ভার্চুয়াল ক্লাস: সর্ব রোগের এক ঔষধ!

ভার্চুয়াল ক্লাস: সর্ব রোগের এক ঔষধ!

সাজু সরদার


উপরিউক্ত শিরোনামের কারণে আপনার ভ্রু-কুচকে যেতে পারে! তবে কুঁচকানো ভ্রু সম্প্রসারিত হবে যখন আপনি ভার্চুয়াল ক্লাসের গুনাগুণ সম্পর্কে জানতে পারবেন, যেটা উক্ত শিরোনামের সাথেই তুলনা যোগ্য। করোনা পরিস্থিতিতে দেশের সকল প্রকার শিক্ষা কার্যক্রম যখন স্তব্ধ, তখন জুম, গুগল মিট, মাইক্রোসফট টিমস, ওয়েবেক্স ইত্যাদি মাধ্যমে অনলাইন ক্লাস শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সকলের মনে জ্বলে উঠেছিলো আশার প্রদীপ হয়ে। কিন্তু এই জ্বলা আবার জ্বালা হয়ে দেখা দিয়েছিলো যখন বোঝা গেল উক্ত মাধ্যমে শুধু ক্লাস নেওয়া যায়।

ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাসের কোন কোর্স ম্যাটেরিয়ালস বা শিক্ষা উপকরণ প্রদানের জন্য অথবা মূল্যায়ন সূচক পরীক্ষা বা অ্যাসাইনমেন্ট জমা নেওয়ার জন্য গুগল ফরম, গুগল ক্লাসরুম ইত্যাদি আলাদা আলাদা প্লাটফর্মের দ্বারস্থ হতে হয় যেটা শিক্ষার্থীদের কাছে দুর্বোধ্য মনে হয়। তারপরও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি যাচাই করা যায় না, শিক্ষার্থীদের শিখন মুল্যায়নের জন্য সহজভাবে কুইজ টেস্ট বা পরীক্ষা নেওয়া যায় না।

এমতাবস্থায়, শিক্ষাখাতের এসকল সমস্যার সমাধান করার প্রত্যয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বাস্তবায়নাধীন এবং ইউএনডিপির সহায়তায় পরিচালিত ডিজিটাল বাংলার সেবা দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া সংস্থা “এটুআই” উদ্ভাবন করেন ভার্চুয়াল ক্লাস প্লাটফর্ম “ভার্চুয়াল ক্লাস (https://virtualclass.gov.bd/)”। গত ২৪ জুন মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা উপমন্ত্রী, তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রীসহ বেশকিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের উপস্থিতিতে এই নতুন ও কার্যকরী প্লাটফর্মটি উদ্বোধন করা হয়।

এই প্লাটফর্মে যুক্ত থেকে খুব সহজভাবে অনলাইন পাঠদানসহ সকল সহায়ক কার্যক্রম পরিচালনা সম্পন্ন করা সম্ভব। এপ্রিলের শুরু থেকে জুম বা অন্যান্য সফটওয়ারের মাধ্যমে ক্লাস পরিচালনা করলেও উদ্বোধনের পর থেকেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ ভার্চুয়াল ক্লাস প্লাটফর্মে যুক্ত থেকেই অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

এই প্লাটফর্মের মাধ্যমে যেমন লাইভ ক্লাস নেওয়া সম্ভব তেমনি শিক্ষা উপকরণ হিসেবে বিভিন্ন ধরনের মাল্টিমিডিয়া এবং অডিও-ভিজুয়্যাল কনটেন্ট, বিভিন্ন ধরনের ডকুমেন্ট (যেমন-পিডিএফ, পাওয়ারপয়েন্ট, ছবি/ডায়াগ্রাম ইত্যাদি) এবং বিভিন্ন ধরনের লিঙ্ক সংযুক্তি আকারে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের দৈনিক হাজিরা, কুইজ, অ্যাসাইনমেন্ট, পরীক্ষা ইত্যাদি নির্ভরযোগ্য মাধ্যমে সুরক্ষিতভাবে এবং সহজে গ্রহণ করা যায়। বোনাস হিসেবে শিক্ষার্থী-শিক্ষকের মধ্যে আলোচনা এবং প্রশ্নোত্তরের সুযোগতো আছেই। প্রথম দিকে কিছু সমস্যা থাকলেও ভার্চুয়াল ক্লাস প্লাটফর্মের উদ্যোক্তাদের প্রচেষ্টা ও নিরলস পরিশ্রম সকল সমস্যাকে দূর করে দিন দিন এই প্লাটফর্মকে করছে সহজে ব্যবহারযোগ্য।

করোনাকালে করোনার সুবাদে ভার্চুয়াল ক্লাস প্লাটফর্মেই অনলাইন ক্লাস সংক্রান্ত সকল সমস্যা সমাধান (ঔষধ) পাওয়া যাচ্ছে। যেটা একের (১) ভিতর দুই (২) নয় একের ভিতর একশ’র (১০০) সমতুল্য! তবে এই ঔষধের কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য মোবাইল অপারেটরদেরকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্ন মানসম্মত ইন্টারনেট সংযোগের ব্যবস্থা করতে হবে এবং দেশের যে সকল শিক্ষার্থীরা আর্থসামাজিক দুর্বল অবস্থার কারণে অনলাইন ক্লাস বা ভার্চুয়াল ক্লাসে যুক্ত হতে পারছে না তাদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। এখনিই সময় এগিয়ে আসার, মানবিকতা আর মনুষ্যত্বের পরিচয় দেওয়ার।

বর্তমান সময়ে যখন বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠান অনলাইন ক্লাস শেষ করে পরীক্ষার জন্য তীর্থের কাকের মতো বসে আছে, তখন এই ভার্চুয়াল ক্লাস তাদের কাছে হতে পারে মরুর দেশে পানির ফোয়ারার মতো! কারণ এই প্লাটফর্মের মাধ্যমেই সহজ ভাবে সম্পন্ন করা যেতে পারে শিক্ষার্থীদের আভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন এবং নেওয়া যেতে পারে যেকোন ধরনের পরীক্ষা। তবে সেই পরীক্ষা গ্রহণ, প্রশ্ন প্রনয়ন এবং উত্তর প্রদান পদ্ধতি হতে হবে সৃজনশীল ও গঠনমূলক।

ভার্চুয়াল ক্লাসরুমের মতো সৃজনশীল উদ্ভাবনে এবং ব্যবহারে শিক্ষা ব্যবস্থা হোক সেশনজট মুক্ত, শিক্ষাজীবন হোক মধুর হতাশাবিহীন।

লেখকঃ শিক্ষক, ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *