মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধ্বংসের আওয়াজ শুনি: অনিয়ম যেখানে প্রতিনিয়ত নিয়ম

মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধ্বংসের আওয়াজ শুনি: অনিয়ম যেখানে প্রতিনিয়ত নিয়ম

আবু জাফর আহমেদ মুকুল


স্থানীয় অভিভাবক, সচেতন প্রতিনিধি, প্রশাসন, সাবেক ও বর্তমান ছাত্রদের সাথে কথা বলে বুঝলাম। এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার নিয়ে অনেকেই চিন্তিত। কিন্তু একটি বিষয় লক্ষ্য করলাম শিক্ষার মান তাদের কোন চিন্তার নাই। অথচ এটি বর্তমান সরকারের নির্বাচনি ইশতেহার একটি অঙ্গীকার এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) একটি লক্ষ্য ।

এমনকি সিরাজদিখান উপজেলায় শিক্ষকগণের সাথে কথা বলে জানা গেছে পাসের হার ও মান সম্মত শিক্ষার বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে। তাদের টার্গেট শুধু ছাত্র-ছাত্রীদের ১০০% পাশ করানো। এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে অনেক শিক্ষক ও অভিভাবকবৃন্দ নানা ধরনের অনিয়মে জড়িয়ে যাচ্ছেন। সদ্য প্রকাশিত এসএসসির ফলাফলে জেলার স্কুলের বিপর্যয়ে হতাশ মুন্সীগঞ্জবাসী।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এবার সিরাজদিখানে এসএসসি মোট শিক্ষার্থী ছিল ২৫২০, পাস করেছে-২০১৯জন, ফেল করেছে-৫০১ জন, জিপিএ-৫ চল্লিশ জন এবং পাশের হার ৯০.০৫%। ঘোষিত ফলাফলে ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৮২.৩৪। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৬ হাজার ৪৭ জন।

সিরাজদিখান উপজেলায় মোট ৪টি কেন্দ্র যথাঃ শেখেরনগর, কুচিয়ামোড়া, রাজদীয়া, ইছাপুরা এসএসসি বোর্ড পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। শ্রীনগরের ‍তুলনায় এমনকি ঢাকা বোর্ডে পাসের হারের তুলনায় সিরাজদিখানে এসএসসিতে পাশের হার বেশি হলেও স্থানীয় অভিভাবক, সচেতন প্রতিনিধি, সাবেক ও বর্তমান ছাত্ররা নানা কারনে এই ফলাফলকে প্রশ্নবিন্ধ করেছেন। অনেক অভিভাবক অভিযোগ করেছেন, কেন্দ্র নিয়ন্ত্রক হাই স্কুলগুলো অন্য স্কুলের সাথে যোগসাজশে ভিজিলেন্স টিমকে আড়ালে রেখে স্ব স্ব স্কুলের পাশের হার ৯০ এর উর্ধে রাখার জন্য অনেকে কাজ করেছেন। বাস্তবে ঘটনার কিছুটা সত্যতাও মিলেছে।

শেখেরনগর পরীক্ষার কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের কড়াকড়ির ফলে কতিপয় শিক্ষককে অন্য স্কুলের প্রভাবশালী নেতৃত্বের প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করা হয়েছিল। শেখরনগর কেন্দ্রে বাড়ৈখালি উচ্চ বিদ্যালয়, শিকরামপুর উচ্চ বিদ্যালয়, মদনখালী উচ্চ বিদ্যালয়, চিত্রকোট মডেল স্কুল এন্ড কলেজ , রায় বাহাদুর শ্রীনাথ ইনস্টিটিউশন, রাজানগর সৈয়দপুর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ে ও খাকশুর খারশুর উচচ বিদ্যালয় এর এসএসসি বোর্ড পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৪টি কেন্দ্রের মধ্যে শেখেরনগর পরীক্ষার কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের কড়াকড়ি দায়িত্ব পালন করায় অনিয়ম তেমন হয়নি বলে চলে এবং এ কেন্দ্রের স্কুলগুলোর পাশের হার ৬০%-৬৫%।

অন্যদিকে কুচিয়ামোড়া আদর্শ স্কুল, রাজদীয়া অভয় পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও ইছাপুরা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কেন্দ্রগুলোর পাসের হার ৯৫%-১০০%। সচেতনমহলের বিশ্বাস, শেখেরনগর কেন্দ্রের মতো অন্য কেন্দ্রের স্কুলগুলোতে শিক্ষকগণ ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করলে পাসের হার কখনোই ৭০% এর বেশি হতো না। অনুসন্ধান করে জানা গেছে, গত বছর জেএসসি পরীক্ষার ফলাফলেও কুচিয়ামোড়া আদর্শ স্কুলে অংশগ্রহনকারী সকল স্কুলগুলসমূহ পাসের হার ছিল ৬০%-৬৫%। যার মধ্যে পাসের হার বাড়ৈখালি উচ্চ বিদ্যালয়ে-৭১%, রাজানগর সৈয়দপুর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ে-৫০.৩৪%, রায় বাহাদুর শ্রীনাথ ইনস্টিটিউশন-৬৩%, শেখেরনগর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়-৭৩%, খারশুর উচচ বিদ্যালয়-৬৬%, চিত্রকোট মডেল স্কুল এন্ড কলেজ-৮৪%।

কোমলমতি শিক্ষার্থীরা স্কুল জীবনে এগুলো পর্যবেক্ষণ করে নিশ্চয়ই তারা জীবনে সততার সাথে কাজ করতে পারবে না এটাই স্বাভাবিক । বিনয়ের স্বরে বলছি, কতিপয় শিক্ষক বা অভিভাবক যারা আজকে অনৈতিক সুবিধা দিচ্ছে বা নিচ্ছে তাদেরও কী কোন বিবেক, নৈতিকতা বা মূল্যবোধ আছে বলে আমার কাছে মনে হয় না। আর উপজেলার শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্মকতাগণ অনেক বছর একই উপজেলায় কাজ করছেন তারা সব কিছু জেনেও চুপ এটাও আমার কাছে বোধগম্য নয়। উপজেলায় অধিকাংশ স্কুলগুলোতে টেস্ট পরীক্ষায় পাস না করলেও গর্ভনিং বডি টাকার বিনিময়ে এসএসসি পরীক্ষার সুযোগ দিচ্ছেন এবং স্কুলগুলোর সভাপতি ক্ষমতার দাপটে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বছরের পর বছর এ নিয়ে কারো কোন মাথা ব্যথা নেই।

এ বিষয়ে গত জানুয়ারী ৮, ২০১৭ইং তৃণমূল পর্যায়ে শিক্ষায় অনিয়ম ও দুর্নীতি খুঁজতে এবার জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)সূত্র বলছে, তৃণমূল পর্যায়ে শিক্ষায় অনিয়ম ও দুর্নীতি খুঁজতে কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্বাচনী পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণদের বোর্ড পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দেয়। বার্ষিক পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণদেরও পরের শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ দেয়। এ ধরনের কাজ করার মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের ফি আদায় করে।

দুদক মনে করছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর এ ধরনের প্রবণতা দুর্নীতির প্রসার ঘটাচ্ছে এবং শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবন দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। তবে মন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দুনীর্তির এ বিষয়ে কোন রিপোর্ট জমা দিয়েছেন কিনা তা জানা যায়নি।

তবে আমি বিনয়ের সাথে বলতে চাই সিরাজদিখান হাই স্কুলের সমস্যা ও সমাধানগুলো ইতিবাচক হিসেবে দেখবেন এবং সমাধানগুলো বাস্তবায়ন করে হাই স্কুলগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টের ভিত্তিতে আমি সত্যতা যাচাইপূর্বক স্থানীয় অভিভাবক, সচেতন প্রতিনিধি, প্রশাসন, সাবেক ও বর্তমান ছাত্রদের সাথে কথা বলে সিরাজদিখান উপজেলার এবারের এসএসসি পরীক্ষায় কম পাশ করা কতিপয় হাই স্কুলের চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করলাম।

রাজানগর সৈয়দপুর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ঃ এসএসসি মোট শিক্ষার্থী ছিল ১৪৫, পাস করেছে-৭৩ জন, ফেল করেছে-৭২ জন এবং পাশের হার ৫০.৩৪%। এ স্কুলে তুলনামূলকভাবে সহজ মানবিক বিভাগে ৪১ জন ফেল করেছে যা হ্নদয় বিদারক। এ স্কুলটির খন্ডকালীন শিক্ষক রয়েছে সর্বমোট ১৫ জন। অভিযোগ রয়েছে, করোনাকালীন খন্ডকালীন শিক্ষকদের বেতন দিচ্ছেন না স্কুল কর্তৃপক্ষ।

রায় বাহাদুর শ্রীনাথ ইনস্টিটিউশনঃ এসএসসি মোট শিক্ষার্থী ছিল ২০৭, পাস করেছে-১৪০ জন, ফেল করেছে-৬৭ জন এবং পাশের হার ৬৩%। তবে মানবিক বিভাগে ৩৮ জন যা অনেকক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য নয়। এ স্কুলটিতে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি একজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। তবে প্রধান শিক্ষক স্বীকার করেছেন প্রত্যাশা অনুযায়ী তারা ফলাফলে ব্যর্থ হয়েছেন।

তিনি সামাজিক সমস্যার জন্য অভিভাবকদের সাহায্য কম পান বলে উল্লেখ করেন। তবে তিনি সামাজিক সমস্যা ও মান সম্মত শিক্ষার জন্য জন্য কোন পরামর্শক কমিটি গঠন করেননি। শতবর্ষী স্কুলটির ঐতিহ্যি হারিয়ে যাচ্ছে বলে অনেকেই দুঃখ প্রকাশ করেন।

শেখেরনগর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ঃ এসএসসি মোট শিক্ষার্থী ছিল ৬০, পাস করেছে-৪৩ জন, ফেল করেছে-১৭ জন এবং পাশের হার ৭৩%। তবে এ স্কুলটিতে মানবিকে ২৮ জন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১৩ জন ফেল করেছে। তবে, প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের জন্য প্রধান শিক্ষিকার কোন কর্ম পরিকল্পনা লক্ষ্য করা যায়নি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্কুলটিতে ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যা বৃদ্ধি না হওয়ার পেছনে শিক্ষকদের নেতৃত্ব দায়ী।

বাড়ৈখালি উচ্চ বিদ্যালয়ঃ এই স্কুলটি শ্রীনগর উপজেলার হলেও সিরাজদিখান কেন্দ্রে পরীক্ষা হয়। এ স্কুলটির পাসের হার ৭১%। তবে এ স্কুলটিতে মানবিকে ৬৯ জন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২৫ জন ফেল করেছে। ম্যানেজিং কমিটি নেতৃবৃন্দ শিক্ষার বিষয়ে আগ্রহী না হলেও স্কুলটিকে প্রভাব বিস্তার করে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেন বলে সচেতন নাগরিক থেকে জানা গেছে। টেস্ট পরীক্ষায় অনেক শিক্ষার্থী ফেল করলেও এসএসসি পরীক্ষার দেওয়ার সুযোগ করে দেন যার ফলে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্ন হচ্ছে।

খারশুর উচ্চ বিদ্যালয়ঃ এসএসসি মোট শিক্ষার্থী ছিল ১৫১, পাস করেছে-৯৪ জন, ফেল করেছে-৫৭ জন এবং পাশের হার ৬৬%। তবে, তুলনামূলকভাবে এ স্কুলে ফেলের সংখ্যা বেশি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টেস্টে অনেক ফেল করা ছাত্র স্কুল কর্তৃপক্ষ এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে দেয়। যারা আবারো টেস্টে ফেলকৃত ছাত্র পুনরায় এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করে। খোজঁ নিয়ে জানা গেছে, স্কুলের সভাপতি একজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। তবে স্কুলটিকে ক্লাসরুমের সংকট রয়েছে বলে জানা যায়। প্রাক্তন ছাত্রবৃন্দ অভিযোগ করেন কালের গর্ভে তাদের স্কুলের মান ও হারিয়ে যাচ্ছে।

চিত্রকোর্ট মডেল স্কুল এন্ড কলেজঃ এসএসসি মোট শিক্ষার্থী ছিল ৬৩, পাস করেছে-৫১ জন, ফেল করেছে-১১ জন এবং পাশের হার ৮৪%। গত বছর এইচএসসি পরীক্ষায় এই কলেজের পাসের হার-৯৭% ছিল যা মুন্সিগঞ্জের মধ্যে ২য় অবস্থানে ছিল বলে জানা যায়। এসএসসি স্কুলটি ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলে হওয়ার পরও খুব আশা ব্যঞ্জক ফলাফল করছে। খোজঁ নিয়ে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি বর্তমান ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী। তিনি সবসময় স্কুল ও কলেজটির প্রতি খুবই নিবেদিত প্রান। তাদের পরিবার আর্থিকভাবে স্কুলটিকে সাহায্য করেন। ভবিষ্যতে এ স্কুলটি আরও ভাল করবে বলে সচেতন নাগরিকগন আশা করেন।
সিরাজদিখান উপজেলায় হাই স্কুলসমূহে সমস্যার সমাধানগুলো:

স্থানীয় অভিভাবক, সচেতন প্রতিনিধি, প্রশাসন, সাবেক ও বর্তমান ছাত্রদের সাথে কথা বলে সিরাজদিখান উপজেলার হাই স্কুলসমূহে নানা সমস্যা পরিলক্ষিত হয়েছে। তাই উপরোক্ত বিষয়গুলো সকলের প্রচেষ্টায় নিম্নোক্তভাবে সমাধান করা যেতে পারে-

১) স্কুলে ম্যানেজিং কমিটি সংস্কার করে সৎ ও শিক্ষিত এবং নিবেদিত প্রানের লোককে হাই স্কুলের সভাপতি করা।

২) শিক্ষাক্ষেত্রে অনিয়ম রোধ করার জন্য আগামি বছর এসএসসি পরীক্ষায় ভেন্যু স্কুলের কেন্দ্রসমূহ পরিবর্তন করে অন্য কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ব্যবস্থা করা এবং ভিজিলেন্স টিমকে শক্তিশালী করা। কোন স্কুল শিক্ষক অসুদপায় কাজে সাহায্য করলে তাকে বহিস্কারের ব্যবস্থা করা।

৩) এসএসসি পরীক্ষায় পরীক্ষা হলে সিসিটিভি লাগিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত উর্ধতন সকলস্তরের শিক্ষা কর্মকর্তাগণ তদারকি করতে পারেন এবং ডিজিটাল তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে স্কুলের একইভাবে উপরোক্ত কর্মকর্তাগণ সার্বিক কার্যক্রম নিয়মিত তদারকি নিশ্চিত করা।

৪) শিক্ষক পর্যাপ্ত প্রশিক্ষন, ক্লাস ও শিক্ষার মান মনিটরিং এবং স্কুলের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য ডিজিটাল হাজিরা ও শিক্ষা অফিসারদের সাথে অনলাইনে মনিটরিং ব্যবস্থা ও সুশাসন নিশ্চিতকরন।

৫) স্থানীয় রাজনৈতিক বিবেচনায় অযোগ্য খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ করা। খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগে নিবন্ধনকারীকে নিয়োগ দেওয়া। নিয়োগ বোর্ডে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা শিক্ষা অফিসারকে অর্ন্তভুক্ত করা।

৬) স্কুল ও কলেজের পরিচালনার জন্য অভ্যন্তরে আলাদা ম্যানেজমেন্ট ও আলাদা প্রশাসন দরকার।

৭) সরকারের ইশতেহারে শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্যে স্থানীয় স্বনামধন্য শিক্ষাবিদ বা অবসরপ্রাপ্ত চাকুরিজীবি সমন্বয়ে প্রত্যেকটি স্কুলে আলাদা উপ-কমিটি, প্রতিষ্ঠানের আর্থিক স্বচ্ছতা নির্ধারনের জন্য স্থানীয় সৎ ও শিক্ষিত লোক দ্বারা উপ-কমিটি এবং সামাজিক সমস্যার সমাধানের জন্য সামাজিক সচেতনা কমিটি করা যেতে পারে।

৮) ভস্কুলের আয়, পুকুরে মাছ চাষ ও আম বাগানের আয়ের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে টেন্ডার আহবান করা এবং টেন্ডার না হওয়া পর্যন্ত প্রত্যেকটি কাগজ ও আয়ের রেকর্ড অফিসে সংরক্ষণ করা।

৯) কতিপয় শিক্ষক ক্লাসে পাঠদানের চাইতে টিউশন বা কোচিংয়ের জন্য বেশী মনোযোগী থাকেন এবং গাইড বইয়ের প্রতি গুরুত্ব বেশি দেয় বলে দৃষ্টি গোচর হয়েছে। এ প্রবনতা দূর করা প্রয়োজন।

১০) ভদুর্বল ছাত্রদের জন্য স্কুলে বিশেষ ক্লাস চালু করা প্রয়োজন এবং বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ করে ক্লাসে পাঠদানের মান নিশ্চিত করা।

১১) যে শিক্ষক ক্লাস নিচ্ছেন, সে ওই ক্লাসের শিক্ষককে খাতা দেখার সুযোগ না দেওয়া, প্রয়োজনে স্কুলে শিক্ষার মানের জন্য বহিঃস্থ শিক্ষক কর্তৃক খাতা মূল্যায়ন এবং পরীক্ষায় মডারেশন করে প্রতিষ্ঠান প্রধানের কাছে প্রশ্নপত্র সংরক্ষন করা। সর্বোপরি, প্রত্যেক ক্লাসের ফাইনাল পরীক্ষায় খাতায় শিক্ষার্থীদের নামের পরিবর্তে কোডিং ব্যবহার করা।

১২) বিদ্যালয় এবং অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগের সমন্বয়হীনতা পরীক্ষার ফলাফল খারাপ করার অন্যতম কারণ রয়েছে। সুতরাং মোবাইলে একাডেমিক বিষয়ে মেসেজ সিস্টেম চালু করা প্রয়োজন। আর কোন শিক্ষার্থীদের অশিক্ষিত বা অসচেতন হলে তার পরিবারের বা আত্নীয়দের মধ্যে যে শিক্ষিত অভিভাবক হিসেবে তার মোবাইল নাম্বার সংযুক্ত করা।

১৩) কোন শিক্ষার্থী ক্লাসে অনুপস্থিত হলে অভিভাবককে সাথে সাথে অবগত করা এবং ক্লাস থেকে ড্রপ আউট হলে সরাসরি তার বাসায় গিয়ে শিক্ষকদের কাউন্সিলিং করানো।

১৪) বিজ্ঞানে ও আইটি বিষয়ে দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া অথবা, যারা আছেন তাদেরকে স্কুল কর্তৃপক্ষ স্পেশাল ট্রেনিং দিয়ে শুধু দক্ষ করে তোলা। প্রয়োজনে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা নেওয়া যায়।

১৫) উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজারকে নিয়মিত একাডেমি সুপারভাইজ করার অনুরোধ করা এবং তার নিকট হতে শিক্ষকদের সম্পর্কে ফিডব্যাক নেওয়া।

১৬) প্রাক্তন শিক্ষার্থী যারা বিজ্ঞান নিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে এবং সমাজের সুশীল সমাজ বা অবসরপ্রাপ্ত চাকুরিজীবি বা স্বনামধন্য শিক্ষাবিদ তাদের থেকে দক্ষ ও যোগ্যদের নিয়ে তাদের সুবিধামত সময়ে স্বেচ্ছায় দিনব্যাপী ক্লাসের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

১৭) বোর্ড পরীক্ষার অস্বাভাবিক পরিবেশ। যেখানে প্রতিপক্ষ মনে করা হয় বিপরীত পক্ষের কোমলপ্রাণ শিক্ষার্থীদের। এতে শিক্ষার্থীরা একটা ভীতিকর পরিস্থিতিতে পরীক্ষা দেয় যার ফলে তারা তাদের স্বাভাবিক পারদর্শিতা প্রদর্শন করতে পারে না।

১৮) টেস্টে ফেল করা শিক্ষার্থীদের বোর্ড পরীক্ষা দিতে অনুমতি না দেওয়া এবং অন্য স্কুলের ফেলকৃত শিক্ষার্থীদের সুযোগ না দেওয়া।

১৯) শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত পাঠ্যক্রমের বাইরে নিতে হবে, তাদের জ্ঞানমুখী করতে হবে যেমন- ক্রীড়া ও বিতর্ক প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন, জাতীয় দিবস উদযাপন, বইপড়া প্রতিযোগিতা, মা দিবস, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং বিদ্যালয়ে খুদে লাইব্রেরি বা বুক কর্নার স্থাপন করতে হবে। এতে ছাত্রদের মানবিক বিকাশ বাড়ে। মাস শেষে বিদ্যালয়ের শ্রেষ্ঠ পাঠককে পুরস্কার দিতে হবে।

কোনো রাষ্ট্রের পুরো শিক্ষাব্যবস্থা যদি একটি কাঠামো হয়, তবে স্কুলের শিক্ষা তার ভিত্তি। ভিত্তি দুর্বল হলে তার ফল পাওয়া দুষ্কর। তাকে ক্লাসে পাঠদানের পাশাপাশি এই সময়ে ন্যায়নীতি, সততা, আদর্শ, সমাজনীতি, চরিত্র গঠন, দেশপ্রেম সম্পর্কে জ্ঞান প্রয়োজন। শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকারের অনেক উদ্যোগ রয়েছে। এখন সকল পক্ষের সচেতনতা দরকার।

শিক্ষার্থীদের আগামী দিনের জন্য সৎ, দক্ষ, দেশপ্রেমিক ও উদার মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন অসাম্প্রদায়িক সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে শিক্ষকদের দায়িত্ব নিতে হবে। এখন স্থানীয় প্রশাসন ও সচেতন এলাকাবাসীর সহযোগিতায় সিরাজদিখান উপজেলায় শিক্ষার নৈতিক পরিবেশ ফিরে পাবে।


লেখকঃ শিক্ষাবিদ, গবেষক, বিশ্লেষক ও ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞ ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *