মেয়েরা আসলে কী দেখে প্রেমে পড়ে?

মেয়েরা আসলে কী দেখে প্রেমে পড়ে?

ক্যাম্পাস টুডে ডেস্কঃ ফেসবুকে এক ছেলে সুন্দর সুন্দর কবিতা লেখে, ব্যস প্রেমে পড়ে গেলো। দেখতে লম্বা চওড়া, ফর্সা, ফ্রেঞ্চ কাট দাঁড়ি, ব্যস প্রেমে পড়ে গেলো। নানান রকম স্ট্যাটাস দিয়ে ভালো ভালো কথা বলে, দেশপ্রেম দেখালো, ব্যস মেয়েরা প্রেমে পড়ে গেলো। এক ছেলে দারুণ ফ্লার্টিং করতে পারে তা দেখেও ৩,৪ জন মেয়ে তার প্রেমে পড়ে গেলো। মেয়েদের প্রেমে পড়া এতো সহজ কেন?

কিছুদিন পর পর আমরা শুনি ওমুক ছেলে খারাপ, তমুক ছেলে প্লে বয়। অনেকে বলে ছেলেরা তো এমন হবেই। সব দোষ মেয়েদের। কিছুদিন আগেই এক মেয়ে আমাকে প্রতিদিন কয়েকটা ইনবক্স মেসেজ দিয়ে কান্নাকাটি করতো। তার প্রেমিক এখন অন্য মেয়ের সাথে ঘুরে। জিজ্ঞেস করলাম- তোমাদের পরিচয় কীভাবে? মেয়ের উত্তর- ফেসবুকে এড দিয়েছিলো ও। অনেক সুন্দর সুন্দর কোটেশন শেয়ার করতো। আমার প্রোফাইল পিকচারে লাইক দিতো। ইনবক্সে কবিতা দিতো। এরপর প্রপোজ করলো। সেই থেকে আমাদের…।

আরেক মেয়ে রীতিমত যুদ্ধ করে এক ছেলের সাথে প্রেম করেছে, কারণ সেই ছেলে ফেসবুক স্ট্যাটাস অনেক ইনিস্পিয়ারিং ছিলো। চেনা আরেক মেয়ে শুধুই চেহারা দেখে লাট্টু হয়েছিলো এক ছেলের জন্য। এরপর ছেলের আসল চরিত্র জেনে ফিরে চলে এসেছে আগের জীবনে।

আরেক ছেলে তার প্রেমিকা কে নাকি ভালোবেসে গালি দিয়ে ডাকতো। একেক রকমের গালি দিয়ে ডাকা নাকি ছেলেটির ভালোবাসার ধরণ। প্রেমিকাও মেনে নিতো ভালোবাসা মনে করে। এখন ব্রেক আপের পর মেয়েটা ভাবে কীভাবে এতো অসুস্থ এক সম্পর্কে এতো বছর ধরে ও ছিলো?

আরেক মেয়ে জানে যার সাথে তার সম্পর্ক, ছেলেটি স্কুল জীবন থেকে অনেক মেয়ের সাথে প্রেমের অভিনয় করেছে। শারীরিক সম্পর্ক করে ছেড়ে দিয়েছে। তাও মেয়েটি ছেলেটির সাথে আছে, কারণ হলো ছেলেটি এখন বলছে সে নাকি ভালো হয়ে গিয়েছে। আগে তার যৌন জীবনের প্রতি নিয়ন্ত্রণ ছিলো না। এখন সে ম্যাচিউর। তার নিয়ন্ত্রণ এসেছে। মেয়েটিও বিশ্বাস করেছে।

সবগুলো ঘটনা জেনে ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে দেখুন তো। মূলত কাকে দোষ দিবেন? ছেলেগুলোকে? নাকি মেয়েগুলোকে? আমি বলবো ছেলেগুলোর দোষ থাকলে বেশি দায়ভার মেয়েগুলোর। যদি নূন্যতম কমনসেন্স ব্যবহার না করে কেউ জীবনে সম্পর্ক করে তাহলে তাকে সেটার দোষটুকুও নিতে হবে। মেয়েরা ভাবে তাদের আবেগ আর প্রেমের শক্তি সব ছেলেদের ভালো করে ফেলতে পারে। ছেলেটি আগে মন্দ ছিলো এখন ভালো হয়ে গিয়েছে। আরে, কি লজিক এটা? ছেলেরা কি রোবট নাকি? যে সুইচ প্রেস করলেই মন্দ থেকে ভালো তে চিরস্থায়ীভাবে কনভার্ট হয়ে যাবে? মেয়েরা এদিকে আবেগের থইথই সমুদ্রে ডুবে মরে যায়। নীতি, বিশ্বাস, ব্যক্তিত্ব, সম্মান কিছুই তখন তাদের গায়ে লাগে না।

কিছুদিন পর যখন ছেলেটি অন্য কারও দিকে ঝুঁকে যায় তখন মেয়েগুলো হা হুতাশ শুরু করে। অনেকে হেরে যায় আর অনেকে উপলব্ধি করে যে আগে সে কতটা ভুল ছিলো। কিছুদিন পর পর বিভিন্ন সেলিব্রিটির যে সব ঘটনা আমরা জানি সেগুলো এসব কারণেই তো বের হয়। আমার প্রশ্ন হলো, তোমরা যখন জানতে ছেলেটির ফ্লার্ট করে, বা অন্য মেয়েদের কে ঠকায় তোমরা তখনই কেন বলো না?

নিজেরাও কেন সরে আসো না? কমন সেন্স তখন কোথায় থাকে? কারও ফেম আছে বলেই কেন ভাবো সে ভালো? স্ট্যাটাস দেখে লাইক দাও, ফলো করো ঠিক আছে। ভালো লাগে ঠিক আছে, সেই স্ট্যাটাসদাতাকে নিজের ব্যক্তিগত জীবনের রাজা বানিয়ে ফেলো কেন? তোমাদের ভাবনা, শিক্ষা, ব্যক্তিত্ব কেন বার বার, অজস্রবার আবেগের কাছে, মুগ্ধতার কাছে এসে হেরে যায়? বলতে পারো?

আমি তো দেখি ভন্দ্র, নম্র, শান্ত থাকা অনেক ছেলে দিনের পর দিন একা থেকে যাচ্ছে। অনেক ছেলে ভার্সিটি লাইফ শেষ করে চাকরিতে চলে এসেছে কিন্তু জীবনে কোন প্রেমিকা পায় নি। কেন পায়নি? মেয়েরা তো মুগ্ধ হয় সেই এক্সট্রোভার্ট, ড্রামাটিক, চার্মিং ছেলে দেখে। প্রিন্স চার্মিংরা বাস্তব জীবনে থাকে না। তারা কেবল রুপকথাতেই থাকে। বাস্তব জীবনের প্রিন্সরা অনেক চার্মিং হয় না, তারা হয় সাদামাটা, সৎ, ভদ্র। মেয়ে ভুলানোর মন্ত্র তাদের জানা নেই।

প্রয়োজনে তাদের দিকে তাকাও, কিংবা প্রয়োজনে একা থাকো। কেউ জীবনে আসার হলে সে আসবেই। কিন্তু চোখে রঙিন চশমা পরে কাউকে জীবনে এনো না। এটা তোমার জীবন, কোন সিনেমা না । এই জীবনে এমন কিছু করো না যাতে আজ থেকে ১০ বছর পর পেছনে তাকালে মনে হয়- কেন জীবনে এতো বড় ভুল করেছিলাম?


লেখাঃ একুয়া রেজিয়া।


সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *