাধ্যমের শিরোনামে ছিল দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়।

ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) বিরোধিতায় নেমে বিক্ষোভ ও আন্দোলনের সময় আলোচনার কেন্দ্রে ছিল দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। সমসাময়িক আলোচনার শীর্ষে থাকা সেই বিশ্ববিদ্যালয়টি পাঠ্যক্রম ও পড়ানোর ভিত্তিতে এখন ভারতের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে।

দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের করা তালিকায় ৯০ শতাংশ স্কোর করে সবার ওপরে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। ৮৩ শতাংশ স্কোর করে এরপর (২য় স্থান) অরুণাচল প্রদেশের রাজীব গান্ধী বিশ্ববিদ্যালয়। ৮২ ও ৭৮ শতাংশ স্কোর করে তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে আছে দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ) ও আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ডার গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম, স্নাতকোত্তর, পিএইচডি, এমফিল অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের সংখ্যা, তাঁদের কাজ বা গবেষণার মানসহ শিক্ষাবিষয়ক বিভিন্ন সূচক বিবেচনা করা হয়েছে তালিকা প্রস্তুতির সময়। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা, অন্য রাজ্য এবং অন্য দেশ থেকে আসা শিক্ষার্থীদের সংখ্যার শতাংশও স্কোর গড়তে সাহায্য করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে। আবার ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত, শিক্ষকের শূন্যপদ, ভিজিটিং অধ্যাপক প্রভৃতিও বিচার করা হয় স্কোর করার সময়। পাশাপাশি, ক্যাম্পাস ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে ন্যাশনাল ইলিজিবিলিটি কাম এন্ট্রান্স টেস্ট বা নেটের মতো পরীক্ষাগুলোতে কতজন সুযোগ পেয়েছেন, তাও বিবেচনায় আনা হয়েছে। পরিচালন দক্ষতা, অর্থের সঠিক ব্যবহার এবং কিছু কো-কারিকুলার ও এক্সট্রা-কারিকুলার অ্যাকটিভিটিতেও অনেকখানি বেশি স্কোর করেছে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়।

এইআইআরএফ, এনএএসি প্রভৃতি দেশি ও আন্তর্জাতিক তালিকায়ও ভালো জায়গায় আছে জামিয়া। জামিয়ার ভাইস চ্যান্সেলর নাজমা আখতার জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন সাফল্যে তাঁরা খুশি। আসছে বছরে তাঁরা এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে চান।

ভারতের ইউনিভার্সিটি গ্রান্টস কমিশন (ইউজিসি) ও মানবসম্পদ উন্নয়ন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে এমওইউ সই করেছিল। এই এমওইউ সইয়ের পর নির্ধারিত পাঠ্যক্রম ও পড়ানোর পঠন-পাঠনের ভিত্তিতেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্কোর তৈরি করা হয়। জামিয়াই প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়, যারা ২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো এই এমওইউ সই করে।

আলোচনার শীর্ষে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়টি ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) বিরোধিতা করে নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিরুদ্ধে জামিয়ার শিক্ষার্থীরা লাগাতার আন্দোলন করেন। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন, নাগরিক পঞ্জির মতো ইস্যুতে নির্যাতন সয়ে আন্দোলন চালিয়ে গেছেন জামিয়ার শিক্ষার্থীরা। এর জন্য খেসারতও দিতে হয়েছে তাঁদের। কপালে ‘দেশদ্রোহী’ খেতাব জুটেছিল।

সে সময় আন্দোলনকারীদের ওপর অমানবিক নির্যাতনও চালানো হয়েছে। পুলিশ দিয়ে আন্দোলনকারীদের মারধর করা হয়। পুলিশের পেটানোর সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে।

দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) শিক্ষার্থীরাও সরকারের রোষানলে পড়েছিলেন। বিভিন্ন ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে আন্দোলন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাম শিক্ষার্থীরা। বিতর্ক তুঙ্গে ওঠে যখন আরএসএসের শাখা সংগঠন অখিল ভারতীয় পরিষদের শিক্ষার্থীরা জেএনইউয়ের ছাত্রাবাসে হামলা চালান। শ্লীলতাহানি ও মারধর থেকে রক্ষা পাননি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকেরাও। হামলায় গুরুতর আহত হন জেএনইউর নির্বাচিত ছাত্রপ্রতিনিধি বাম নেত্রী ঐশী ঘোষ।

এদিকে ভারতের সেরাদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয় জায়গা করে নিয়েছে। এ বছরের এপ্রিলে সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করার কথা ছিল। তবে করোনা মহামারির কারণে তালিকা প্রকাশ পিছিয়ে দেওয়া হয়। সম্প্রতি যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, তার ১১ নম্বরেই আছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। তারপরই রয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়।

এদিকে প্রকাশিত ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় রয়েছে চেন্নাইয়ের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি মাদ্রাজ। তারপরই রয়েছে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স (বেঙ্গালুরু)। প্রথম পাঁচেই রয়েছে খড়গপুরের আইআইটি-ও। পশ্চিমবঙ্গ থেকে জায়গা করে নেওয়া বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৬৯ নম্বরে।

তথ্যসূত্র: স্ক্রল ডট ইন ও প্রথম আলো।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *