ভালোবাসার ৩৬৫ দিন | রাছি

ভালোবাসার ৩৬৫ দিন | রাছি

ভালোবাসা মানে স্মৃতিতে মোড়ানো রংপেন্সিলের বাক্স। এক এক রঙ এঁকে যায় এক একটি প্রহর। তেমনি এক রাতের ঘড়িতে সাড়ে এগারোটা। অচেনা এক নাম্বারে মুঠোফোন বেজে ওঠে। সবুজ বোতামের স্পর্শে ওপাশে থেকে বললো-‘তুমি আমার বন্ধুকে নিয়ে ক্রিটিসিজম কেন করেছো’?

আমি কিছু না বলতেই ফোন কেঁটে গেল। ব্লক তালিকায় রেখে দিল আমাকে। ছেলেটি আমার সহপাঠী। তবে সেভাবে পরিচয় ছিল না। কিছুটা অসস্তি ও প্রচন্ড রাগ লেগেছিল সেদিন। ৩৬৫ দিন আগের কথা এটি।

ক্লাসে দুজনের ঝগড়া লেগেই থাকত। আমি ১৬ বললে, সে বলতো ৬১! একদিন ঝগড়া করে ৩ কিলোমিটার হেঁটেছি। পথে এক দু শব্দ বলতেই ঝগড়া লেগে যেত। এভাবেই চলল কয়েক মাস।

ক্যাম্পাসের প্রোগ্রাম, ক্লাসের ট্যুর, প্রেজেন্টেশন, একাডেমিক পড়াশোনা’র ব্যস্ততায় আমাদের দূরত্ব কমতে থাকে। বিরক্তগুলো আকস্মিকভাবে অভিমানে রুপ নিল। এক ফাল্গুনের দিন, বন্ধুরা গিয়ে ছিলাম মানিকগঞ্জ বালিয়াটি জমিদার বাড়ি। সেদিনই আমাদের মধ্যে প্রথম ভাব হয়।

এরপর কুমিল্লা’র ময়নামতি, শালবনবিহার, বৌদ্ধ বিহার, নারায়নগঞ্জের পানাম সিটি, চলতে থাকে আমাদের ঘোরাঘুরি। গোলাপ গ্রামে গিয়ে দিল এক লাল গোলাপ। বাড়তে থাকল দুজনের বন্ধুত্ব। তর্ক-বিবাদের পরিবর্তে পেতে থাকি তার যত্ন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় খেতে খেতে দুপুর থেকে বিকেল। ক্ষণে ক্ষণে আমাদের মধ্যে আস্থার জায়গা তৈরি হয়। এক ছাতায় দু’জন বৃষ্টিতে আধাআধি ভেজা। ছাতা নিয়ে টানাটানি। আরও কত কি!

আমার জন্মদিনে তার দেওয়া লাল, হলুদ আর কালো চুরি। তার হাতে বানানো কার্ড। প্রথম উপহার ছিল মেলা থেকে কেনা এক জোড়া কানের দুল। তখন আমাদের বন্ধুত্বের সবে শুরু। এক রঙের শাড়ী-পাঞ্জাবী, শীতের পোষাক (হুডি) আমাদের শত তর্ক-বিতর্ক ও ভালোবাসার সাক্ষী।

প্রায় আড়াই ঋতু ঘরবন্দী আমরা। গ্রীষ্মকাল চলে গেল, বর্ষাও প্রায় শেষ। ক্যাস্পাসের ব্যস্ততম সময়গুলো এখন অবসরে। ক্লাসে সবার শেষে ঢুকে দাঁড়িয়ে থাকা। ক্লাসের ফাঁকে টুই মেরে চা, পিঠা, ঝালমুড়ি, ফুচকা খাওয়া’র ধুলোমাখা স্মৃতিগুলো চোখের সামনে ভাসে।

৬ আগস্ট, অন্য রকম এক দিন। আমাদের এক সাথে ডানা ঝাপটানো শুরু ১৯ সালের এইদিনে।

ভালোবাসার ৩৬৫ দিন আজ।

কাছে নেই সেই মানুষটি। যার জন্য আমি ভালোবাসায় সিক্ত। সময় এখন প্রতিযোগীতার। নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার। ঝুলি ভর্তি রাগ, কথা কাটাকাটি’র দিনগুলো এখন আর কষ্ট দেয়না। ঠোঁটের কোনায় একটু হাসিতে মিলিয়ে যায়।

রাছি
শিক্ষার্থী, গণ বিশ্ববিদ্যালয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *