ভূমিকম্প কি, ভূমিকম্প কাকে বলে, করণীয়

ভূমিকম্প কি, ভূমিকম্প কাকে বলে, করণীয়

ভূমিকম্প কি? ভূমিকম্প হলো পৃথিবীর ভূত্বক বা ভূত্বকের নিচে থাকা ভূ-স্তরগুলির দ্রুত এবং হঠাৎ ঝাঁকুনি। ভূমিকম্পের কারণ হলো ভূ-ত্বক বা ভূ-স্তরগুলির মধ্যে থাকা শিলা বা অন্যান্য ভূতাত্ত্বিক উপাদানগুলির মধ্যে টেনশন বা চাপের অসম বন্টন। এই টেনশন বা চাপের অসম বন্টন যখন একটি নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করে তখন ভূমিকম্প হয়। ভূমিকম্প কি, ভূমিকম্প কাকে বলে, করণীয় –

ভূমিকম্প কাকে বলে ? ভূ -অভ্যন্তরে শিলায় পীড়নের জন্যে যে শক্তির সঞ্চয় ঘটে, সে শক্তি হঠাৎ মুক্তি পেলে ভূ-পৃষ্ঠ ক্ষণিকের জন্য কেঁপে ওঠে এবং ভূ-ত্বকের কিছু অংশ আন্দোলিত হয়; এইরূপ আকস্মিক ও ক্ষণস্থায়ী কম্পনকে ভূমিকম্প বলে। সাধারণত কম্পন-তরঙ্গ থেকে যেই শক্তির সৃষ্টি হয়, তা ভূমিকম্পের মাধ্যমে প্রকাশ পায়।

ভূমিকম্প কেন হয়? ভূ-অভ্যন্তরে স্থিত গ্যাস যখন ভূ-পৃষ্ঠের ফাটল বা আগ্নেয়গিরির মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে তখন সেই গ্যাসের অবস্থানটি ফাঁকা হয়ে পড়ে আর পৃথিবীর উপরের তলের চাপ ওই ফাঁকা স্থানে দেবে গিয়ে ভারসাম্য বজায় রাখে। তখনই ভূ-পৃষ্ঠে প্রবল কম্পনের অনুভব হয় যা ভূমিকম্প নামে পরিচিত। সাধারণত তিনটি প্রধান কারণে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়ে থাকে—ভূ-পৃষ্ঠের হঠাৎ পরিবর্তন জনিত কারণে, আগ্নেয়গিরি সংঘটিত হওয়ার কারণে ও শিলাচ্যুতি জনিত কারণে।

ভূমিকম্পের স্থায়িত্ব ? ভূমিকম্পের স্থায়িত্ব সাধারণত কয়েক সেকেন্ড হয়ে থাকে। কিন্তু এই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে হয়ে যেতে পারে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ। ভূমিকম্পের মাত্রা অনুযায়ী ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে। ভূমিকম্পের মাত্রা নির্ণয়ের জন্য যে যন্ত্র ব্যবহৃত হয় তার নাম রিখটার স্কেল। রিখটার স্কেলে এককের সীমা ১ থেকে ১০ পর্যন্ত। এই স্কেলে মাত্রা ৫-এর বেশি হওয়া মানেই ভয়াবহ দুর্যোগের আশঙ্কা। ভূমিকম্প এক ডিগ্রি বৃদ্ধি পেলে এর মাত্রা ১০ থেকে ৩২ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা—৫ – ৫.৯৯ মাঝারি, ৬ – ৬.৯৯ তীব্র, ৭ – ৭.৯৯ ভয়াবহ এবং ৮-এর উপর অত্যন্ত ভয়াবহ। ভূমিকম্প কি, ভূমিকম্প কাকে বলে, করণীয় –

ভূমিকম্পের ফলে বিভিন্ন ধরনের ভূতাত্ত্বিক এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে:

  • ভূমিকম্পের ঝাঁকুনি
  • ভূমিধস
  • সুনামি
  • ভূমি উপচে পড়া
  • ভূগর্ভস্থ আগুন
  • বিদ্যুৎ বিভ্রাট
  • যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা
  • ভবন ধ্বংস
  • প্রাণহানি

ভূমিকম্পের তীব্রতাকে রিখটার স্কেলে মাপা হয়। রিখটার স্কেল হলো একটি লোগারিদমিক স্কেল যা ভূমিকম্পের শক্তি পরিমাপ করে। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের শক্তি ০ থেকে ১০ পর্যন্ত হতে পারে। ০ থেকে ২ মাত্রার ভূমিকম্প সাধারণত অনুভূত হয় না, তবে ৩ থেকে ৪ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হতে পারে এবং কিছু ক্ষতি করতে পারে। ৫ থেকে ৬ মাত্রার ভূমিকম্প মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে, এবং ৭ থেকে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প ধ্বংসাত্মক হতে পারে। ৯ থেকে ১০ মাত্রার ভূমিকম্প মহাবিপর্যয়কর হতে পারে।

ভূমিকম্পের ফলাফলগুলি ভূমিকম্পের তীব্রতা, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের অবস্থান এবং ভূমিকম্পের ধরন (অর্থাৎ, ভূমিকম্পটি স্থলভাগে, সমুদ্রে, বা তলদেশে হয়েছিল কিনা) এর উপর নির্ভর করে।

ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া এখনও একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। তবে, বিজ্ঞানীরা ভূমিকম্পের সম্ভাবনা পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। এই পদ্ধতিগুলির মধ্যে রয়েছে ভূকম্পন পরিমাপ, ভূতাত্ত্বিক ডেটা বিশ্লেষণ এবং ভূ-পৃষ্ঠের পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ।

ভূমিকম্পের ঝুঁকি কমাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। এই পদক্ষেপগুলির মধ্যে রয়েছে:

  1. ভূমিকম্প-প্রতিরোধী ভবন নির্মাণ
  2. ভূমিকম্পের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারীদের সচেতনতা বৃদ্ধি
  3. ভূমিকম্পের সময় কী করবেন সে সম্পর্কে প্রস্তুতি নেওয়া

ভূমিকম্প একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ যা মানুষের জীবন এবং সম্পত্তির জন্য মারাত্মক হুমকি হতে পারে। ভূমিকম্পের ঝুঁকি কমাতে এবং ভূমিকম্পের সময় ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সচেতনতা এবং প্রস্তুতি গুরুত্বপূর্ণ। ভূমিকম্প কি, ভূমিকম্প কাকে বলে, করণীয় –

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *