যদি আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হতাম

যদি আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হতাম

কামরুল হাসান মামুন


যদি আমি ভিসি হতাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ছাত্রদের বিশ্ববিদ্যালয় বানাতাম। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে কেবল ছাত্রদের আবাসিক ব্যবস্থা থাকবে এবং থাকা উচিত। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তথা বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠেছে শিক্ষক কর্মচারীর আবাসিক এলাকা।

যেই দেশের ছাত্রছাত্রীরা অপ্রতুল আবাসিক সুবিধার কারণে অমানবিকভাবে ছাত্রাবাসে থাকে সেখানে শিক্ষক কর্মকর্তাদের জন্য বিলাসী আবাসিক ভবন বানায়? ছাত্রছাত্রীরা হলের গণরুমে, হলের ছাদে, বারান্দায় অনিরাপদ অবস্থায় রাত্রিযাপন করে জেনেও আমরা শিক্ষক হয়ে ওই একই ক্যাম্পাসে বিলাসী ভবনে শীতনিদ্রায় যাই?

যদি আমি ভিসি হতাম শিক্ষক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের জন্য ইতিমধ্যে নির্মিত সেইসব আবাসিক ভবন ছাত্রদের জন্য ছেড়ে দিতে ব্যবস্থা নিতাম। এতে করে ছাত্রছাত্রীদের আবাসিক সুবিধা অনেক বেড়ে যেত এবং অনেক ছাত্রের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দ্বার খুলে যাওয়ার সম্ভবনা তৈরী হতো। বর্তমান করোনা উত্তর পরিস্থিতে এইটা করা এখন আরো জরুরি হয়ে পরেছে।

যদি আমি ভিসি হতাম প্রথম বর্ষের ছাত্রছাত্রীদের আবাসিক সুবিধা নিশ্চিত করতাম। কারণ প্রথম বর্ষটাই ছাত্রছাত্রীদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময় ছিটকে পরে গেলে আর উঠে দাঁড়াতে পারা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার হয়ে যায়। সেই জায়গায় আমাদের প্রথমবর্ষের ছাত্রছাত্রীরা যেই পরিমান নির্যাতনের শিকার হয় তা অকল্পনীয়। অথচ এতসব জেনেও আমরা শিক্ষক, প্রশাসন এবং সরকার মুখে কুলুপ এঁটে কি দারুন সুখে আছে।

যদি আমি ভিসি হতাম তাহলে ছাত্রছাত্রীদের জন্য প্রতিটি ক্যাম্পাসে উন্নতমানের ক্যাফেটেরিয়া নির্মাণ করতাম যেখানে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীরা খাওয়া-দাওয়া করতে পারে। নিজেরা লাইন ধরে ট্রেতে করে খাবার এনে আবার খাবার শেষে ট্রে নির্দিষ্ট স্থানে রেখে চলে যাবে। সেই ক্যাফেটেরিয়াতে ছাত্র এবং শিক্ষকদের জন্য কোন আলাদা নির্দিষ্ট স্থান থাকবে না। ছাত্রশিক্ষক একত্রে একই স্থানে বসে খাবে যাতে ছাত্র-শিক্ষকদের মাঝে সুসম্পর্ক গড়ে উঠে।

যদি আমি ভিসি হতাম উন্নতমানের জিমনেসিয়ামের ব্যবস্থা করতাম কারণ উন্নত মনের জন্য অবশ্যই উন্নত শরীরের প্রয়োজন। এছাড়া ছাত্রছাত্রীরা সারা বছরজুড়ে যেন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে থাকতে পারে তার সুযোগ বৃদ্ধি করতাম।

যদি আমি ভিসি হতাম লাইব্রেরিকে আরো উন্নতমানের করতাম। বিশেষ করে লাইব্রেরিকে centrally শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করতাম যাতে ছাত্রছাত্রীরা আরামে পড়াশুনা করতে পারে এবং এতে বইগুলো ভালোভাবে সংরক্ষিত হতো।

যদি আমি ভিসি হতাম তাহলে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পরীক্ষকের বর্তমান যেই পদ্ধতি আছে তা বন্ধ করে দিতাম। এতে পরীক্ষার প্রকাশে যে কাল ক্ষেপন হয় সেটা বন্ধ হতো। মনে রাখতে হবে এই ব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে একটি মাস সময়ও বাঁচাতে পারি সেটাও অনেক। এই বয়সের প্রতিটা দিন প্রতিটা ক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেই শিক্ষক যেই কোর্স পড়াবে তিনিই প্রশ্ন করবেন এবং কেবল তিনিই উত্তরপত্র মূল্যায়ন করবেন। বর্তমান করোনা উত্তর পরিস্থিতে এইটা করা এখন আরো জরুরি হয়ে পড়েছে।

যদি আমি ভিসি হতাম ভিসির ক্ষমতা কমিয়ে দিতাম। বিশেষ করে শিক্ষক নিয়োগ ও প্রমোশনের প্রতিটি বোর্ডে ভিসি-প্রোভিসির থাকার কোনই অর্থ হয়না। শিক্ষক নিয়োগ ও প্রোমোশনের বিষয়টা সংশ্লিষ্ট বিভাগ এবং সংশ্লিষ্ট অনুষদের কাজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কাজে ভিসিদের সম্পৃক্ত থাকার কারণে ভিসিরা সার্বিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে কিভাবে নেতৃত্ব দিয়ে উন্নত করা যায় সেইসব নিয়ে ভাববার সময় পায় না।

যদি আমি ভিসি হতাম তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট বরাদ্দ ন্যূনতম ৩ গুন করার দাবি জানতাম।

By the way, আমার প্রশাসনে যাওয়ার ইচ্ছে বা প্রোবাবিলিটি ০.০০০০০০০০০০০০১ এর চেয়েও নিচে। যতদিন বেঁচে থাকব একজন শিক্ষক ও গবেষক হিসাবেই বেঁচে থাকতে চাই। তবে উপরের কথাগুলো বললাম কেবল একজন পরামর্শক হিসাবে। কেউ যদি কোনভাবে আমার লেখাটি পড়ে একটু হলেও উৎসাহিত হয়ে এর কিছু বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেন তাহলেই এই লেখার স্বার্থকতা। কিন্তু আমার অন্যসব লেখার মত এই লেখাটিও অকারণে সময় নষ্টের অংশ হবে।

কামরুল হাসান মামুনের টাইম লাইন থেকে নেওয়া

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *