যেসব খাবার আপনার রোগ প্রতিরোধ কমিয়ে দেবে

যেসব খাবার আপনার রোগ প্রতিরোধ কমিয়ে দেবে

মোঃ বিল্লাল হোসেন


করোনাকালীন সময়ে একটি বিষয় একদম পানির মত পরিষ্কার হয়ে গেছে যে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে হলে ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। সেজন্য সেই শুরু থেকে এখন অব্দি আমরা শুধু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায় সম্পর্কেই আলোচনা করছি বা জানার চেষ্টা করছি।

কিন্তু এই জানা ও মানার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে যদি আমরা মনের অজান্তেই এমন খাবার খাই যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেবে। সুতরাং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য যেসব খাবার খাওয়া জরুরী সেগুলো সম্বন্ধে যেমন জানা উচিত তেমনি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি কমিয়ে দেয় এমন খাবার সম্পর্কেও জানা জরুরী। এবার তাহলে জেনে নেয়া যাক কোন খাবার গুলো আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

ফাস্ট ফুড: বর্তমান যুগে খুব কম মানুষই আছে যারা ফাস্ট ফুড খান না। কিন্তু এই ফাস্ট ফুড যে আমাদের জন্য হুমকি স্বরুপ সেটা কি একবার ও ভেবে দেখেছি আমরা? ফাস্ট ফুডে প্রচুর পরিমানে চিনি ও লবন থাকে এবং খুব কম আঁশ থাকে। ফলে এই খাবার গুলোতে প্রচুর পরিমানে ক্যালরি থাকে। যা আমাদেরকে মুটিয়ে যাওয়ার দিকে ঠেলে দেয়। আমরা জানি ওবেসিটি বা স্থুলতা হলো সকল রোগের মা।

সুতরাং ফাস্ট ফুড খাওয়ার ফলে আপনি যত বেশি মুটিয়ে যাবেন তত বেশি রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ফাস্ট ফুড খাওয়ার ফলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য যে প্রতিবর্ত প্রক্রিয়া সেটির ধরন পাল্টে যায় এবং রোগ প্রতিরোধ কমে যায়।

টেস্টিং সল্ট বা মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট: (এমএসজি) সমৃদ্ধ খাবার
বর্তমান তৈরীকৃত (রেডি টু ইট) ও প্রক্রিয়াজাত খাবারের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে বহুগুণ। প্রায় প্রত্যেক পরিবারেই কোন না কোন ধরনের রেডি টু ইট খাবার খাওয়া হচ্ছে নিয়মিতই। এই প্রক্রিয়াজাত খাবার গুলোতে হরহামেশাই ব্যবহৃত হচ্ছে টেস্টিং সল্ট।

গবেষণায় দেখা গেছে, টেস্টিং সল্ট থাইমাস ও স্প্লিন এর ক্রিয়াকলাপ কমিয়ে দেয় ফলে টি-সেল ও বি-সেল এর উৎপাদন কমে যায়। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়। এছাড়া এই টেস্টিং সল্ট ইন্টারলিউকিন এর উৎপাদন ও কমিয়ে দেয় এবং রোগাক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।

ক্যাফেইন: আমরা প্রায় প্রতিদিনই চা খাই এবং এটাও সবাই জানি যে চাথতে ক্যাফেইন পাওয়া যায়। গবেষণায় দেখা গেছে অতিরিক্তি ক্যাফেইন পান করলে দেহে টি-সেল ও ইন্টারলিউকিন এর উৎপাদন কমে যায়। অথার্ৎ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।

অ্যালকোহল জাতীয় পানীয়
অ্যালকোহল সমৃদ্ধ পানীয় পানে ম্যাক্রোফেজ, ইমিউনোগ্লোবিউলিন ও সাইটোকাইন এর কার্যক্ষমতা কমে যায়। এই উপাদানই দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু যখন এগুলোর কার্যক্ষমতা কমে যাবে তখন খুব সহজেই দেহ ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগে আক্রান্ত হবে।

অতিরিক্ত কীটনাশক সমৃদ্ধ ফলমূল ও শাকসবজি :হামেশাই আমাদের দেশের কৃষকরা না জেনে ফলমূল ও শাকসবজিতে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করে থাকেন। ফলে ঔসব ফলমূল ও শাকসবজিতে কীটনাশক থেকেই যায়। এবং আমরা এগুলো খাওয়ার পর আমাদের অন্ত্রে বসবাসকারী ভালো ব্যাকটেরিয়া বা প্রোবায়োটিকস গুলোকে মেরে ফেলে ফলে আন্ত্রিক গোলযোগ শুরু হয়। তাই আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সহজেই দুর্বল হয়ে পড়ে।

চিনিসমৃদ্ধ জলখাবার:আমাদের প্রতিদিনকার খাদ্য তালিকায় থাকা বেশিরভাগ জলখাবারই চিনিসমৃদ্ধ। চিনি হচ্ছে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের জন্য সবচেয়ে উপাদেয় খাদ্য। তাই আমরা যত বেশি চিনিসমৃদ্ধ খাবার খাবো ততবেশি ক্ষতিকর ভাইরাস, ব্যাকিেটিরয়া আমাদের দেহে জন্ম নেবে। এবং আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেবে। সুতরাং আমাদের উচিত এসব খাবার পরিহার করা এবং পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া।

লেখক
মো: বিল্লাল হোসেন
শিক্ষার্থী ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য বিভাগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ।
ও সদস্য, বাংলাদেশ তরুন কলাম লেখক ফোরাম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *