মনের কালিমা মুছে দেওয়ার অনবদ্য উদাহরণ: বৃষ্টি

মনের কালিমা মুছে দেওয়ার অনবদ্য উদাহরণ: বৃষ্টি

মাজেদুল ইসলাম


বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর
নদে এলো বান;

বৃষ্টি কিছু মানুষের জন্য শত প্রত্যাশিত আনন্দের বস্তুর নাম আবার কারো জন্য নিঃসঙ্গতাকে বরণ করে কষ্টকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়ার অনাকাঙ্ক্ষিত বস্তু।

বৃষ্টি বয়স,পেশা ভেদে বিভিন্ন ভাবে ধরা দেয় জনমানুষের কাছে।বৃষ্টিবিহীন খাঁ খাঁ জমির জন্য বৃষ্টি যেন কৃষকের চোখে একমুঠো সোনা, যার আলিংগনে উদ্বেলিত হয় লাখো কৃষক পরিবার।বৃষ্টির জন্য মসজিদে, মন্দিরে চলে দোয়া,পূজা,ব্যাঙের বিয়ে সহ অন্যান্য লোকজ উৎসব।

গ্রামীণ শিশু কিশোরদের জন্য বৃষ্টি আবার প্রাণোচ্ছলতার নাম।বৃষ্টি শুরু হলেই বাবা- মা কে ফাঁকি দিয়ে দলবেঁধে ছুটে বেড়ায় নিকটস্থ দিঘি,পুকুরে। বৃষ্টির দিনে পুকুরে সাঁতার কাটার মজাই আলাদা।বাড়তি আনন্দ যোগ হয় পাশের বাড়ির ফল- ফলাদি চুরি করে খাওয়ার আনন্দে মেতে উঠার মাধ্যমে।

শহুরে বাচ্চারা অবশ্য বৃষ্টিকে উপভোগ করে চার দেয়ালে আবদ্ধ অনলাইন গেমের মাধ্যমে।তবে তারাও বাবা-মাকে কাছে পেয়ে বেশ হাস্যরসাত্মক সময় উপভোগ করে।

দাম্পত্য জীবনে বৃষ্টি আবার সুখের জোয়ার এনে দেয়, জায়া ও পতির মধ্যে।বৃষ্টির দরুন বাহিরে যাওয়া মানা তাই স্ত্রীর হাতের গরম গরম খিচুরি আর ডিম ভাজির স্বাদে এবং মুখরোচক গল্পের মাধ্যমে সময় কাটে তাদের।

উঠতি বয়সের ব্যাচেলর তরুণদের মধ্য আবার দুই শ্রেণি পাওয়া যায়। যারা রিলেশনে জড়িত তারা এ বৃষ্টির দিনে বিছানায় কাথা মুঁড়ি দিয়ে এসএমএস বা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রেমালাপে জড়িয়ে পড়ে অথবা হারিয়ে যায় কোন কল্পনার রাজ্যে।

আর এক শ্রেণী পাওয়া যায় যারা এসব রিলেশনে জড়িত নয় তারা আবার অনেকে কবিতা লিখে নিঃসঙ্গতাকে জাহির করে,অথবা একাকিত্ব অনুভব করতে করতে ঘুমের অতল সাগরে হারিয়ে যায়।ধর্মভীরু মানুষজন আবার স্রষ্টাকে স্বরণ করে বারংবার।

তবে বৃষ্টির অপর পিঠটাও অনেক ভয়াবহ। বিশেষত সমস্যা হয় দিনমজুর শ্রেণির।যাদের গতর খাটিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে হয় প্রতিনিয়ত।মানুষজন বৃষ্টির দরুণ বাহিরে তেমন বের না হওয়ায়, তাদের জীবিকার চাহিদাও মেটে না তেমন।দারিদ্রতা যেন হুমড়ি খেয়ে ধরা দেয় তাদের পরিবারে।

তাছাড়া অতিবৃষ্টি হলে রাস্তাঘাট ও চারপাশ পানিতে টুইটুম্বুর হয়ে যাওয়ায় নানাবিধ সমস্যাও বিরাজ করে।

ভালোমন্দের পরিমাপকাঠি বিচার করলে হয়তো আমরা নানা দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়বো।তবে বৃষ্টি আমাদের মধ্য ফিরিয়ে আনে পরিবারের সবাই গুটিসুঁটি হয়ে গল্প করার প্রাণোচ্ছল পরিবেশ,ঘরোয়া খেলার উন্মাদনা,গ্রামীণ কিশোরদের ডানপিঠে পথচলার অপরুপ দৃশ্য।

বৃষ্টি ধুয়ে নিয়ে যাক মানুষের মধ্য বিরাজমান হাজারো কালিমা,সূচি হোক ধরা,মেতে উঠি সাম্যবাদিতা ও অসাম্প্রদায়িকতার মহতী কর্মকাণ্ডে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *